স্কুলছাত্র আদনান তার বাবার কাছে বায়না ধরেছে এবার ঈদে তাকে ‘বাহুবলী’ পাঞ্জাবি কিনে দিতে হবে। প্রথম রমজান থেকে আদনার তার বাবাকে তাড়া দিচ্ছে। বাবা শফিকুর রহমান তাঁর অফিস নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে, তিনি সময় করে শপিং মলে এসে ছেলের জন্য পাঞ্জাবি কিনে দিতে পারছিলেন না। সোমবার একটু আগে আগে অফিস থেকে বের হয়েছেন ছেলের পাঞ্জাবি কিনবেন বলে। তিনি এলিফ্যান্ট রোডের কয়েকটি পাঞ্জাবির দোকান ঘুরে ছোটদের ‘বাহুবলী’ পাঞ্জাবি পাচ্ছিলেন না। এতে তাঁর মনটা খারাপ হয়ে গেল। তবে তিনি হাল ছাড়লেন না। খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে চাঁদ ফ্যাশন হাউজে মিলল তাঁর কাঙ্ক্ষিত পাঞ্জাবি।
চোখেমুখে তাঁর আনন্দের আভা। কৌতূহলবশত বিষয়টি নিয়ে তার সাথে কথা বললে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ভাইরে কী যে কমু, প্রথম রমজান থেকে ছেলেটা ‘বাহুবলী’ ‘বাহুবলী’ কইয়া পাগল কইরা লাইছে। ওর বন্ধুরা নাকি ‘বাহুবলী’ কিনছে, হেরলাইগা হেরেও কিনতে হইবো। ঈদে নাকি সব বন্ধু মিলা ম্যাচ কইরা পরবো। কী জামানা আইলো রে ভাই!’
রাহাত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি ফ্যাশন সচেতন মানুষ। প্রত্যেক ঈদেই তাঁর পাঞ্জাবি কালেকশানে ভিন্ন কিছু রাখার চেষ্টা করেন। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে বসুন্ধরা শপিং মলে এসেছেন পাঞ্জাবি কিনতে। কয়েক দোকান ঘুরে তাঁর পছন্দ হলো কালো রঙের ‘রইস’ কাবলি স্যুট।
রাহাত ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ঈদে পাঞ্জাবি হইতে হইবো সেই লেভেলের। আমি শাহরুখ খানের খুব ভক্ত, তাই শাহরুখের ‘রইস’ ছবির কালো রঙের কাবলি সুটটা খুব পছন্দ হইছে। ছবিটা দেখার পরই ঠিক কইরা লাইছি এবার ‘রইস’ কাবলি স্যুট বানামু, ভালোই হইছে রেডিমেট পাইয়া গেছি। কষ্ট কইরা কাপড় কিননা বানাইতে হইবো না।’
এবার ঈদকে সামনে রেখে তরুণদের বাহারি নামের সব পাঞ্জাবি এসেছে বাজারে। ‘বাহুবলী’, ‘সুলতান’, ‘রইস’, ‘পিকে’, ‘টিউবলাইট’সহ বিভিন্ন নামের চোখধাঁধানো পাঞ্জাবির প্রতি তরুণ ক্রেতাদের মনোযোগ বেশি দেখা গেছে।
‘বাহুবলী’, ‘সুলতান’ ও ‘রইস’ হালে মুক্তি পাওয়া হিট হিন্দি সিনেমার নাম। ভারতীয় এসব সিনেমার নামে জমকালো সব পাঞ্জাবি এই ঈদে ছেলেদের পোশাকের বাজার দখল করে আছে।
রাজধানীর অন্যতম প্রধান অভিজাত বিপণি বিতান বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, এলিফ্যান্ট রোড, সাইন্স ল্যাব মোড়, গাউছিয়া, সেজান পয়েন্ট, ইস্টার্ন মল্লিকা, ইস্টার্ন প্লাজাসহ কয়েকটি শপিং মলের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বাহারি নামের এসব পাঞ্জাবি ঘিরে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। বিক্রেতারা দাম হাঁকছেন পাঁচ হাজার, চার হাজার ও তিন হাজার টাকা। আবার একই নামের পাঞ্জাবি কোনো কোনো দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকা, ১৭০০ টাকা ও ১৫০০ টাকায়।
নাম ও দামে আলাদা হলেও পাঞ্জাবিগুলো দেখতে একই রকম। নামে ও দামে আলাদা অথচ দেখতে একই রকম কেন জানতে চাইলে চাঁদ ফ্যাশনের নাঈম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিক্রেতাদের আকর্ষণ করার জন্য এসব নাম আমরা লাগাইয়া দেই। কারণ অনেক কাস্টমার আইসা কয় বাহুবলী নাই, আমরা যদি কয় ভাই এ নামে কোনো পাঞ্জাবি নাই বিশ্বাস করে না। তাই আমরা একটা নাম দিয়া চালাইয়া দেই, ঐ নামের পাঞ্জাবিগুলাই বেশি চলে।’
বসুন্ধরা শপিং মলে ডিকজ নামের একটি পাঞ্জাবি দোকানির সঙ্গে কথা হয়। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রতি বছরই নতুন নতুন নাম আবিষ্কার হয়, মূলত এগুলো হিন্দি ছবি থেকে নেয়া। আমাদের করার কিছু নেই। ক্রেতারা যেভাবে চায় আমরাও সেভাবেই দিয়ে থাকি।’