অসুস্থ বোধ করছেন এসপি বাবুল আক্তাযানর। তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যার ঘটনায় বাবুলকে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে টানা ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর বাসায় ফেরার পর থেকে বাবুল অনেকটাই অসুস্থ বোধ করছেন। তার মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে। জানা গেছে, হঠাৎ তা বেড়ে গেছে। এজন্য গতকাল রবিবার সারা দিন তিনি শ্বশুরবাড়িতে বিশ্রামে ছিলেন।
বাবুল আক্তারের শ্বশুরবাড়ি রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া ভূঁইয়াপাড়ায়। জানা যায়, গতকাল বাবুল বাড়ির বাইরে বের হননি। কথা বলেননি গণমাধ্যমকর্র্মীদের সঙ্গে। কাউন্সেলিং ও শারীরিক সুস্থতার জন্য আজ সোমবার তাকে ধানমণ্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হতে পারে। গতকাল বিকেলে এসব তথ্য জানিয়েছেন এসপি বাবুল আক্তারের নিকটজনরা।
তারা আরও জানান, সদ্য মা-হারা ছোট্ট আক্তার মাহমুদ মাহি (৭) ও তাবাসসুম তাজনীন তাপুকে (৪) সামলাতে তাদের অনেকটাই বেগ পেতে হচ্ছে। ক্ষণে ক্ষণে তারা মায়ের কাছে যেতে চাইছে। কারণ, তারা এখনো জানে, তাদের মা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শিগগিরই বাসায় ফিরবেন। মায়ের শূন্যতা ভুলিয়ে রাখতে তাই পরিবারের সবাই সময় দিচ্ছেন অবুঝ শিশু দুটিকে। স্বজনরা পালা করে তাদের নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছেন; মায়ের কথা ভুলিয়ে রাখতে ওদের সঙ্গে বসে টিভিতে কার্র্টুন দেখছেন; মোবাইল ফোনে ভিডিও গেমস খেলছেন।
শুক্রবার রাতে বাবুল আক্তার বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় টের পায়নি মাহি ও তাবাসসুম। কিন্তু পরদিন ভোরে বাবাকে দেখতে না পেয়ে কান্না জুড়ে দেয় তারা। বিকেলে বাবা ফিরে এলে যেন প্রাণ ফিরে পায় শিশু দুটি। খুনসুঁটি আর তাদের নানা বায়না মেটাতে তখন সচেষ্ট ছিলেন বাবুল আক্তার।
এদিকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের জন্য বাবুল আক্তারের শ্বশুর অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনের বাসার সামনে আগের চেয়ে বেশিসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। যদিও কর্তব্যরতরা বিষয়টি স্বীকার করছেন না। গতকাল দুপুরে দায়িত্বরত পিসিআরের নায়েক শহীদুল ইসলামসহ উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা জানান, আগেও দুই শিফটে (৮ ঘণ্টা পরপর) পিসিআরের ৭ জন ও স্থানীয় থানার ২ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করতেন। এখনো একই নিয়মে তারা কাজ করছেন। তবে সবসময় সতর্ক থাকার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে তাদের ওপর। কিন্তু বাবুল আক্তারের শ্বশুরবাড়ির ভাড়াটিয়া হৃদয়সহ স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা আমাদের সময়কে বলেন, কয়েকদিন আগেও বাবুলের শ্বশুরবাড়ির সামনে কমসংখ্যক পুলিশ দেখা যেত। এখন মনে হচ্ছে আগের চেয়ে নজরদারিও অনেক বেড়েছে।
গতকাল বাবুলের শ্বশুরবাড়িতে এই প্রতিবেদকের প্রবেশকালে স্থানীয়দের মন্তব্যের সত্যতা পাওয়া গেছে। ওই ভবনে প্রবেশের আগে ৬ ফুট চওড়া একটি রাস্তা পেরুতে হয়। বিকাল ৩টার দিকে রাস্তার মোড়েই (সড়কটিতে প্রবেশের আগে) দুজন পুলিশ সদস্যের জেরার মুখে পড়েন এই প্রতিবেদক। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তারা যেতে দিলেও ফের জেরা করেন ভবনের সামনে কর্তব্যরত ৬ জন পুলিশ। পরিচয় জেনেও ‘কোথায় যাবেন?’, ‘কার কাছে যাবেন?’- এমন নানা প্রশ্ন করেন তারা। পরে বাসায় অবস্থানরত এসপি বাবুলের ছোট ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে পুলিশের দলটি এ প্রতিবেদককে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়। এ সময় ভবনের দোতলায় গিয়ে দেখা গেছে, এসপি বাবুল আক্তারের দুই সন্তান মাহি ও তাবাসসুম বল হাতে দৌড়াচ্ছে। পিছু দৌাড়াচ্ছে ৫ বছর বয়সী তাদেরই খালাতো ভাই শফিক। এই প্রতিবেদককে দেখে তারা একটু থমকে দাঁড়ালেও কেউ একজন তাদের ডেকে ভেতরে নিয়ে যান।
নাম প্রকাশ না-করার শর্তে এসপি বাবুলের এক নিকটস্বজন বলেন, মাহি ও তাবাসসুমকে হাসিখুশি রাখতে সবসময়ই আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু যখন ওদের মনে পড়ে যায় মায়ের কথা, তখন বিপদ ঘটে। সামাল দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। তবে কিছুটা প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে শিশু দুটির মধ্যে। খেলাধুলা করছে, খাচ্ছে, বেড়াচ্ছে। সকালে (রবিবার) তারা নাস্তায় পরাটা, চা, আম ও পেয়ারা খেয়েছে। দুপুরে ভাতিজা-ভাতিজির প্রিয় খাবার মুরগির মাংস, ভাত আর ডাল খেয়েছে তারা। বাবুল আক্তার কিছু খেয়েছেন কিনা? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। পুরনো মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়েছে। তাই তিনি আজ (রবিবার) রোজা রাখতে পারেননি। ঘুম থেকে উঠে সকালে ভাত আর সবজি দিয়ে নাস্তার পর্ব সেরেছেন। এরপর বিশ্রামে গেছেন। এখনো (বিকেল সাড়ে ৩টা) জাগেননি।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে বাবুল আক্তারের ছোট ভাই সাবু আমাদের সময়কে বলেন, ভাবিকে হারিয়ে এমনিতেই আমরা বড় ধরনের একটি ঝড়ের মধ্যে পড়েছি। তার ওপর কিছু বিভ্রান্তকর ও নীতিবিবর্জিত সংবাদে আমরা বিব্রত। এটা ঠিক হচ্ছে না। ছোট দুটি শিশুর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এ ধরনের প্রচার বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
এসপি বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বলেন, মিতু হত্যার তদন্ত ভিন্ন খাতে নিতেই কিছু গণমাধ্যমে মিথ্যা খবর প্রচার করানো হয়েছে বলে ধারণা করছি। কারণ আমার জামাই এমন কাজ করবে- এটা আমি বিশ্বাস করি না। এমন অভিযোগ এই প্রথম শুনলাম। এমন সংবাদ প্রচার করা কুরুচিরও পরিচায়ক। দৈনিক আমাদের সময়