মাহমুদুল হক বাবুল, উখিয়া :
কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত বিজিবির চোখকে ফাঁকি দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে ইয়াবা । সীমান্ত ঘেষা কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক, উখিয়া করইবনিয়া ডেইলপাড়া সড়ক, মেরিনড্রাইভ সড়ক ও সাগর পথ দিয়ে প্রতিনিয়ত কোটি কোটি টাকার ইয়াবা পাচার হয়ে এ দেশে আসছে। এ ইয়াবা পাচার বন্ধ করতে জেলার আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের তৈরি ইয়াবার বিস্তার বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শহরের অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বানিজ্যিক এলাকা সহ পাড়া মহল্লায় হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে মরণ নেশা ইয়াবা। উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রতিদিনই এদেশে ঢুকছে লাখ লাখ পিচ ইয়াবার চালান। প্রায় সময় ইয়াবা আটকের ঘটনা ঘটলেও ইয়াবার চালান আসা বন্ধ হয়নি। বরং প্রায় প্রতিদিনই এর সাথে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সদস্য। উখিয়া,টেকনাফ উপজেলার আনাচে-কানাচে ইয়াবা পাচারে নারী পুরুষ, রোহিঙ্গা যুবক,যুবতী থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও জড়িয়ে পড়েছে। এ মরণ নেশা ইয়াবা ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে রাতা রাতি কোটিপতির খাতায় নাম লিখিয়েছেন যারা উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড থেকে মাদকের কালো টাকার পাহাড় দিয়ে নির্বাচিত ইউপি সদস্য করইবনিয়া এলাকার মৃত গুরা মিয়ার ছেলে মাদক স্বর্গরাজ্যের অন্যতম গডফাদার আব্দুর রহিম প্রকাশ ইয়াবা রহিম, সিন্ডিকেটের ক্যাশিয়ার ডেইল পাড়া এলাকার ছব্বির আহম্মদের ছেলে জসিম উদ্দিন, মাদকের কালো টাকার পাহাড় বিতরনে উত্তর পুকুরিয়া গ্রামের আব্দুস ছালামের ছেলে আনুরুল ইসলাম প্রকাশঃ হুন্ডি আনোয়ার, করই বনিয়া এলাকার মৃত সোলতান আহম্মদের ছেলে জাগির হোসেন প্রকাশ ইয়াবা জাগির, পূর্ব ডিগলীয়া পালং এলাকার মোঃ কালুর ছেলে যুবদল নেতা শাহ জাহান খলিফা প্রকাশ ইয়াবা শাহ জাহান, একই এলাকার শাহ জাহান ডাকাত,মৃত বর্মাইয়া কালুর ছেলে চেয়ারম্যান, সোলতান আহম্মদের ছেলে সাহাব উদ্দিন প্রঃ শাহ আলম, ডেইল পাড়া এলাকার আজিজুর রহমানের ছেলে শামশুল আলম,মৃত আনুমিয়ার ছেলে আমির হোসেন, ডেইল পাড়া এলাকার অপরাধ জগতের কিং ফরিদ আলমের ছেলে জাফর আলম, ইউনিয়নের হিজোলীয়া তেলীপাড়া এলাকার ইসলাম ড্রাইভারের ছেলে নুরুল হাকিম প্রকাশ ইয়াবা হাকিম, রাজাপালং ইউনিয়নের খয়রাতি পাড়া গ্রামের আলী আহম্মদের ছেলে আতাউল্লাহ প্রকাশ ইয়াবা আতাউল, হাজির পাড়া এলাকার বদিউর রহমান সিকদারের ছেলে মীর আহম্মদ । জানা গেছে, উখিয়া টেকনাফ উপজেলার অন্ততপক্ষে ৩০ টি ইয়াবা সিন্ডিকেট তৎপর রয়েছে মরণঘাতী এ বানিজ্য। প্রায় প্রতিদিনই আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে দেশের বিভিন্নস্থানে ইয়াবা আটকের ঘটনা ঘটছে। এসব আটকের ঘটনা ঘটলেও প্রসাশনের ছোঁখ ফাঁকি দিয়ে ঠিকই নিদ্দিষ্ট গন্তব্য ইয়াবা পাচার হয়ে যাচ্ছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানে ইয়াবা আটকের সময় মাঝে মধ্যে পাচারকারী আটক হলেও এর সাথে জড়িত রাঘববোয়াল বা গড়ফাদাররা আটক না হওয়ায় ইয়াবা পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ।
উখিয়া টেকনাফ সীমান্তের মাদক ব্যবসার সাথে সংশিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উখিয়া উপজেলার দরগাবিল,ডিগিলিয়া উলুবনিয়া, ধামনখালী, টেকনাফের হ্নীলা নয়াপাড়া সাম্পানঘাট, টেকনাফ বন্দর, শাহপরীরদ্বীপ, জালিয়াপাড়া, নাইটংপাড়া সাগর পথ ও স্থল পথ দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ পিচ ইয়াবার চালান অনায়াসে পাচার হয়ে এসে উখিয়া টেকনাফের নিদ্দিষ্ট কয়েকটি গুদামে জমা হয়। পরে সুযোগ বুঝে রোহিঙ্গা যুবক যুবতীসহ সিন্ডিকেটের সদস্যরা এসব ইয়াবা সড়ক পথে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সিন্ডিকেটের হাতে পৌঁছে দেয়। এছাড়াও পর্যটকবেশী কতিপয় পাচারকারী বিলাস বহুল