কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় স্থাপিত দেশের অন্যতম বৃহৎ বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১০ বছরেও উৎপাদনে যেতে পারেনি। এরই মধ্যে কেন্দ্রের মূল্যবান যন্ত্রপাতি, ব্যাটারি ও দুই পাশে স্থাপিত ৫০টি বায়ুকলের (উইং টারবাইন) অধিকাংশের পাখা সাগরে প্লাবিত হয়ে গেছে। অথচ এখানকার প্রতিটি বায়ুকল থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হওয়ার কথা ছিল। কুতুবদিয়া উপকূলে ভাঙা বেড়িবাঁধের পুনর্নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হওয়া এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের নানা ত্রুটির কারণে এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো), কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পটি চালু করার জন্য এর আগে ঢাকা থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পরিচালক নকশা ও পরিদর্শন-২) পরিচালক এএইচএম কামালের নেতৃত্বে ওই দলে ছিলেন বোর্ডের ব্যবস্থাপক জামিল আহমদ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং গবেষণা ও উন্নয়ন পরিদপ্তরের পরিচালক আহমেদ জহির খান ও কক্সবাজারের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল আলম।
তিনি বলেন, ‘অচল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পাশে দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট এক কিলোমিটারের বাঁধ ভাঙা পড়ে থাকায় আটটি বায়ুকল অরক্ষিত পড়ে রয়েছে। এটি সংস্কার না করায় কেন্দ্রটি ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ‘বিপুল অর্থ খরচ করেও দীর্ঘ ১০ বছরে উৎপাদনে যেতে পারেনি কুতুবদিয়া বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রটি। তাহলে কার স্বার্থে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে?’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে দ্বীপের আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের তাবলেরচর গ্রামে পাউবোর বেড়িবাঁধের পাশে পাইলট প্রকল্প হিসেবে সরকার প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করে। ২০০৮ সালের ১৪ মার্চ প্রকল্পটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ উপজেলা সদরের সাত শতাধিক গ্রাহককে সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিন পর যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ওই বছরের ১৪ জুলাই জলোচ্ছ্বাসে কেন্দ্রের পাশে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান জানান, বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রটি রক্ষার জন্য পাউবো ৩৯ কোটি টাকার তিনটি প্রকল্প হাতে নেয়। বর্তমানে ২৬ কোটি টাকার দুটি প্রকল্পের ২ হাজার ২০০ মিটার বাঁধের কাজ শেষ পর্যায়ে। ১৩ কোটি টাকার বাকি একটি প্রকল্পের ১ হাজার ১০০ মিটার বাঁধের কাজ আইনগত জটিলতায় আটকে আছে।
তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালতে মামলা-সংক্রান্ত জটিলতায় ভাঙা বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ করা যাচ্ছে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মামলার কারণে উচ্চ আদালত তিন মাস নির্মাণকাজ স্থগিত রাখেন। এর বিরুদ্ধে আমরা আপিল করেছি। রায় পক্ষে এলে আগের দরপত্র বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে ভাঙা বাঁধ দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হবে।’
কক্সবাজার ভিশন
পাঠকের মতামত