১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সমুদ্রশাসিত কক্সবাজার বিমানবন্দর। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৩ সালে শেষ হচ্ছে বিমানবন্দরের রানওয়ে নির্মাণ কাজ। তখন সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে দিবারাত্রি উঠানামা করতে পারবে বিমান। কাজ শেষ হলেই এটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় দীর্ঘতম রানওয়ে।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী চীনা প্রতিষ্ঠান বলছে- নানা প্রতিকূলতার মাঝেও নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। আর এ বছরের মধ্যেই সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে বিমান ওঠানামা করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সাগরের বুক চিরে আকাশ পানে ছুটে চলা। উত্তাল সাগরকে বশে এনে এমন কর্মযজ্ঞ আগে দেখেনি বাংলাদেশ। অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক মাসের। এরপরই প্রস্তুত দেশের সবচেয়ে বড় রানওয়ে, সমুদ্র ছুঁয়েই ওঠানামা করবে বিমান। অবতরণের সময় যাত্রীদের মনে হবে, যেন সাগরেই নামতে যাচ্ছেন তারা। এমন ব্যতিক্রমী অনুভূতি দেয়ার পাশাপাশি, কয়েক মাসের মধ্যেই বিশ্বের দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরগুলোর তালিকায় স্থান পেতে যাচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দর। এরইমধ্যে প্রকল্পের ৯০ ভাগ কাজ প্রায় শেষ।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী চীনা কোম্পানি জানিয়েছে, নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করবেন তারা।
কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক লি গুয়াংচি বলেন, সমুদ্রের বুকে রানওয়ে প্রকল্পের কাজটা সহজ ছিল না। ২০২১ সালে কাজ শুরুর পর থেকে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। বিশেষ করে করোনাকাল, এরপর শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তারপর উত্তাল সাগরকে বশে আনাসহ নানা জটিলতা। কিন্তু সবকিছু মোকাবিলা করে রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজ চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে সমুদ্রের বুকে রানওয়ে। আরও কিছু কাজ রয়েছে যা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে শেষ করা হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুধু সূর্যের আলোতে আকাশপথে কক্সবাজার যাওয়ার দিন শেষ হচ্ছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে রাতেও যাত্রী নিয়ে উড়োজাহাজ অবতরণ ও উড্ডয়ন করবে। এতদিন বিমানবন্দরটির রানওয়ের দৈর্ঘ্য কম ও অন্যান্য অবকাঠামো অনুন্নত থাকায়, সব ধরনের বিমান চলাচল করতে পারত না। তাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা বিদেশি পর্যটকদেরকে ঢাকা হয়ে কক্সবাজার যেতে হত। এর ফলে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হত তাদেরকে।
এসব ভোগান্তি দূর করার জন্য রানওয়ে এবং টার্মিনাল ভবন সম্প্রসারণের মাধ্যমে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করতে ২০১২ সালে একটি মাস্টার প্ল্যান গ্রহণ করে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু জায়গা না থাকায় রানওয়ে সম্প্রসারণ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। শেষপর্যন্ত দৃষ্টিনন্দন করার পরিকল্পনা থেকে সমুদ্র সৈকতের ভেতরেই রানওয়ে করার সিদ্ধান্ত হয়।
অবশেষে নানারকম প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ২০২১ সালে শুরু হয় বিশাল কর্মযজ্ঞ। যার জন্য প্রথমে সমুদ্রের তলদেশে ব্লক নির্মাণ করা হয়। বিশাল ঢেউ থেকে সুরক্ষা দিতে কংক্রিট ফেলে গড়ে তোলা হয় বাঁধ। তারপর সেটির ভেতরে বানানো হচ্ছে স্থাপনা। দেশে এই প্রক্রিয়ায় এবারই প্রথম কোন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।
এদিকে গত সোমবার (২৪ জুলাই) দুপুরে কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে যান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। ঘণ্টাব্যাপী তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করেন এবং প্রকল্প কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
মো. মফিদুর রহমান বলেন, সাগরের পানি নিষ্কাশন করে জমি ভরাটের মতো চ্যালেঞ্জ, করোনার দুর্যোগ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সব বাধা পেরিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হবে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে আছে। এখন ভবনের ভেতর ইমিগ্রেশন, বোর্ডিং পাস, লাউঞ্জের কাজ করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৯০ শতাংশের বেশি। আশা করছি, চলতি বছরের মধ্যেই সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে নির্মিত রানওয়ে দিয়ে বিমান ওঠানামার করবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ২.৭৪ কিলোমিটার। সম্প্রসারণ কার্যক্রম শেষে আধা কিলোমিটার বেড়ে, নতুন দৈর্ঘ্য হবে ৩.২ কিলোমিটার। দৃষ্টিনন্দন এ রানওয়েটি হবে উপমহাদেশের এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সমুদ্র শাসন করে তৈরি করা প্রথম রানওয়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। সুত্র: ঢাকামেইল
পাঠকের মতামত