সরওয়ার আলম শাহীন,উখিয়া নিউজ ডটকম::
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় সর্বত্র ইয়াবার ভয়াবহ আগ্রাসন চলছে।ইয়াবা পাচার,সেবনের ক্ষেত্রে হালে উখিয়া উপজেলার গ্রামে গ্রামে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।দিন দিন ইয়াবা বানিজ্য ছড়িয়ে পড়ায় ছাত্র,কিশোর,যুবক থেকে শুরু করে ঘরের গৃহীনিদের মাঝেও।সরকারি হাট বাজারের খাস জমি,বন বিভাগের রিজার্ভ ভূমি,পাহাড়,টিলা,জবর দখল করে ভূমির রূপ পরিবর্তন করে নব্য ইয়াবা গড়ফাদারদের নতুন নতুন পাকা ভবন উঠলেও সরকারের সংশ্লিষ্টদের রহস্যজনক ভুমিকার কারনে ইয়াবা পাচার,সেবনকারীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।এদের মধ্যে উখিয়া উপজেলায় ৩ জন ইয়াবা গড়ফাদারের নাম ব্যাপকভাবে আলেচিত হচ্ছে। এরা হলেন,খোকা,মাহমুদুল হক ও বাবুল মিয়া।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে,উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা গেছে,মরননেশা ইয়াবা ট্যাবলেট পাচারকারীদের জীবন যাত্রা পাল্টানোর চিত্র।কয়েক বছর আগেও মাহমুদুল করিম খোকা নামের যুবকটি অন্যের মাইক্রোবাসে হেলপারি করে টানাটানির সংসারে নিনানিপাত করতো।কিন্ত গত ১/২ বছরের ব্যবধানে বদলে গেছে তার জীননযাত্রা।ইয়াবা পাচার করে সে বর্তমানে একাধিক প্রাইভেট কার ডাম্পার ট্রাক,সিএনজি অটো রিক্সা, মোটর সাইকেলের মালিক।গড়ে তুলেছে নামে বেনামে একাধিক সম্পদ।উখিয়া রেঞ্জের উখিয়া সদর বনবিটের রিজার্ভ বনভূমির টিলা কেটে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে গড়ে তুলেছে আধুনিক পাকা ভবন।বাড়ীর চর্তুরদিকে লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামরা। বাহির থেকে মনে হবে কোন রাজপ্রসাদ।এলাকাবাসী জানায়,খোকাকে দিনে মাঝেমধ্যে দেখা গেলেও রাতে সে পালিয়ে বেড়ায়।কারণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতিমধ্যে তার বাড়ীতে হানা দিয়েছে।তার সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে একাধিক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা।তাছাড়া তার নামের গাড়ীসহ বিভিন্ন সম্পদ দেখাশুনা করছে তার কাছের কয়েকজন প্রভাবশালী। এদিকে অল্পদিনে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া ইয়াবা গড়ফাদার মাহমুদুল হককে নিয়ে চলছে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা।উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের দুছড়ি গ্রামের হতদরিদ্র আলীর ছেলে মাহমুদুল হকের উত্তাণটা এককথায় বিস্ময়কর,রুপকথার গল্পের মতো।দরিদ্র পিতার সংসারে অভাবের তাড়নায় ২০১৩ সালের দিকে সে মোবাইল অপারেটর কোম্পানী রবিতে চাকরী নেয়।বছরখানের রবি কোম্পনীতে চাকরী করার পর ২০১৪ সালের দিকে সে যোগ দেয় ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতিষ্টান বিকাশে।মুলত মাহমুদুল হকের উত্তাণটা বিকাশ থেকেই। বিকাশে এসআর হিসেবে কর্মরত অবস্থায় সে জড়িয়ে পড়ে ইয়াবা ও হুন্ডি বানিজ্য।বিকাশে তার এলাকা ছিল পালংখালী,থাইনখালী,বালুখালী ও কুতুপালং বাজার।সীমান্তবর্তী এলাকায় যাতায়াতের সুবাধে তার সাথে সখ্য গড়ে উঠে সীমান্তের চিন্থিত ইয়াবা গড়ফাদারদের সাথে ।হাতে বিকাশের টাকা থাকার সুবাধে ইয়াবার চালান আনতে তাকে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি।শুধু ইয়াবা নয়,হুন্ডি বানিজ্যেও জড়িয়ে পড়ে সে।হুন্ডি বাািনজ্য নির্বিঘেœ করতে উখিয়া সদর মসজিদ মার্কেটে বিছমিল্লাহ টেলিকম নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্টান খুলে বসে সে।সেখানেও প্রকাশ্যে নিয়মিত হুন্ডির টাকা লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।