ডেন কলেজের ছাত্রী মানছুরা আক্তারের (ছদ্মনাম) বিয়ে হয় অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়ার সময়। স্বামী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। বিয়ের পরই বদলে যেতে থাকেন মানছুরা। বাবার বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন। একসময় স্বামী-স্ত্রী দু’জন আমেরিকায় যাওয়ার কথা বলে বাড়ির সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। কবে কোন ফ্লাইটে তারা আমেরিকায় গেছে সেই তথ্যও জানতে পারেনি মানছুরার বাড়ির লোকজন। গুলশান হামলার পর তার বাবা রাজধানীর কলাবাগান থানায় এ ব্যাপারে একটি জিডি করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, মূলত জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে স্বামী-স্ত্রী দু’জনই বাড়ি ছেড়েছে। উগ্রপন্থীদের ভাষায় এই বাড়ি ছাড়ার বিষয়টি কথিত ‘জিহাদ’-এর অংশ। তারা ধরেই নিয়েছেন এই পথে তাদের মৃত্যু হতে পারে। স্বামীর মৃত্যুর পর ওই মানছুরাকে কে বিয়ে করবে সেটা আগে থেকেই ঠিক করা। একইভাবে বিভিন্ন সময়ে হামলা করতে গিয়ে কিংবা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জঙ্গিদের কেউ নিহত হলে তার স্ত্রীকে কে বিয়ে করবে, সেটাও আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকে।
দৈনিক যুগান্তরে উঠে আসা এক প্রতিবেদনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একজন কর্মকর্তা জানান, নিষিদ্ধ সংগঠনের এসব সদস্য কৌশলে নারীদের ঘরছাড়া করে। তাদের ভাষায় একে বলে ‘হিজরত’। এই কথিত হিজরত করা নারীদের জঙ্গি নেটওয়ার্কের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ তারা জঙ্গি কর্মকাণ্ডের অনেক খবর রাখে। আর এ কারণেই স্বামীর মৃত্যুর পর তাদের নিজেদের (জঙ্গি) নেটওয়ার্কের বাইরে যেতে দেয়া হয় না। এটি নিশ্চিত করতেই কোনো নারী জঙ্গির স্বামী (জঙ্গি) পুলিশের হাতে ধরা পড়লে কিংবা নিহত হলে তার দায়িত্ব কে নেবে সেটা আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকে। একইভাবে ওই নারীর দ্বিতীয় স্বামী মারা গেলে আবার তৃতীয় জনের (জঙ্গি) কাছে তাকে বিয়ে দেয়া হয়। এক্ষেত্রেও ওই জঙ্গি নারীর দ্বিতীয় স্বামী বিয়ের পরপরই নির্ধারণ করে রাখে মৃত্যুর পর কার সঙ্গে তার স্ত্রীর বিয়ে হবে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ওই নারী চাইলেও অন্যত্র বিয়ে করতে পারে না। সে অন্যত্র বিয়ে করলে তাদের নেটওয়ার্কের অনেক খবর বাইরে ফাঁস হওয়ার আশংকা থেকেই তারা এমনটি করে থাকে।
সম্প্রতি টাঙ্গাইলের কালিহাতী থেকে রোজিনা বেগম, সাজিদা আক্তার ও জান্নাতি ওরফে জেমিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাজিদার স্বামী নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক নজরুল জেএমবির সদস্য। তিনি পঞ্চগড়ের পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর রায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী, রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি ও মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যাকাণ্ডে জড়িত। তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ।