রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে সরকার। এতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের নেওয়া যেকোনো পদক্ষেপে সহায়তা করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
রোববার (১১ জুন) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে চীন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, ওমান, প্যালেস্টাইন, ইরান, তুরস্ক, ইরাক, চীনের রাষ্ট্রদূতসহ জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক, ইউএনএইচসিআর ও বিশ্ব খাদ্য সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, জননিরাপত্তা সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সৌদি আরব, ইরান, প্যালেস্টাইন, তুরস্ক, কাতার, কুয়েত ও চীনের রাষ্ট্রদূতরা নিজ নিজ দেশের অবস্থান তুলে ধরেন এবং রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের যেকোনো উদ্যোগ পাশে থেকে সমর্থন ও সহায়তা প্রদানের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জিসিসি প্লাস ফোরামের এ সভায় বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের খাদ্যসহ বিভিন্ন সহয়তা প্রদানের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের দ্রুত নিজ দেশ মিয়ানমারে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সহায়তা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বৈঠকে সৌদি আরব, ইরান, প্যালেস্টাইন, তুরস্ক, কাতার, কুয়েত ও চীনের রাষ্ট্রদূতরা নিজ নিজ দেশের অবস্থান তুলে ধরেন এবং রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের যেকোনো উদ্যোগ পাশে থেকে সমর্থন ও সহায়তা প্রদানের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
‘সংকটের একমাত্র সমাধান রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে মর্যাদপূর্ণ স্থায়ী প্রত্যাবাসনের মধ্যে নিহিত’- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি রাষ্ট্রদূতদের অবহিত করেন। রোহিঙ্গাদের স্থানীয় অন্তর্ভুক্তির কোনো রূপ সুযোগ নেই জানিয়ে মুখ্য সচিব তাদের জন্য ভাষানচরে সম্প্রসারিত সাময়িক শেল্টার তৈরিতে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রদূতদের সহযোগিতা কামনা করেন।
বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক ও খাদ্য সহায়তায় বিশ্ব খাদ্য সংস্থাসহ সাহায্যকারী সংগঠনগুলোর মাথাপিছু বরাদ্দ হ্রাসের বিষয়টি তুলে ধরে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক ও ডব্লিউএফপির প্রতিনিধি সকলকে সহায়তার আহ্বান জানান।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে৷ তখন সীমান্ত অতিক্রম করে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়৷ আগে থেকেই এখানে ছিল আরও কয়েক লাখ নিপীড়িত রোহিঙ্গা৷ ফলে সব মিলিয়ে এখানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে ১২ লাখের বেশি৷
মানবিক কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও বর্তমানে বিশাল এই জনগোষ্ঠী নিয়ে বিপাকে পড়েছে সরকার। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরানোর চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। আন্তর্জাতিক চাপে মিয়ানমার বারবার আশ্বাস দিলেও একজন রোহিঙ্গাকেও নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়নি। মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দেওয়া রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুত্র: ঢাকামেইল
পাঠকের মতামত