মোঃ মারুফুর রশিদ খাঁন। ২৪তম বিসিএস(ক্যাডার)। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। খুব সম্ভবত অতি শীঘ্রই হতে যাচ্ছেন এডিশনাল ডেপুটি কমিশনার(এডিসি)। সুন্দর বর্তমানের বিপরীতে রয়েছে তার কঠিন বাস্তবতা। শিক্ষক বাবার একক আয়ে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠেন মারুফুর রশিদ খাঁন। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক থেকে স্নাতক এমনকি স্নাতকোত্তরসহ শিক্ষাজীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে মেধার সাক্ষর রাখলেও পারিবারিক দারিদ্রতা পিছু লেগেই ছিল তার। চার ভাইয়ের মধ্যে বড় হওয়ায় ছোট ভাইদের আগ্রহ যোগাতে ভেঙ্গে পড়েননি কখনো। যার ফলাফল চার ভাই সবাই বিসিএস ক্যাডার। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্ব পালন করছেন তারা সবাই। জীবনের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থেকে সফল হওয়া এমন ব্যক্তিরাই আমাদের অনুকরণীয়। ১২/১০/১৪ ইং। সরকারি আদেশে বান্দারবান জেলার রুমা উপজেলা থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে মোঃ মারুফুর রশিদ খাঁন যোগ দিয়েছিলেন পেকুয়া উপজেলায়। আজ ১২/১০/১৬ ইং। মাঝখানে কেটে গেল দুটি বছর। বাকিটা ইতিহাস। আজ পাঠকদের জন্য সতুলে ধরবো এর উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ।
কখনো তিনি এক ঝাঁক শিশুর মাঝে। কখনো আবার রোগে আক্রান্ত জনের পাশে। কখনো ত্রাণ
নিয়ে হাজির দুর্গম এলাকায় বন্যা কবলিতদের পাশে। কখনো আবার একজন অসহায়দের
সহযোগিতা কামনা। এভাবেই উপজেলাবাসীর সুখে দুঃখে সবার আগে হাজির হওয়ার চেষ্টা
তার। এসব কারণে ইতোমধ্যে সবার কাছে তিনি নিবেদিত প্রাণ হিসেবে পরিচিত হয়ে
উঠেছেন তিনি। এমনকি ঘুষ না খাওয়া সরকারী আমলা হিসেবে তাকেই চিনেন পেকুয়াবাসী।
তার অফিস কক্ষের দরজা সবার জন্যই থাকে উন্মুক্ত।
তাই পেকুয়ার নির্যাতিত, অসহায়দের একমাত্র আস্থাস্থল হয়ে উঠে ইউএনও মারুফুর
রশিদ খাঁন।
বিগত দুটি বছর একহাতে পালন করে গেছেন তিন তিনটি সরকারী গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার(ভূমি)।
প্রাথমিক স্কুলের সাড়ে ছয় হাজার শিক্ষার্থীকে স্কুলড্রেস প্রদান, বিভিন্ন
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের জন্য খেলনা সামগ্রী বিতরণ, ইটভাটার
২৫জন শিশু শ্রমিককে নতুন বই-খাতা, স্কুলড্রেস-জুতা দিয়ে স্কুলে ভর্তি করিয়ে
দেওয়া, পেকুয়া উপজেলার প্রায় অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল চালুকরণ,
উপজেলা পরিষদের ভিতরে নান্দনিক শিশু পার্ক স্থাপন, বনভূমি থেকে অবৈধ স্থাপনা
উচ্ছেদ, পাহাড় কাটা বন্ধ করা করা, বাল্যবিয়ে বন্ধ করা, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন
বন্ধ করা, পেকুয়ার বিভিন্ন বাজারে নিম্ন মানের ওষুধ বিক্রি বন্ধে ভ্রাম্যমাণ
আদালতে অভিযান, বাজার তদারকি, পেকুয়া বাজারে পয়ঃনিষ্কাশনের অত্যন্ত প্রয়োজনীয়
কোহেলখালী খাল পুণঃখনন, পেকুয়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সৌর বিদ্যুৎ চালিত
সড়ক বাতি স্থাপন করা ও নিজ উদ্যোগে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আক্রান্ত মানুষকে সরকারী
বেসরকারি বিভিন্ন অনুদান এনে দেওয়া।
এমনকি পেকুয়ার জন্য সরকার কতৃক বরাদ্দকৃত একটি পয়সাও বৃথা যেতে দেননি তিনি।
