সোমালীয় জলদস্যুদের হাতে জিম্মিদের উদ্ধারে দুটি যুদ্ধজাহাজ প্রাথমিক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। জাহাজ দুটি এমভি আবদুল্লাহকে অনুসরণ করলে জিম্মি নাবিকদের দিকে অস্ত্র তাক করে জলদস্যুরা। ফলে সরে আসতে হয় তাদের।
তবে গারকাড উপকূলে নোঙর করা এমভি আবদুল্লাহর নাবিকেরা এখন সুস্থ আছেন। চট্টগ্রামে পরিবারের কাছে এক নাবিকের পাঠানো অডিও বার্তা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সোমালিয়ার গারকাড উপকূল থেকে প্রায় ৭ নটিক্যাল মাইল দূর সমুদ্রে নোঙর করানো হয় এমভি আবদুল্লাহকে। এসময় জলদস্যুরা জাহাজটিকে দ্বিতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। এর আগে ইউরোপীয় ও ভারতীয় দুটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে অনুসরণ করলে জলদস্যুরা নাবিকদের মাথায় অস্ত্র তাক করে। এসময় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছোড়ে তারা। তাই জিম্মিদের ক্ষতির আশঙ্কায় পিছু হটে যুদ্ধজাহাজ দুটি।
জাহাজটিতে জিম্মি এক নাবিক জানিয়েছেন, নোঙর করার পর নাবিকদের প্রথমবারের মতো কেবিনে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এছাড়া একসঙ্গে ইফতার ও নামাজ পড়ার সুযোগও দিয়েছে জলদস্যুরা। পরিবারের সঙ্গে কথা বলার অনুমতিও পেয়েছেন বেশিরভাগ নাবিক।
ওই নাবিক বলেন, ‘গতকাল একটা নেভি জাহাজ আসছিল। আজও একটা নেভি জাহাজ আসছে। মোট দুটি জাহাজ মিলে আমাদের রেসকিউ করতে চেয়েছিল। কিন্তু এটা সম্ভব নয়। কারণ তারা তখন আমাদের জিম্মি করে রাখে, মাথায় বড় বড় অস্ত্র তাক করে। দুটি বড় বড় ফ্রিগেট আসছিল। সব ইকুইপমেন্ট নিয়ে। কিন্তু তারা (জলদস্যুরা) এসবে ভয় পায় না। কারণ তারা আমাদের জিম্মি করে রাখে। আমাদের মাথায় গুলি ধরে রাখে। আমাদের তারা রেস্ট্রিকটেড করে রাখে। তবে এখন পর্যন্ত হার্ট (আঘাত) করেনি। সবাই একটা রুমে (ব্রিজে) ঘুমাচ্ছি। একটা ওয়াশরুম ব্যবহার করছি। এভাবে আমাদের অভ্যাস নেই। যখন ঘুমাতে যাই, দেখা যায় বড় বড় অস্ত্র তাক করে আছে। এভাবে কী ঘুম আসে? যা হওয়ার হচ্ছে আরকি।’
এদিকে, নাবিকদের জিম্মি দশার পাশাপাশি শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পানি ও খাবারের সংকট। তাদের সঙ্গে প্রতিবেলায় ভাগ বসাচ্ছে অন্তত ৩০ জন জলদস্যু।
ওই নাবিক আরও বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ এখনো খাবার আছে। তারা (জলদস্যুরা) আমাদের সঙ্গে খাচ্ছে। পানি ব্যবহার করছে। তাই আমাদের এ খাওয়া কতদিন যায় বলা যাচ্ছে না। ১০-১৫ দিন বড়জোর যেতে পারে। এরপর যখন খাবার শেষ হযে যাবে, তখন আমরা খুব সমস্যায় পড়ে যাবো।’
জিম্মি জাহাজের ওই নাবিক আরও বলেন, ‘আজ আমরা সোমালিয়া আসলাম। আসার পর তাদের (জলদস্যুদের) সঙ্গে আমাদের একটা ভালো সম্পর্ক হয়েছে। বলে-কয়ে একটু কেবিনে আসলাম। সবাইকে দোয়া করতে বলিও। আল্লাহ যেন এটা সহজ করে দেয় রোজার উসিলায়। ইনশাআল্লাহ, আমরা আশা করি ঈদের আগেই পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবো। মানসিকভাবে যতদিন শক্ত থাকা যায়। তোমরাও ভালো থাকিও, সবাইকে দোয়া করতে বলিও। আমরা যেন নিরাপদে আসতে পারি। আমরা ব্রিজে (জাহাজের ডেক) বসে বসে সবাই আল্লাহ আল্লাহ করি আরকি। সবাই আল্লাহকে ডাকি। আল্লাহ আমাদের ডাক শুনবে ইনশাআল্লাহ।’
জাহাজটিতে দস্যুদের সঙ্গে আছেন একজন অনুবাদক। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মুক্তিপণ বিষয়ক কোনো আলোচনা শুরু হয়নি বলেই জানিয়েছেন নাবিকরা।