চট্টগ্রাম: ছোটকাল থেকেই অভাবকে সঙ্গে নিয়ে বেড়ে ওঠা নোমান ইসলামের। সেই ছেলেটাই হাজার হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ৪৯ তম হয়েছে। এবার ভর্তি হয়ে স্বপ্নপূরণের দোড়গোড়ায় পৌঁছানোর পালা। কিন্তু স্বপ্নপূরণের প্রাক্ষালে দাঁড়িয়েও বাঁধা হয়ে দাঁড়াল সেই অভাব। ঢাবিতে ভর্তি হতে লাগবে সবমিলিয়ে ১২ হাজার টাকা। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা-সেখানে ‘এত টাকা’ পাবে কোথায় নোমানের পরিবার?
সম্প্রতি গণমাধ্যমে বেরোনো নোমানের স্বপ্নপূরণে বাধা হয়ে দাঁড়ানো সেই অভাবের কথা ছুঁয়েছে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) নুরে আলম মিনাকে।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) নিজ বাড়ি মিরসরাই থেকে নোমানকে স্থানীয় থানার উপপুলিশ পরিদর্শক তফিকুল ইসলামের মাধ্যমে ডেকে আনেন পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা। পরে এসপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে নোমানকে ব্যক্তিগতভাবে নগদ ১০ হাজার টাকা সহায়তা দেন।
সূত্র জানায়, সন্তানের স্বপ্নপূরণের সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে সহায়তা চাচ্ছিলেন নোমানের বাবা আলমগীর হোসেন। এক ব্যক্তি নোমানকে ছয় হাজার টাকা দিয়েছিল। এর মধ্যে পোশাক তৈরি করতে কিছু টাকা খরচ হয়ে যায়। বাকি টাকাটা ঢাবিতে যাতায়াতের জন্য রেখেছিল মামুন। কিন্তু এতদিন এখানে ওখানে ঘোরাঘুরি করেও ভর্তির পুরো টাকা জোগাড় হচ্ছিল না নোমানের। তাই দুশ্চিন্তায় ছিল নোমানের পুরো পরিবার। পুলিশ সুপারের ১০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদাণ আপাত সেই চিন্তা দূর হলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেন, ‘অভাবের সঙ্গে লড়াই করে ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েও একটা ছেলে টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছে না-গণমাধ্যমে এমন প্রতিবেদন পড়ে সত্যিই অবাক হয়েছিলাম। তাই মানবিকতার তাড়না থেকে নোমানের পাশে দাঁড়ালাম। আশা করছি সে ভালোভাবে ঢাবিতে ভর্তি হতে পেরে তার স্বপ্নপূরণে এগিয়ে যেতে পারবে।’
মিরসরাই উপজেলার আবুতোরাব পশ্চিম মায়ানী এলাকার আলমগীর হোসেন ও জ্যোৎস্না আরা বেগম দম্পত্তির দুই সন্তানের মধ্যে ছোটজন নোমান ইসলাম। তিনি ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় শফিউল আলম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পান। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজ থেকে একই বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পান। এরপর সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাবির ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১৬২ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় ৪৯ তম হন নোমান।
নোমানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ সুপারের কাছ থেকে সহায়তা নেওয়ার পরে নোমান সেখানে জানিয়েছেন এর মধ্যে দিয়ে তার ও পরিবারের দুশ্চিন্তা দূর হলো। এবার ঢাবিতে ভর্তিতে তার আর কোনো বাধা রইল না। তিনি পুলিশ সুপারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পাঠকের মতামত