নিউজ ডেস্ক::
‘সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, ইয়াবা না খেলে তিনি স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেন না। অফিসের কাজ এলোমেলো হয়ে যায়। সভা সেমিনারে বক্তব্য রাখতে পারেন না। এই অবস্থা থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পেতে পারেন সেই পরামর্শ তিনি চেয়েছেন।’ ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে কথাগুলো বলছিলেন প্রখ্যাত মনোরোগ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল। তিনি বলেন, আমাদের কাছে ইয়াবা আসক্ত শত শত রোগী আসছে। আমরা একটা জরিপ করে দেখেছি, এমন কোন পেশার লোক নেই যে, সেখানে ইয়াবা আসক্ত নেই। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা অসনি সংকেত।
ইয়াবা খেয়ে সাময়িক ভালো লাগলেও শারীরিক ও মানসিক শক্তি ও যৌন ক্ষমতা স্থায়ীভাবে থাকে না। ইয়াবা ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয় বলে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা জানান। কোনভাবেই দেশে ইয়াবার সরবরাহ ঠেকানো যাচ্ছে না। দেশে ইয়াবা পাচারে আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি গ্রুপ ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১৫ বছর পরে দেশে একজন সুস্থ তরুণও পাওয়া যাবে না বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন। দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ইয়াবায় আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। মেডিক্যাল, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ইয়াবায় আসক্ত। টেকনাফ সীমান্তে ইয়াবার চালান ঠেকাতে কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও কোন কাজ হচ্ছে না।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) তৌফিক উদ্দীন আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, ইয়াবার বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করেছি। তবে তারা এ বিষয়ে আমাদের কোন ধরনের সহযোগিতা করছে না। তবুও আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। ইয়াবা নিয়ন্ত্রণে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে ২ কোটি পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে দীর্ঘদিন কাজ করছেন এমন একজন কর্মকর্তা জানান, ইয়াবার সর্বনাশ না ঠেকাতে পারলে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে দেশে একজন সুস্থ তরুণও খুঁজে পাওয়া যাবে না। মিয়ানমার আমাদের দেশকে ধ্বংস করার জন্য, মেধাশূন্য করার জন্য ইয়াবা সরবরাহ করছে। তারা জেনে বুঝে এই কাজ করছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, আগে থাইল্যান্ডে এভাবে ইয়াবার ছড়াছড়ি ছিল। সেখানে বেশ কিছু মানুষকে প্রকাশ্যে ফায়ারিং স্কোয়াডে দেওয়ার কারণে থেমে গেছে। সরকার সেখানে আইন করেছে, ২০টির কম ইয়াবা পেলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর ২০টির বেশি পেলে মৃত্যুদণ্ড। এরপর থেকে সেখানে ইয়াবা নেই বললেই চলে। আমাদেরও এটা করা দরকার।
বিভিন্ন সরকারি সংস্থার তথ্যমতে, কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশের থানা ও ফাঁড়িগুলোতে দায়িত্বরতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পুলিশ ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। তাদের সাথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশের থানা এমনকি ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা এবং ডিবির কতিপয় পুলিশও এই কাজে জড়িত। ২০১৫ সালের ২১ জুন ফেনীতে নিজের প্রাইভেট কারে ঢাকায় ইয়াবা নিয়ে যাওয়ার সময় ৬ লাখ ৮০ হাজার ইয়াবাসহ র্যাবের হাতে ধরা পড়ে ডিএমপির বিশেষ শাখার এসআই মো. মাহফুজুর রহমান। ওই ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার ইয়াবাসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ধরা পড়েছে।
ইয়াবা ব্যবসায় সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে কক্সবাজার জেলার ৫ থানার ওসি, এসআই, এএসআইসহ ৭৪ জন পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়েছে। একই জেলায় পুলিশের একজন গানম্যানও ইয়াবাসহ ধরা পড়েছে।
টেকনাফ সীমান্তে ইয়াবা অনুপ্রবেশ কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নাফ নদীতে মাছ ধরাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে সবাইকে কঠোর হতে বলেছেন। জোয়ারের মত ইয়াবা আসছে বাংলাদেশে। কোস্টগার্ড গত ৬ মাসে ৫০ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করেছে। পুলিশ ও বিজিবি তো ধরছেই। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরও ধরছে। অভিযোগ আছে, যে পরিমাণ ধরা হচ্ছে তার সব জমা দেওয়া হয় না।
মাদক দিবসের অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমরা কঠোর হস্তে এটা দমন করছি। কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।
ইত্তেফাক
পাঠকের মতামত