নিউজ ডেস্ক::
অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হচ্ছে। আর চাকরিতে ফিরতে পারছেন না আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার। চরম বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে। ইতিমধ্যেই তার পদত্যাগপত্র পৌঁছে গেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায়। এখন শুধু অপেক্ষা সিদ্ধান্তের। মন্ত্রণালয়ের পদস্থ একজন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে এসপি বাবুল আক্তার চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে পদত্যাগপত্র দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি যুগান্তকে বলেছেন, তিনি পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত আছেন।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, দুর্বৃত্তদের হাতে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুন হওয়ার ১৯ দিনের মাথায় ২৪ জুন গভীর রাতে এসপি বাবুল আক্তারকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তুলে নেয় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে তাকে টানা ১৫ ঘণ্টা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়। ওই সময় বাবুল আক্তারের কাছ থেকে একটি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর রাখা হয় বলে মিডিয়ায় খবর প্রকাশ হয়। বিষয়টি এসপি বাবুল আক্তারের ঘনিষ্ঠ এক স্বজন যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, পদত্যাগপত্রে কারণ হিসেবে উল্লেখ ছিল, স্ত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে এ মুহূর্তে তার চাকরি করার মতো মানসিক অবস্থা নেই।’ তবে বাবুল আক্তার স্বেচ্ছায় ওই পদত্যাগপত্রে সই করেননি বলে দাবি করেন তিনি। সূত্র বলেছে, ওই পদত্যাগপত্রটি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় নিষ্পত্তির জন্য রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, এতদিন যেসব গুজব ডালপালা মেলেছিল, তা সত্যি হতে চলেছে। এখন শুধু সিদ্ধান্তের অপেক্ষা। তবে এসপি বাবুল আক্তারও শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বুধবারের পর বৃহস্পতিবারও তিনি পুলিশ সদর দফতরে গিয়ে দিনভর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছেন। তবে তার সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। শীর্ষ কোনো কর্মকর্তা তাকে দেখা দেননি। শেষমেশ তিনি ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে বিলম্বে যোগদানের কারণ লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী বদলি হয়ে আসা কোনো কর্মকর্তাকে সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট শাখায় (প্রশাসন) যোগদানপত্র দেয়ার কথা। তবে গত দুই দিন তিনি পুলিশ সদর দফতরে গেলেও সংশ্লিষ্ট শাখায় যাননি বলে ওই শাখার একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, নতুন কর্মস্থলে যোগদান এবং বিলম্বে যোগদানের কারণ ব্যাখ্যা করতে যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী একজন কর্মকর্তাকে সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির আর্টিকেল-৪৭ অনুসরণ করতে হয়। এসপি বাবুল আক্তার তা করেননি।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার বৃহস্পতিবার টেলিফোনে যুগান্তরকে জানান, তিনি অনেক আগে থেকেই পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত আছেন। তার নির্ধারিত কোনো অফিস কিংবা কাজ নেই। আর যেহেতু পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত আছেন, তাই নতুন করে যোগদানের প্রশ্ন নেই। তবে নিয়ম অনুযায়ী তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন মাত্র।
পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অফিসে আসেন এসপি বাবুল আক্তার। তিনি নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলায় তার এক সহকর্মী (২৪তম বিসিএস ক্যাডারের) কর্মকর্তার কক্ষে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকেন। এখানে বসেই শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য দফায়-দফায় চেষ্টা করেন। তবে ব্যর্থ হয়ে শেষমেশ ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি পান। পরে তিনি ওই কর্মকর্তার কাছে গিয়ে দেরিতে যোগদানের কারণ ব্যাখ্যা করে হাতে লেখা একটি চিঠি দেন। এরপর পৌনে ৪টার দিকে তিনি সদর দফতর ছেড়ে যান।
এর আগে দুর্বৃত্তদের গুলিতে স্ত্রী খুন হওয়ার ৫৮ দিন পর বুধবার প্রথম পুলিশ সদর দফতরে যান আলোচিত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টায় পুলিশ সদর দফতরে গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থানের পর তিনি কিছুটা নিভৃতেই সেখান থেকে চলে যান। এদিকে এ পুলিশ কর্মকর্তা কর্মস্থলে যোগদান করছেন- এমন খবরে মিডিয়াকর্মীরা জড়ো হন সদর দফতরে। কিন্তু পুলিশের পদস্থ কোনো কর্মকর্তা এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
বাবুল আক্তারের নতুন কর্মস্থলে যোগদান করা না করা নিয়ে পুলিশ সদর দফতরে দিনভর চলে এক ধরনের নাটক। দু-একটি অনলাইন মিডিয়া ও বেসরকারি টেলিভিশনে বাবুল আক্তারের যোগদানের খবরটি ‘ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবে প্রচারও করে। তবে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (মিডিয়া) একেএম শহিদুর রহমান যুগান্তরকে এসপি বাবুল আক্তার কর্মস্থলে যোগ দেননি বলে নিশ্চিত করেন।
প্রসঙ্গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন এসপি বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। ঘটনার সময় বাবুল আক্তার নতুন কর্মস্থলে (পুলিশ সদর দফতর) যোগ দিতে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। স্ত্রী হত্যার খবর পেয়ে তিনি চট্টগ্রাম ছুটে যান। এ ঘটনায় দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাবুল আক্তার অজ্ঞাত পরিচয় তিন ব্যক্তিকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কয়েকজন ওই ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতে মিতু হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা হিসেবে নাম এসেছে কামরুল সিকদার ওরফে মুছার। আর এ মুছা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের বিশ্বস্ত সোর্স।
মিতু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মুছার জড়িয়ে পড়ায় এবং বেশকিছু তথ্য মেলায় বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। এ প্রেক্ষিতে ২৪ জুন রাতে এসপি বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ি থেকে তুলে নেয়ার পর শুরু হয় নানা গুঞ্জন। জিজ্ঞাসাবাদের নামে প্রায় ১৫ ঘণ্টা তাকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। পরে তাকে বাসায় পৌঁছে দেয়া হলেও দীর্ঘদিন চাকরিতে যোগদান না করে এক প্রকার স্বেচ্ছাবন্দি জীবনযাপন করতে থাকেন তিনি। আর এতেই জনমনে নানা সন্দেহের ডালপালা মেলতে থাকে। সুত্র: যুগান্তর