তার সাথে হুন্ডি ব্যবসার পাটনার হিসেবে নিদানিয়ার তাহের ও উত্তর পুকুরিয়ার আনোয়ারের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তার ইয়াবা সিন্ডিকেটে রয়েছে ৫০ জনের একটি তরুনদল।তাদের কাজ হচ্ছে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে আসা গড়ফাদার মাহমুৃদুল হকের ইয়াবা দেশের বিভিন্নস্থানে পাচার করা।ইয়াবা পাচার করে মাহমুদুল হক নামে বেনামে অল্প বয়সে অঢেল সম্পদের মালিক এখন। তার রয়েছে একাধিক নোহা গাড়ি,ডাম্পারসহ নামে বেনামে বিপুল পরিমান সম্পদ।প্রকাশ্যে এ অবৈধ বানিজ্য চালিয়ে গেলেও একবারও তাকে গ্রেফতার হতে হয়নি।এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রচার আছে,মাহমুদুল হক থানা পুলিশ ও প্রশাসন ম্যানেজ করেই এ বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।গত ৩০ আগষ্ট ইয়াবার টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে মাহমুদুল গ্রুপের সাথে জাহেদ গ্রুপরে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছে।উখিয়ার আরেক আলোচিত ইয়াবা গড়ফাদার বাবুল মিয়া।৫ বছর আগেও ছিলেন গাড়ির হেলপার।কিছুদিন পর হেলপার থেকে হন চাঁদের গাড়ির (জিপ) ড্রাইভার।কিন্তু গাড়ি চালালেও চলছিল না তার পরিবার।তাই যুক্ত হন চোরাচালানের সঙ্গে।কাঁচা টাকা লোভে জড়িযে পড়ে মরননেশা ইয়াবা বানিজ্যে। এ ব্যবসায় জড়িত হওয়ার পর বাবুল মিয়াকে আর পেছনে ফিরে থাকাতে হয়নি।মাত্র পাঁচ বছর এ মাদক বেচাকেনা করে আমূল বদলে গেছেন তিনি।উখিয়ার হিজলিয়াতে হয়েছে তার কোটি টাকার বাড়ি।কোটি কোটি টাকার জায়গা কিনেছেন কোটবাজারসহ পর্যটন শহর কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে। নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন সম্পদ।তার এক ভাই বর্তমানে ইয়াবাসহ আটক হয়ে ঢাকায় জেলে রয়েছে।শীর্ষ এ ইয়াবা গড়ফাদারের সিন্ডিকেটে রয়েছে হিজলিয়া,জাদিমুরা,উখিয়া সদর এলাকার শাতাধিক যুবক।চতুর বাবুল মিয়া তার এ অবৈধ বানিজ্য ধরে রাখতে প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে চলেন।এ কারনে সে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পরিবর্তে বহাল তবিয়তেই ইয়াবা বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে সে।শুধু খোকা,মাহমুদুল হক ও বাবুল মিয়া নয়,এ ধরনের আরো অনেক ইয়াবা গড়ফাদার রয়েছে যাদের সম্পর্কে এলাকার লোকজন ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ওয়াকিহাল।কিন্তু এসব ইয়াবা রথি মহারথিরা আইনের আওতায় না আসার ফলে স্থানীয় সাধারণ অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন,ইয়াবাসহ যেকোন ধরনের মাদকের ব্যাপারে পুলিশ জিরো ট্রলারেন্সে কাজ করছে। প্রকৃত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।
উখিয়া উপজেলার সর্বত্র ভয়াবহ ইয়াবা আগ্রাসন চলছে।মাদকের সহজলভ্যতায় বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা।কিশোর,তরুণ থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।আসক্তির কারণে সমাজ,পরিবারে অস্থিরতা বাড়ছে,বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা।অপরাধীদের বিশাল একটি অংশ মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে।মাদক বিরোধী জোরদার অভিযানেও মাদক পাচার থামছে না।শক্তিশালী সিন্ডিকেট তাদের বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।অনেকটা আলাদিনের চেরাক পাওয়ার মত ইয়াবা বানিজ্য করে অল্প সময়ে বাড়ী গাড়ীসহ কোটিপতির খাতায় নাম লিখিয়েছে অনেকে।গড়ে তুলেছে আলিশান মার্কেটসহ একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্টান।উখিয়া উপজেলার শীর্ষ ইয়াবা গড়ফাদারদের নিয়ে উখিয়া নিউজ ডটকমের নির্বহী সম্পাদক সরওয়ার আলম শাহীনের ৫ পর্বের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।আজ পড়ুন ২য় পর্ব। শুন্য থেকে কোটিপতি উখিয়ার ৩ জন।