জসিম উদ্দিন টিপু :
এক বছরেরও বেশী সময় ধরে টেকনাফের উপকুলে পড়ে আছে সমুদ্রের বয়া। গভীর সমুদ্রে চলাচলকারী জলযানের দিক নির্দেশক হিসেবে বয়া সমুদ্রে থাকারই কথা। একটি বছর সমুদ্রের দিক নির্দেশক বয়া অবহেলায় এভাবে পড়ে থাকায় উপকুলে বসবাসকারী জনসাধারণের মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বয়া না থাকায় নৌ চলাচলে সমস্যা এবং দুঘর্টনা ঘটছে। সমুদ্রে চলাচলে বয়া গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে বলে সংশ্লিষ্ট লোকজন দৈনিক কক্সবাজারকে জানিয়েছেন। এদিকে সমুদ্রের দিক নির্দেশক “বয়া” এভাবে পড়ে থাকায় সচেতন মহল বিআইডাব্লিউটিএ “বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ” সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের জাদীমুরা জাইল্ল্যাঘাটা এলাকাস্থ নাফনদীর কিনারায় বিজিবি চৌকির পশ্চিম পার্শ্বে সাগরের দিক নির্দেশক একটি বয়া পড়ে আছে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, দেশ বিভক্তের পর বাংলাদেশ সরকার সেন্টমার্টিন রোড়ে চলাচলের সুবিধার্থে “সাগর-নদীর মোহনায়” বঙ্গোপসাগরে দিক নির্দেশক হিসেবে ৩টি বয়া স্থাপন করে। বয়া সেন্টমার্টিন রোড় ও বঙ্গোপসাগরে চলাচলকারী জলযানের দিক নির্দেশক হিসেবে কাজ করে থাকে। মূলত বয়া অনুসরণ করেই নাকি এই রোড়ে চলাচলকারী জলযান এবং ভিনদেশী মালভর্তি জাহাজ যাতায়াত করে থাকেন। ২০১৫সনের শুরুর দিকে সাগরে স্থাপিত দিক নির্দেশক বয়া ছিঁড়ে গেছে। বয়া না থাকায় জলযান চলাচলে একদিকে যেমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে রোড় চিহ্নিত করতে না পারায় অনেক সময় যাত্রীবাহী জাহাজ এবং মালবাহী ভিনদেশী জাহাজ দুঘর্টনায় পড়ছেন। সপ্তাহ দু’য়েক আগে মিয়ানমার থেকে আমদানীকৃত আড়াই কোটি টাকার কাঠ ভর্তি জাহাজ চরে আটকে গেছে। ঐ জাহাজটি এখনও শুধু কংকাল হিসেবে সাগরের পানিতে ডুবে আছে। বিভিন্ন সময় পযর্টকবাহী জাহাজ জেগে উঠা চরে আটকে গিয়েছিল বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং পযর্টন সংশ্লিষ্টরা দৈনিক কক্সবাজারকে জানিয়েছেন।
সেন্টমার্টিন ইউপি সদস্য মোঃ হাবিবুর রহমান খাঁন দৈনিক কক্সবাজারকে জানান, দেড় বছর ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রোড়ে সাগরের দিক নির্দেশক সব বয়াই নেই। দুর্যোগ এবং রাক্ষুসে পানির ঢেউয়ে এসব বয়া ছিঁড়ে গেছে। বয়া না থাকায় চলাচলে সেন্টমার্টিনবাসীর বড়ই সমস্যা হচ্ছে। দ্বীপবাসী এবং সাগরে চলাচলকারী লোকজন প্রতিনিয়ত আতংকে রয়েছেন।
হ্নীলার ইউপি চেয়ারম্যান এইচ.কে.আনোয়ার সিআইপি স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে বলেন গত বছর ধরে জাদীমুরা এলাকায় সমুদ্রের একটি বয়া পড়ে আছে। সেন্টমার্টিন নৌ পথে চলাচলকারী জাহাজ কেয়ারী সিন্দাবাদের টেকনাফস্থ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শাহ আলম বয়া না থাকায় জাহাজ এবং জলযান চলাচলে সমস্যার কথা দৈনিক কক্সবাজারকে জানান।
“বিআইডাব্লিউটিএ” কক্সবাজারের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বশীল ব্যাক্তির সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। এখানে নামে মাত্র অফিস এবং একজন পিয়ন আছে। কর্মস্থলে কোন কর্মকর্তা না থাকায় কারো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সফিউল আলম জানান, আসলে বয়া’র বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি আসার পরেই কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। জনধিক বিবেচনায় দ্রুততার সময়ে কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে বিআইডাব্লিউটিএ চট্টগ্রামস্থ সহকারী পরিচালক নয়ন শীল দৈনিক কক্সবাজারকে জানান, টেকনাফকে নদীবন্দর ঘোষণার প্রক্রিয়াধীন। যা নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব আকারে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। গেজেট হওয়া মাত্রই টেকনাফ থেকেই নৌ পথ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এরপরই নদী ড্রেজিং থেকে শুরু করে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তবে বয়ার বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। নৌ পথে চলাচলের সুবিধার্থে সবকিছুই অতি অল্প সময়ের মধ্যে সমাধানে চেষ্টা চলছে।