প্রকাশিত: ২১/১০/২০১৬ ২:০৪ পিএম

ঢাকা: কিশোরগঞ্জ থেকে  সাধারণ সম্পাদকের পদ চলে যাচ্ছে নোয়াখালীতে! আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ  নিয়ে শীর্ষমহল থেকে এমন বার্তাই পাচ্ছেন কাউন্সিলররা। আর তা থেকেই ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে, কে হচ্ছেন ঐতিহ্যবাহী এই দলটির আগামী দিনের দ্বিতীয় শীর্ষ প্রধান নেতা, দলের  সাধারণ সম্পাদক।

আর এ বার্তাকেই ‘চমক’ বলছেন দলটির কাউন্সিলররা।

কমপক্ষে ১০ জন কাউন্সিলর বাংলানিউজকে বলেছেন, ‘নানা মাধ্যমে শীর্ষমহল হয়ে আসা বিশেষ বার্তা পেয়েছি। এখন অপেক্ষা কেবল ঘোষণার। আমরা আনন্দিত, আমরা খুশি’।

‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’- দলের এবারের সম্মেলনের স্লোগান টেনে একাধিক নেতা সহাস্যে বাংলানিউজকে জানান, ‘কিছু কি খুঁজে পেলেন?’

‘এখানেও মহাসড়কের কথা রয়েছে। হা হা! উন্নয়নের মহাসড়ক। আর সড়কমন্ত্রী কে? আমাদের ওবায়দুল কাদের ভাই’।

‘এই অন্ত:মিলও আর একটি আগাম বার্তা। তেমনটি হলে ছাত্রলীগের সভাপতি থেকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তারপর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, পাশাপাশি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা নোয়াখালীর সন্তান ওবায়দুল কাদেরই নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন। হতে যাচ্ছেন দলের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক’।

এমন প্রায় নিশ্চিত খবরে এখন উচ্ছ্বাস কাদেরের সমর্থকসহ আওয়ামী লীগে।

তবে নিজে থেকে ওবায়দুল কাদের এখনো কিছু বলছেন না। আবার এই পদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আগে যেভাবে নিজের নামটি ‘নাকচ’ করে আসছিলেন, তাও করছেন না।

উল্টো নেতাকর্মী, সমর্থক আর শুভানুধ্যায়ীদের শুভেচ্ছার উচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছেন কাদের।

নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে যদিও এ নিয়ে কোনো উচ্ছ্বাসের ছিঁটে-ফোটাও নেই। ওবায়দুল কাদের বন্ধ রেখেছেন ট্যাগিং অপশনও। কর্মী-সমর্থকরা উচ্ছ্বসিত হয়ে তাকে ট্যাগ করলেও তা দেখার সুযোগ নেই অন্য বন্ধুদের। কেবল কাদের ছাড়া।

তবে কর্মী-সমর্থকদের ফেসবুক পেজসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এখন সরগরম।

কাদেরই হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক- এমনটা নিশ্চিত হয়েই অনেকে অভিনন্দন আর শুভেচ্ছায় সিক্ত করছেন প্রিয় নেতাকে।

ফেসবুকে শাহনেওয়াজ খান বিপুল নামের একজন লিখেছেন, ‘জনপ্রিয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরই হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আর তা হলেই বোধ হয় পাল্টে যাবে আওয়ামী লীগের চারিত্রিক ধরন। জনসাধারণের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক থাকলো আরো নিবিড়। প্রতীক্ষা থাকলো ঘণ্টা বাজার। আর প্রার্থনা থাকলো আমার ছাত্রজীবনের প্রিয় এই নেতার জন্যে’।

কামরুল আহসান রাসেল লিখেছেন, ‘আপনার কাছ থেকে শিখেছি কিভাবে নেত্রীর প্রতি অবিচল থাকতে হয় ৷ কিভাবে সবাইকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে এগিয়ে যেতে হয়৷ দেখেছি, আপনার অতি সাধারণ জীবন চলা, সততা, রুচিশীল মানসিকতা। দেখেছি, আপনার মেধা ও পারিবারিক বন্ধন’।

‘সত্যিই কাদের স্যার অসাধারণ একজন ব্যক্তিত্ব। সেই সঙ্গে দল ও কর্মীর জন্য নিবেদিতপ্রাণ। আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী দলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সারা বাংলার তরুণ প্রজন্ম এমনই একজন নেতা কে দেখতে চাই৷ আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, সারা বাংলাদেশের তৃণমূল কর্মীদের মনের কথা চিন্তা করেই জননেত্রী দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০তম জাতীয় সম্মেলনে কাদের স্যারকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব তুলে দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে আরো একধাপ এগিয়ে দেবেন’।

‘সাধারণ সম্পাদক হতে চলেছেন- এমন জোরালো গুঞ্জনে নেতাকর্মী, সমর্থক আর শুভানুধ্যায়ীদের আগাম অভিনন্দন আর শুভেচ্ছা কেমন লাগছে?’ – ওবায়দুল কাদেরের মোবাইল ফোনে এ প্রশ্ন করা হলে হলে সযত্নে এড়িয়ে যান তিনি।

তবে বরাবর তিনি যেভাবে এ পদের প্রার্থী হিসেবে নিজের নামটি নাকচ করে আসছিলেন, এবার কণ্ঠে নাকচ করে দেওয়ার মতো শোনা যায়নি কোনো শব্দ।

যদিও গত ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘মিট দ্য প্রেস’ এ ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের সাফ জানিয়ে দেন, তিনি দলের জাতীয় সম্মেলনে কোনো পদেই প্রার্থী নন।

