সরকারী অসরকারি বলে যেমন কোন অসুখ নেই তেমনি সরকারি অসরকারি ভাইরাস বলে কোন জীবাণু নেই।ভাইরাস সকল ধর্ম, বর্ণ,গোত্র,জাতি,লিঙ্গ কিংবা বয়স চিন্তা করে আসেনা;আসে সকলের জন্য।জাতি রাস্ট্রের সীমানা ছাড়িয়ে ভাইরাস এখন বিশ্ব জয়ের উল্লাস করছে। এপর্যন্ত সারা বিশ্বের প্রায় অর্ধলক্ষেরও বেশি মানুষ কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বৈশ্বিক এই মহামারীতে বিশ্বের সব থেকে শক্তিশালী দেশ আমেরিকা থেকে শুরু করে গরীব দেশগুলোও সমান ঝুঁকিতে রয়েছে।কোন দেশ আগে আক্রান্ত হয়েছে আবার কোন দেশ হয়ত পরে হচ্ছে।রোগের বিস্তাররোধে অধিকাংশ দেশ স্বস্ব দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার মত কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে।কোন কোন দেশ টানা লকডাউনে আছে।২৬ মার্চ -২০২০ থেকে আমাদের দেশেও শুরু হয়েছে টানা সরকারি ছুটি।ছুটি হলেও তা কার্যত লকডাইনেরই নামান্তর।কিন্ত একটি বিষয়ে সব দেশেই সমান তাহল সমাজের শ্রমজীবী খেটে খাওয়া দিনমজুর,শ্রমিক,ফেরিওয়ালা রিকসাওয়ালাসহ অনেক পেশাজীবী মানুষের মানবেতর জীবন যাপন যাদের দৈনন্দিন আয়ের উপর তাদের সাংসারিক পুরো খরচাপাতি নির্ভর করে।একজন চা দোকানের কর্মচারী কিংবা মেচিয়ার তার দৈনিক বেতন আর বখশিশ দিয়ে তার সংসার চলত আর এখন সারাদেশের হাজার হাজার হোটেল বন্ধ। এতে তাদের কারো কোন কর্ম নেই;বেতন নেই সুতরাং খাবারও নেই।একই ভাবে একজন রিকসাওয়ালা যার আগে দৈনিক আয় ছিল ৫০০ টাকা এখন তা নেমে আসছে শূণ্যের কোটায়।জীবন বাচাঁতে তারা এখন স্বেচ্ছায় কিংবা বাধ্য হয়ে ঘরবন্দী।তাদের অনেকে ইতিমধ্যে বলা শুরু করছেন করোনার আগে মনে হয় না খেয়েই মরতে হবে।সমাজে আবার কিছু ভিন্ন চিত্রও দেখা মিলে এসময়ে অনেক বিত্তবানরা আবার ১/২ মাসের খাবার মজুদ করেও রাখছেন।ফলে বাজারে নিত্য পণ্যের সংকট ও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।আমরা কি পারিনা আমাদের সেই মজুদকৃত খাবারের কিয়দংশ এই অসহায় মানুষের পরিবারের প্রতি উৎসর্গ করতে।জানিনা খোদা তা'লা কার মৃত্যু কখন কিভাবে রাখছে অন্তত এই মহামারীর চূড়ান্ত সময়ে এসে নিজের খাবার পাড়া প্রতিবেশীদের সাথে একটু ভাগাভাগি করি।এই মূহুর্তে মানুষের বেশি প্রয়োজন খাদ্য সামগ্রী। সামনে আসছে রমজান মাস তখন এই খাদ্য সংকট আরো বেশি আকারে দেখা দিতে পারে।জানিনা এই বছর ঈদ উৎসব আদৌ হবে কিনা যদিও বা হয় তাও কতটা আনন্দের হবে তা অনুমান করা কঠিন হচ্ছে।নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা জরুরি যাতে নিত্য পণ্যের অযৌক্তিক মূল্য বাড়ানো না যায়।প্রয়োজনে এই বিশেষ সময়ে সকল প্রয়োজনীয় পণ্যের সর্বনিন্ম মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া যেতে পারে।এক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকাটা অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে।সমন্বিত চেস্টার মাধ্যমে একদিকে ঘাতক অদৃশ্য জীবাণুর সাথে লড়াই অন্যদিকে নিজের পরিবার পরিজনের ভরণপোষণের গুরুদায়িত্ব। এই উভয়সংকটে পারস্পরিক সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন।শহরাঞ্চলে এই সংকট আরো গভীর একদিকে কর্মহীনতা অন্যদিকে বাসা ভাড়া দেওয়ার চাপ। সমাজের যার যার অবস্থান থেকে একলা চল নীতি পরিহার করে সামষ্টিক উদ্যোগ গ্রহন করা দরকার।প্রতিটা পাড়ায় মহল্লায় দলমত নির্বিশেষে অসহায় মানুষের তালিকা হালনাগাদ করে সরকারে উপজেলা/জেলা প্রশাসনকে জমা দিন।সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বার/কাউন্সিলর/প্রতিনিধিগণ ভালোই বলতে পারবেন আসলে কারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।হয়ত দু একদিনের মধ্যে সরকারি প্রণোদনা ঘোষিত হতে পারে।তা যেন কেবল সরকারি সিদ্ধান্তঃ মোতাবেক বিতরণ হয় সেটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।প্রয়োজনে সেক্ষেত্রেও সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়া যেতে পারে।মনে রাখতে হবে এখন প্রচারণা কিংবা দূর্নীতির সময় নয়;সময় এখন জীবন রক্ষা।এযুদ্ধ অদৃশ্য ভয়ংকর শত্রুর বিরুদ্ধে। এ লড়াইয়ে জিততে হলে আমাদের সকলকে এক যোগে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।ধনী গরিব এক কাতারে দাড়াঁনো ছাড়া আর কোন বিকল্প পথ নেই।সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকে ত্রাণ কার্য পরিচালনা করছেন,তা অবশ্যই আশা ব্যঞ্জক।সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও একাজে নিজদের সম্পৃক্ত করতে পারেন।তবে সব থেকে সহজ হবে যদি মোবাইল একাউন্টের মাধ্যমে নগদ অর্থ উপকারভোগীর নিকট পৌছানো যায়।এতে একদিকে বাচঁবে সময় আরেক দিকে মানা হবে সামাজিক দূরত্ব। সব কাজ করতে হবে সরকারি নির্দেশনা মেনেই।কোন দেশের সরকার চাই না তার দেশের জনগন কস্ট পাক।জীবন বাঁচাতেই সাময়িক এই ছুটির ঘোষণা। তা আমাদের অবশ্যই শ্রদ্ধাভরে মেনে চলতে হবে।এটি কেবল বাংলাদেশে নয় পৃথিবীর অনেক দেশেই হচ্ছে ঢের বেশিই হচ্ছে। আমাদের প্বার্শবর্তী দেশ ভারতে টানা ২১ দিনের লকডাউন চলছে।তাদের দেশেও অসহায় মানুষ সাময়িক এই অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। একেই বলে বৃহত্তর স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্রতর স্বার্থের ত্যাগ।আসুন সকলে সামর্থ্য অনুযায়ী দায়িত্বশীল আচরণ করি।নিজ নিজ ঘরে থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি।নিরাপদ থাকি;নিরাপদরা রাখি।
লেখকঃ
জিয়াউর রহমান মুকুল,
মানবিক ও উন্নয়ন কর্মী,
শেড,কক্সবাজার।
ইমেলঃ[email protected]