বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
উখিয়া উপকূলে নির্বিচারে পোনা নিধন, প্রশাসন নীরব
প্রকাশিত - ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬ ৮:০১ এএম
উখিয়া নিউজ ডটকম::
কক্সবাজারের উখিয়া উপকূলীয় বঙ্গোপসাগরের উপকূল এলাকাজুড়ে অবৈধ মশারী নেট জাল ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত সাগরের প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বিভিন্ন প্রজাতির কোটি কোটি পোনা নিধন চলছে। চিংড়ি পোনা বাছাই করে বাদ-বাকী বিভিন্ন প্রজাতির পোনা সাগরে অবমুক্ত না করে প্রাণহানি করা হচ্ছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী নাজিরারটেক থেকে উখিয়ার উপকূলীয় এলাকা সোনার পাড়া, ইনানী, ছোয়াংখালী, নিদানিয়া, মনখালী, টেকনাফের বাহারছড়া, শাপলাপুর, শাহপরীর দ্বীপজুড়ে প্রায় ১২০ কিলোমিটার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ পোনা আহরণকারীরা নির্বিচারে মশারীর জাল ব্যবহার করে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ পরিমাণ চিংড়ি পোনা ধরছে। চিংড়ি পোনার সাথে থাকা বাদ-বাকী অন্য প্রজাতির মাছের পোনাগুলো আহরণকারীরা মাটিতে পুঁতে ফেলে। এতে করে সাগর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্যা পোনা নিবৃতে ধ্বংসে হচ্ছে। তার সাথে ব্যাপক ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। অবৈধভাবে চিংড়ি পোনা নিধনের কাজে জড়িত এলাকাবাসীর সাথে বেকার রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ সম্পৃক্ত রয়েছে। এ রোহিঙ্গারা কোন রকম কয়েকটি মশারীর তৈরী জাল জোগাড় করে বিনা মূলধনে সাগর হতে চিংড়ি পোনা সংগ্রহ করে প্রতিদিন ৪/৫ শত টাকা আয় করছে।
প্রতিদিন ভোর হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত আহরণকারী এলাকবাসী ও রোহিঙ্গা নারী পুরুষেরা পোনা নিধন অব্যাহত রেখেছে। তবে সচেতন মহলের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় ইনানী পুলিশ ফাঁিড়র ইনচার্জ সহকারী উপ-পরিদর্শক আরিফুর রহমানকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে অসাধু পোনা নিধনকারীরা নির্বিচারে নির্বিঘেœ পোনা নিধন অব্যাহত রেখেছে। যার ফলে সাগরে চিংড়ি পোনার পাশাপাশি অন্যান্য প্রজাতির মাছের হাজার হাজার পোনা মারা যাচ্ছে। স্থানীয় সচেতন মহল শিঘ্রই পোনা নিধনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে পোনা নিধন বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আরিফুর রহমান বলেন, মশারি জাল দিয়ে যারা পোনা ধরছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। তবে পোনা নিধনকারীর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই বলে জানান।
এদিকে পশ্চিম সোনারপাড়া এলাকার বদিউল আলমের ছেলে ছমিউদ্দিন, নিদানিয়া গ্রামের হুন্ডি ছৈয়দুল্লাহ, ডেইল পাড়া গ্রামের সাগর আলী ও উত্তর সোনার পাড়া গ্রামের ভেলা এসব পোনা কম দামে ক্রয় করে থাকে। অভিযুক্তরা বলেন, আমরা যেহেতু পোনা ব্যবসায়ী রোহিঙ্গা বা এ দেশীয় যে কেউ হোক না কেন, সঠিক মূল্য দিয়ে পোনা ক্রয় করে সাতক্ষীরায় বিক্রি করি।
উখিয়ার সোনারপাড়া চিংড়ি পোনা আহরণকারী আবুল কালাম (৩০) জানান, প্রতি বর্ষা মৌসুমে চিংড়ি পোনা বেশি ধরা পড়ে। কারণ এ সময় মা মাছ ডিম ছাড়ে। জোয়ারের সময় প্রতি ঢেউয়ের সাথে মশারী জালে ৩০০-৩৫০টি চিংড়ী পোনা ধরা আটকা পড়ে। প্রতি পোনার পাইকারি মূল্য ৫০-৬০ পয়সা। তবে এ চিংড়ি পোনা ধরার সময় বাকী বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা মারা যাওয়ার কথাও স্বীকার করেন। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট মৎস্য কর্মকর্তাদের ও প্রশাসনকে প্রতি মাসে মাশোহারা দিয়ে ম্যানেজ পূর্বক এ ধরনের জঘন্য কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
আরেক পোনা আহরণকারী মনু মিয়া বলেন, চিংড়ি পোনা ছাড়া অন্য মাছের পোনা বিক্রির জন্য বাজারে গ্রাহক নেই।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, এ অবৈধভাবে পোনা নিধন বন্ধ করা না হলে অচিরই মাছের ঘাটতি দেখা দিবে। এভাবে নির্বিচারে সাগর হতে চিংড়ি পোনা সংগ্রহের সাথে অন্য প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংস করা হলে একদিকে চাহিদা অনুযায়ী মাছ উৎপাদন হবে না ঘাটতি দেখা যাবে। অপরদিকে অপরিকল্পিত ভাবে চিংড়ি পোনা আহরণ করা না হলে হ্যাচারি শিল্প অচিরই বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। বন বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসন যদি সুনজর রাখে তাহলে এ নির্বিচারে পোনা নিধন বন্ধ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কে এম শাহরিয়া নজরুল বলেন, পোনা নিধনকারীদের সভা সমাবেশ করে বুঝানো হয়েছে। তবু তারা যেহেতু আইন অমান্য করে সমুদ্র থেকে পোনা আহরণ করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন বলেন, একদিকে সমুদ্র উপকুলে পোনা আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ পোনা নিধনের ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। তদন্ত পূর্বক পোনা নিধনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। - See more at: http://www.dainik-destiny.com/details.php?id=39114#sthash.EjVV67Qt.dpuf
Copyright © 2024 UkhiyaNews.Com. All rights reserved.