পরীক্ষার সকালে ফেইসবুকসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্ন-উত্তর ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় কেন্দ্রে প্রবেশের সময় সীমায় কঠোর হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেউ কেন্দ্রে প্রবেশ না করলে তাকে আর পরীক্ষাকক্ষে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের সভাপতিত্বে বুধবার সচিবালয়ে এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, “আসন্ন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে অবশ্যই পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। অন্যথায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না।”
নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
আগামী ১ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসএসসি ও সমমানের তত্ত্বীয় বিষয়ের পরীক্ষা হবে।
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে পাবলিক পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকা বাধ্যতামূলক করার কথা গত বছরের ২৪ অক্টোবর জানায় সরকার।
গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা থেকে নতুন এই নিয়ম কার্যকর করা হলেও ওই পরীক্ষায় যারা পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পরেও কেন্দ্রে গিয়েছিল তাদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়েছে।
পরীক্ষার সকালে ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রের সামনে গিয়ে দেখা যায় জটলা ধরে মোবাইলে প্রশ্ন ও তার উত্তরে চোখ বোলাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ওই প্রশ্নই পরীক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে হুবুহু মিলে যেতে দেখা যায়।বিনা পয়সায় বিভিন্ন ফেইসবুক পেইজ ও গ্রুপে প্রশ্নোত্তর ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
প্রশ্ন ফাঁস ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে পরীক্ষার সকালে কেন্দ্র থেকে, আর তা করছেন শিক্ষকরা।
এই প্রেক্ষাপটে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ বাধ্যতামূলক করা হল।
প্রশ্ন ফাঁস রোধে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে সভায় প্রশ্নব্যাংক প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্নপত্র বহনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা টেপযুক্ত বিশেষ খামে পরিবহনের ব্যাপারে আলোচনা হয়।
“বহু সেট প্রশ্ন প্রস্তুত রাখা, নির্ধারিত সময়ের আগে প্রশ্ন না খোলা, পিন কোড ব্যবহার, অনলাইনে বা ইউএসবি ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্ন পাঠানো এবং পরীক্ষা শুরুর আগে থেকে কিছু সময়ের জন্য কেন্দ্র এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ রাখার ব্যাপারেও সভায় আলোচনা হয়।”
সভায় জানানো হয়, পরীক্ষাকেন্দ্রে কেউ স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে পারবে না। শুধু কেন্দ্র সচিব একটি সাধারণ ফোন ব্যবহার করতে পারবেন।
সচিব সোহরাব বলেন, আসন্ন এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সম্পূর্ণ নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠানে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে সচিব সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমদ, মোল্লা জালাল উদ্দিন, জাবেদ আহমেদ ও মোহাম্মদ জয়নুল বারী, জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী নাজির হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটের ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ রবিউল কবির চৌধুরী প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন।