আবু আফজাল সালেহ
ভোররাতে কক্সবাজারের কলাতলী পৌঁছলাম। ভোরে এসে নাস্তা সেরে নিলাম। এরপর কলাতলী বিচ থেকে সুগন্ধা বিচ গেলাম। এ বিচ দেখতে সুন্দর। ভোরের সূর্যের লাল আভা বড়ই চমৎকার। ৩০ টাকা (ঘণ্টাপ্রতি) করে চেয়ারে হেলান দিয়ে ঢেউ গুনতে ভালোই লাগে। সুগন্ধা বিচে সকাল কাটিয়ে মেরিন ড্রাইভ রোড ধরলাম। কলাতলীর ডলফিন মোড় থেকে সিএনজিযোগে পাথুরে সৈকত ইনানী যাব। মাঝে পড়বে হিমছড়ি ঝরনা। আসার পথে দেখব। পাহাড়ে উঠব। লতাপাতার ফাঁক গলিয়ে সমুদ্রের ঢেউ দেখব। এ চিন্তা করেই যাত্রা।
কিছুদূর যেতেই সাগরের গর্জন। উথালপাথাল ঢেউ। নীল জলরাশি। মেরিন ড্রাইভ রোডের এগুলোই সৌন্দর্য। একদিকে সুউচ্চ পাহাড়। অন্যদিকে ফেনিল নীলাভ সমুদ্র। দু’দিকের নান্দনিকতার বুক চিরে গেছে কালো পিচের এ রোড। সুপারি বাগান, জলরাশিতে সারি সারি নৌকা ও ট্রলার। ৭ কিলোমিটার যেতেই উথালপাথাল ঢেউ শুরু। হিমছড়ির কাছেই বড় বড় ঢেউ এসে আছাড় খাচ্ছে। বহুস্তর বিশিষ্ট সমুদ্রের ঢেউ মুগ্ধ করছে। দু’চোখ ভরে উপভোগ করছি। এর মধ্য দিয়েই ২৪ কিলোমিটার দূরের ইনানী সি বিচে পৌঁছে গেলাম। অসংখ্য ছোট ছোট পাথর-ঝিনুক বিছানো রয়েছে। আগের মতো অবশ্য বড় বড় পাথর নেই। দু’একটার দেখা মিলবে। মোটরবাইকে সমুদ্রতটে ঘুরতে দারুণ মজা! কাঁকড়া দেখা যাবে। ঝাউবনের কাছে যাওয়া যাবে।
ইনানী বিচে প্রচুর ডাব দেখলাম। ঝিনুক আর ছোট ছোট পাথর বিছানো। হঠাৎ হঠাৎ বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে। সী বোটে খেলছে অনেকে। মাঝিরা মাছ ধরছে ট্রলার বা জাহাজে। বালুতটে মোটরবাইকে ঘোরাঘুরির দৃশ্য বড়ই চমৎকার! চারিদিকের বিশাল জলরাশি, ঢেউ আর গর্জন মনকে পুলকিত করে। বহুস্তর বিশিষ্ট নীল সমুদ্রের ঢেউ বিমোহিত করে। পর্যায়ক্রমে আছড়ে পড়া ঢেউ উপভোগ করার দারুণ অভিজ্ঞতা হলো।
কলাতলী থেকে ৭-৮ কিলোমিটার দূরে। ইনানী যাওয়ার পথে। অটো বা সিএনজি নিয়ে যাওয়া যাবে। ভাড়া ৩০ টাকা। সমুদ্র আছড়ে পড়ছে একদিকে। অন্যদিকে পাহাড়। এখানেই হিমছড়ি। ৩০ টাকার প্রবেশ ফি দিয়ে পাহাড়ে প্রবেশ করলাম। প্রথমে ঝরনা দেখলাম। এরপর রেলিং বেয়ে পাহাড়ে উঠলাম। পাহাড়ে উঠতে কষ্ট হয়। অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। টক জাতীয় খাবার কাজে দেবে। প্রচুর পানি পান করতে হয়। দু’টো ডাবের পানি পান করে পাহাড়ে উঠলাম। ইনানী থেকে আসার পথে হিমছড়ি থামলাম। লতা-পাতার ফাঁক গলে কী সুন্দর দৃশ্য! মাঝেমধ্যে সমুদ্রের গর্জন শুনে বিমোহিত হলাম। প্রচুর নারী-পুরুষ ও শিশুকে পাহাড়ে উঠতে দেখলাম।
ঢাকা বা যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস বা ট্রেনযোগে চট্টগ্রাম। এরপর বাসে কক্সবাজার। ঢাকা থেকে অনেক বাস সরাসরি কক্সবাজার যায়। এমন বেশকিছু এসি বা নন-এসি পরিবহন পাওয়া যাবে। শ্রেণিভেদে ভাড়া ১১০০ টাকা থেকে শুরু। এরপর কলাতলীর ডলফিন মোড় থেকে সিএনজিযোগে ২৩-২৪ কিলোমিটার দূরের ইনানী সী বিচ যাওয়া যাবে। লোকাল ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা। রিজার্ভ করলে ৪০০-৫০০ টাকা। রিজার্ভ করে টেকনাফও যাওয়া যাবে।
থাকা ও খাওয়ার জন্য কক্সবাজার বিখ্যাত। এটি পর্যটন নগরী। এখানে কম বাজেট থেকে শুরু করে উচ্চ বাজেটের আবাসিক ও খাবার ব্যবস্থা আছে। পিক সিজনে বা লম্বা ছুটিতে হোটেল বুকিং দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
কক্সবাজার থেকে একটু দূরে হওয়ায় ইনানী তুলনামূলক নিরিবিলি। এখন অনেকেই যাচ্ছেন। আর মাঝে হিমছড়ি ঝরনা। হিমছড়ি পাহাড়ের চূড়া থেকে সমুদ্র দেখতে অপরূপই লাগে। মাঝ পাহাড়ের লতা-পাতার ফাঁক গলিয়ে সমুদ্র দর্শন দারুণ অনুভূতির জন্ম দেবে। কক্সবাজারে খরচ তুলনামূলক একটু বেশিই। আর সবক্ষেত্রে দাম-দর ঠিক করে নিলে খরচ অনেক কমে যাবে।
লেখক: উপ-পরিচালক, বিআরডিবি, কুষ্টিয়া।