কাদের বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন নিয়ে আমাকে বিব্রতকর ও লজ্জায় পড়তে হয়। যখন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমার নাম  আলাপ-আলোচনায় আসে, পত্রিকায় ছবি বের হয়, আমি ওমুকের প্রতিদ্বন্দ্বী- এটা আমাকে বিব্রত করে। স্পষ্ট করেই বলছি, আমি আওয়ামী লীগের কোনো পদে প্রার্থী নই’।

তবে ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই’ এ দর্শনেই এর মাঝে আরেক রাজনীতি খুঁজছেন অন্যরা।

সেতুমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরাও বলছেন, নেতাকর্মী, স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা আগাম ফোন ও ক্ষুদে বার্তায় অভিনন্দন জানাচ্ছেন। তারাই ভাসিয়ে নিয়ে চলেছেন ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে তাদের আবেগের তরী।

একজন সিনিয়র নেতা বাংলানিউজকে বলেছেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অষ্টম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিতে চলেছেন- এটা যেমন নিশ্চিত, তেমনি সাধারণ সম্পাদক পদে যে নতুন মুখ দেখা যাবে, সেটাও নিশ্চিত।

কে তিনি? সে ব্যাপারে স্পষ্টভাবে মুখ না খুললেও তিনি বলেন, ‘তার ব্যাপারেও আলোচনা তুঙ্গে। নেত্রী সবুজ সংকেত দিয়েছেন। সুতরাং, সবকিছু নিয়মমাফিক চললে দু’বার দায়িত্বে থাকা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সরেই যেতে হচ্ছে। তার স্থলে আসছেন নেত্রীর আস্থাভাজন। যিনি হবেন এবারের সম্মেলনের চমক।

মাঝে কেবল আজকের দিনটিই। শনিবার ও রোববার (২২ ও ২৩ অক্টোবর) অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন ঘিরেই এখন সেই চমক- নি:সন্দেহে দলের প্রাণে নতুন রক্তের সঞ্চার করবে। নতুন নেতৃত্বের পথেই আওয়ামী লীগের পথচলা শুরু হবে- এমনটিই জানালেন নীতি নির্ধারণী মহলের ওই নেতা।

শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন উদ্বোধন করবেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দু’দিনের এই সম্মেলনের মাধ্যমেই নতুন নেতৃত্ব গড়ার স্বপ্ন দেখছেন নেতা ও কর্মীরা।

কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতেই কমিটি গঠন- এভাবে দলের মধ্যেই গণতন্ত্র চর্চা  প্রতিষ্ঠার দিকে‌ বরাবরই জোর দিয়ে আসছেন খোদ সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে আস্থা আর নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে দলটির নেতারা সব সিদ্ধান্তের জন্যেই তাকিয়ে থাকেন দলীয় সভাপতির দিকে।

আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে গত মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘এ সম্মেলনের  মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে’।

জোরালো আলোচনায় আসা ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের ইঙ্গিত বলেও মনে করছেন নেতাদের অনেকে।

দলের একজন সিনিয়র নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ‘২০০৭ সালে সেনা সমর্থক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জরুরি অবস্থা জারি, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার, দলের বিপর্যরকর পরিস্থিতি, এর মাঝে নেত্রীর আস্থাভাজন নেতাদের সংস্কারের নামে বিরোধিতা- এসব কিছুর মাঝে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে সেই কঠিন পরিস্থিতি সামলে দলীয় সভাপতির হৃদয়ে নির্ভরতা আর আস্থার জায়গাটা সৃষ্টি করেছিলেন সৈয়দ আশরাফ’।

‘সেটার মূল্যায়নও করেছেন নেত্রী। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে ২০০৯ সালে সৈয়দ আশরাফকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরের মেয়াদে ২০১৪ সালে নির্বাচনের পরও একই দফতর পান তিনি’।

‘দীর্ঘ সময়টিতে মন্ত্রণালয় পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য পারফরমেন্স দেখাতে না পারায় গত বছর নেত্রীর ‘গুডবুক’ থেকে ছিটকে পড়েন আশরাফ। আকস্মিকভাবেই দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয় তাকে। যদিও সিদ্ধান্ত বদলে সপ্তাহ না গড়াতেই জনপ্রশাসন মন্ত্রী করা হয় তাকে’।

‘পর পর দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা আশরাফের সততা নিয়ে নি:সন্দেহে কোনো প্রশ্ন না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে দলীয় নেতৃত্ব পালন, মাঠের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগ না করা নিয়েও বিস্তর অভিযোগ আর ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূলে’।

‘আর এসব কিছু বিবেচনায় এনে সব গুঞ্জন ছাপিয়ে নতুন চমক হিসেবে ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আর্বিভূত হচ্ছেন, এমনটিই আপাতত নিশ্চিত’- রাজনীতির নানা সমীকরণ টেনে এমন মন্তব্যও করলেন শীর্ষ ওই নেতা।

পাঠকের মতামত

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ১

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়ার ঠাকুরদিঘি এলাকায় লবণবাহী ট্রাকের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম ...

জাসদ কার্যালয়ের জায়গায় ‘শহীদ আবু সাঈদ জামে মসজিদ’ নির্মাণের ঘোষণা

বগুড়া শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা সংলগ্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে ভেঙ্গে ফেলা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) ...

বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, আটক ৩৩

বান্দরবানের আলীকদম সীমান্তে বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সংখ্যা। আজও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে শিশুসহ ৩৩ মিয়ানমারের নাগরিককে আটক ...