গাড়ীতে করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অভিনব কায়দায় ইয়াবা পাচার করে যাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। আইন প্রযোগকারী সংস্থার লোকজন অনেক ক্ষেত্রে পর্যটক মনে করে এসব গাড়ীগুলো তল্লাসীর বাইরে রাখে। সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত বর্ডার গার্ড বিজিবির কথিপয় দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তা ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে মাসিক চুক্তিতে ম্যানেজের মাধ্যমে তাদের এ ব্যবসা ওপেন সিক্রেটের মত চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব সিন্ডিকেটের মধ্যে উপজেলার থাইংখালী তাজনিমারখোলা নামক এলাকার নির্বাচিত জয়নাল মেম্বার প্রকাশ ইয়াবা জয়নাল, ইয়াবা আমিন, ইয়াবা লাদেন, হরিনমারার ফরিদ সিন্ডিকেট, জাদিমুরার হেলাল সিন্ডিকেট, ঘিলাতলীর মুবিন সিন্ডিকেট, বালুখালী পানবাজারের বকতার মেম্বার প্রকাশ ইয়াবা বকতার সিন্ডিকেট, ও উখিয়ার খোকা সিন্ডিকেট অন্যতম। উল্লেখিত প্রতিটি সিন্ডিকেটে ৫০ জনের মত যুবক,যুবতী রয়েছে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজের মাধ্যমে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। ফলে ইয়াবা বানিজ্যর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না বলে স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ। এদিকে বিগত কয়েক বছর ধরে ইয়াবা সহ মানব পাচার করে উখিয়ার অনেকেই এখন কোটিপতির খাতায় নাম লিখিয়েছে। উক্ত কালো টাকার মাধ্যমে অনেকেই আবার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের অবৈধ টাকার কাছে সৎ, যোগ্য প্রার্থীরা হারিয়ে গেছে। মাদক ও ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকে শীঘ্রই আইনের আওতায় নিয়ে এসে পবিত্র ইউনিয়ন পরিষদকে ইয়াবা ও মাদকমুক্ত রাখার দাবী জানান এলাকাবাসীরা।
সূত্রে জানা গেছে, ৯০ দশকে নেশার জগতে প্রবেশ করে ইয়াবা। শুরুতে দুবাই, পাকিস্তান থেকে ল্যাগেজ পার্টির মাধ্যমে এসব ইয়াবা এদেশে প্রবেশ করলেও তা ছিল ব্যয় বহুল ও সীমিত আকারে। এ সময় এক একটি ইয়াবা ট্যাবলেট ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হওয়ার সুবাদে ইয়াবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল নগন্য। ২০০৫ সালে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে এসব ইয়াবা তৈরি শুরু হয়। মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন নেশা জাতীয় উপকরণ ও কাচাঁমাল দিয়ে স্বল্প ব্যয়ে ইয়াবা তৈরি করে এদেশে পাচার করতে থাকে। মিয়ানমারের তৈরি এক একটি ইয়াবা ৫০/৬০ টাকায় বিক্রি হলেও এসব ইয়াবা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে টেকনাফে আসার পর ঘুষ লেনদেন সহ প্রতিটির মূল্য দাড়াঁয় ১০০/১২০ টাকা । পরে এসব ইয়াবা কক্সবাজার চট্টগ্রামে ৩ থেকে ৫ শত টাকায় অনায়াসে বিক্রি হওয়ার সুবাধে ব্যাপক চাহিদা ও অল্প পুঁিজতে বেশী লাভবান হওয়ার আশায় ইয়াবা পাচারে ঝুকে পড়ে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত যুব সমাজ। বর্তমানে ইয়াবা পাচার ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পাড়ার কারণে রোহিঙ্গা যুবক যুবতী সহ উখিয়া- টেকনাফের সহস্্রাধিক স্মাট যুবক হোন্ডা, মাইত্রেুা ও বিলাস বহুল গাড়ী নিয়ে ইয়াবা পাচারে নিয়োজিত রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী। তারা বিভিন্ন সময় রুট পরিবর্তনের মাধ্যমে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে প্রসাশনের চোখ ফাঁকি দিয়ে। উখিয়া- টেকনাফের উঠতি বয়সী যুবকরা ছাড়াও দেশের অভিজাত পরিবারের যুবক যুবতীরাও কম সময়ে কোটিপতি হওয়ার নেশায় ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে উখিয়া টেকনাফের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল মালেক মিয়া জানান, পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাঝে মধ্যে ইয়াবা পাচারকারীদের আটক করছে। সড়ক পথে সুনিদিষ্ট তথ্য ছাড়া ইয়াবা আটক করা কঠিন। তবুও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।