যথাযথভাবে আদায় করে নিয়েছন সব কাজ। পেকুয়ার জন্য অনেক করেছেন তিনি। যা পেকুয়া
উপজেলার মানুষ খুব সহজে ভূলতে পারবে বলে মনে হয়না।
তার হাত ধরে আলোকিত হয়ে উঠা পেকুয়ার একজন চাক্ষুষ প্রত্যক্ষদর্শী আমি নিজেই।
পেকুয়ার সাত ইউপিতে মাত্র দু'জন চেয়ারম্যান সরকার দলীয়। উপজেলা পরিষদের
চেয়ারম্যানও বিএনপি'র। আর সংসদ সদস্য বিরোধী দলীয় তথা জাতীয় পার্টির। এসব
জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সরকারদলীয় লোক কম থাকায় পেকুয়ার জনসাধারণ আশানুরূপ
উন্নয়ন পাননি। যা তারা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে গত বছরের বন্যাকালীন ও বন্যা
পরিবর্তি সময়ে। চাহিদামত ত্রান সময়মত আসেনি। ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ সংস্কারে হয়েছে
অনেক বিলম্ব। কিন্তু ইউএনও'র চেষ্টা না থাকলে যা সময়সাপেক্ষ হতো বলে সচেতন
মহলের অভিমত।
উপজেলার সকল জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সবার সাথে সমন্বয় করে এগিয়ে
নিয়েছেন পেকুয়ার সামগ্রিক পরিস্থিতিকে। আমার দেখা মতে, এমন কোন কর্মকান্ড তিনি
জড়ান নাই, যার দরূণ বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
পেকুয়ার অাইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার্থে ছিলেন তিনি সদা তৎপর ভূমিকায়।
২০১৫সালের ১২মে। হঠাৎ হদিস নেই বিএনপি'র তৎকালীন মুখ্যপাত্র সালাউদ্দিন আহমেদ।
সে সুবাদে সারাদেশে প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠে সংগঠনটিন নেতা কর্মীরা। সারাদেশ
টানটান চোখে তাকিয়ে ছিল পেকুয়ার দিকে। হয়তো পেকুয়া বড় ধরনের সহিংসতা হবে।
যেমনটি হয়েছিল,সিলেটে। ইলিয়াস আলী গুম হবার পর। কিন্তু না। দু'একটা বিচ্ছিন্ন
ঘটনা ছাড়া তেমন কিছুই ঘটেনি পেকুয়ায়। তার পিছনের কারণ সবার অজানা। কিন্তু তা
সবার জানা প্রয়োজন, ইউএনও মারুফুর রশিদ খাঁনই ছিলেন সেই কারণটি। শক্ত হাতে
নিজেই সামাল দিয়েছেন সব। পুলিশ- বিজিবি সাথে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন
মাঠে থেকে।
২০১৫সালের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সারাদেশে চলা সহিংসতার প্রভাব পেকুয়ায় না পরার
পিছনেও তার সাহসী ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। এরপর ২০১৬সালের ৩০মার্চ কোন বড়
রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সম্পন্ন করলেন স্থানীর সরকার নির্বাচন।
জনসাধারণের পাশে থেকে উপকার করতে পারাটা বড়ই ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু তা মনে
হয় হারাতে বসেছেন তিনি। এডিসি'র চেয়ারে বসে হয়তো ফাইলে বন্দি করে হয়ে যাবে তার
জীবন।
এতক্ষণ ইউএনও মারুফুর রশিদ খাঁন'কে নিয়ে অনেক বিশ্লেষণই করলাম আমি।
তবে ব্যক্তি মারুফুর রশিদ খাঁন'কে নিয়ে বিশ্লেষণটা তার মুখ থেকে প্রত্যক্ষভাবে
শোনা শুধুমাত্র দুটি বাক্যসহ আপনাদের জন্য রেখে গেলাম।
'দেশের সাধারণ মানুষের করের টাকায় উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত একজন সরকারী কর্মকর্তা
আমি মারুফুর রশিদ খাঁন।'
'আমার সকাল বিকেল তাদের জন্যই, যাদের ঘামর্জিত টাকার থেকে আমার বেতন চলে।'
এমন কথা যার মুখ থেকে বের হয়, সে মানুষ হিসেবে কেমন হতে পারে?
ইমরান হোসাইন
লেখক ও সাংবাদিক।
মোবাইল- 01824420820
ইমেইল[email protected]