বিপুল পরিমান ঋণের বদলে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। এবার বাংলাদেশের কাছে এমন ‘অন্যায়’ শর্ত পেশ করল বিশ্ব ব্যাংক। তবে বিষয়টি যে মোটেও ভাল চোখে দেখছে না তা স্পষ্ট করে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
২০১৭ সালের জুলাই মাসে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে দমন পীড়ন অভিযান শুরু করে বার্মিজ সেনারা। অভিযোগ, ওই অঞ্চলের নিরীহ রোহিঙ্গাদের উপর হত্যা, ধর্ষণের মতো অত্যাচার চালায় সরকারি বাহিনী। প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসে সীমান্তবর্তী কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয়গ্রহণ করে ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী। নতুন পুরাতন সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে প্রায় ১২ লক্ষ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি শরণার্থী শিবির তৈরি করা হয়েছে। এহেন সময়ে ঋণের বদলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার শর্ত পেশ করেছে বিশ্ব ব্যাংক। যা কিছুতেই মানতে রাজি নয় ঢাকা। ইতিমধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের প্রস্তাব মেনে না নিয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়।
বিশ্ব ব্যাংকের ওই প্রস্তাব মেনে নিয়ে ওই সংস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ করলে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বদলে তাদেরকে বাংলাদেশেই চিরতরে রেখে দিতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। এজন্য ওই প্রস্তাবের পরিবর্তন না হলে উদ্বাস্তু সংক্রান্ত কোনও অর্থ বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে না নেওয়ার লিখিত মতামত পাঠানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কাছে সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংক তাদের প্রস্তাবিত ‘রিফিউজি পলিসি রিভিউ ফ্রেমওয়ার্ক’টি মতামতের জন্য পাঠায় এবং চিঠিতে উল্লেখ করে- ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে কোনও মতামত না পেলে ওই প্রস্তাব সরকার মেনে নিয়েছে বলে তারা ধরে নেবে। বিশ্ব ব্যাংকের এই রিফিউজি পলিসি রোহিঙ্গা-সহ অন্যান্য দেশে অবস্থিত সব উদ্বাস্তুর জন্য প্রযোজ্য। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মতামত চাইলে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে মন্ত্রনালয়।
ওই বৈশ্বিক ফ্রেমওয়ার্কের তিনটি উদ্দেশ্য হচ্ছে‑ উদ্বাস্তু ও হোস্ট কমিউনিটির জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করা। শরণার্থীরা যে দেশে অবস্থান করছে সেই সমাজে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া অথবা তাদের ফেরত পাঠানো। এবং, দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা যাতে করে নতুন শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হয়।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করছে বাংলাদেশ। অন্যান্য অনেক দেশ শরণার্থীদের দেখভালের জন্য জাতিসংঘকে অর্থ প্রদান করে। এই অর্থ প্রদানের পরিমাণ দিনদিন কমে আসছে এবং এর ফলে বাড়তি বোঝা বাংলাদেশের ওপর চাপানোর একটি চেষ্টা আছে বিদেশিদের বলে অভিযোগ।
এই বিষয়ে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, “বিদেশি অর্থদাতারা চাইছে রোহিঙ্গাদের উপার্জনের ব্যবস্থা, যাতে তারা নিজেদের খরচ নিজেরাই মেটাতে পারে। এছাড়া তাদের জন্য শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি, অবাধ চলাচলের বিষয়েও তারা জোর দিচ্ছে। এজন্য রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন-সহ অন্যান্য বিষয়গুলো চালু করার প্রস্তাব করছে তারা।”
এই বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণের জন্য এইসব শর্ত মেনে নিলে দেশের দীর্ঘমেয়াদি যে লক্ষ্য আছে তার সঙ্গে সংঘাত হতে পারে। এজন্য খুব সতর্ক থাকতে হবে। সহজ কথায়, বাংলাদেশ এই প্রস্তাব মানবে না বলেই জানিয়ে দিলেন তিনি।