ঢাকার পর এবার চট্টগ্রামে ‘বড়’ সমাবেশ করার কথা ভাবছে জামায়াতে ইসলামী। প্রায় এক দশক পর গত ১০ জুন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সমাবেশ করে দলটি। দীর্ঘ বিরতির পর অনুমতি পেয়ে বেশ বড় জমায়েত করে জামায়াত। সেই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামেও সমাবেশের কথা ভাবছেন দলটির নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তেমন ইঙ্গিত মিলছে।
তারা বলছেন, ঢাকার সমাবেশের প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামের নেতাকর্মীদের মধ্যে। নেতাকর্মীরা দারুণভাবে উজ্জীবিত। আর সেটাকে কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রামে সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কোরবানির পর চট্টগ্রামে সমাবেশ করার লক্ষ্য নিয়ে এই প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তারা।
মহানগর জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। কেন্দ্রের নির্দেশনা পেলেই চট্টগ্রামে ঢাকার মতো সমাবেশ আয়োজন করতে পারব।’
কবে নাগাদ এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। দিনক্ষণের বিষয়ে এখনও কিছু বলা হয়নি। যখন বলবে তখনই সমাবেশ করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।’
একই বক্তব্য চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আলাউদ্দিন সিকদারের। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘খুব শিগগিরই আমরা চট্টগ্রামেও বড় কর্মসূচি দেব। কেন্দ্রের নির্দেশনা পেলে প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে সেটি বাস্তবায়িত হবে।’
দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্য সমাবেশ করার আগে সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এতদিন সরকার আমাদের রাজনীতি করার সবরকম অধিকার হরণ করেছে। আমাদের দলীয় সভাও করতে দেওয়া হয়নি। আমরা মনে করছি, এখন সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে। তা ছাড়া দমনপীড়ন করে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার সুযোগ নেই। এটি একটি আদর্শিক সংগঠন। ঢাকার সমাবেশে এটি প্রমাণ হয়েছে। এত কিছুর পরেও জামায়াত কতটা সুসংগঠিত সেটা সেদিন সবাই দেখেছে। চট্টগ্রামেও আমরা প্রশাসনের একই অবস্থান আশা করব।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াতের এক কর্মপরিষদ সদস্য জানান, কোরবানির ঈদের পর চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় সমাবেশ করার লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
জামায়াতের ওয়ার্ড পর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, ‘দলের উচ্চপর্যায় থেকে আমাদের বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে। সেই নির্বাচনের জন্য সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।’
২০১২ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর থেকে জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিকভাবে কার্যত কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট দলটি নিবন্ধন বাতিল করেন হাইকোর্ট। ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
নিবন্ধন না থাকায় সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি দলটি। গত ১০ জুন রাজধানীর সমাবেশে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেন নেতারা। সেই সঙ্গে দলের তিন দফা দাবি তুলে ধরেন।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্মসূচি শেষ করা, বিশৃঙ্খলা না করা এবং মিলনায়তনের বাইরে না যাওয়ার শর্তে ঢাকা মহানগর পুলিশ জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেয়। সবশেষ ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মতিঝিল সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছিল জামায়াত।
এরপর বহুবার সমাবেশ ও মিছিলের ডাক দিয়েও নির্বিঘ্নে তা শেষ করতে পারেনি। বিভিন্ন সময় ঝটিকা মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দিয়েছে, দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে। সেসব কর্মসূচি থেকে অনেক নেতাকর্মীকে আটকও করা হয়। সুত্র : প্রতিদিনের বাংলাদেশ