বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর চলমান অবরোধ কর্মসূচির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ওরা শুধু ধ্বংস করতে জানে, ওরা মানুষের কল্যাণ করতে জানে না। ওদের থেকে আপনারা সাবধান থাকবেন। জাতির জনকের কন্যা হিসেবে এদেশের জনগণের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেওয়ার কথা জানিয়ে আগামী নির্বাচনে আবারও নৌকা প্রতীকে ভোট চান সরকারপ্রধান।
শনিবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে কক্সবাজারের মহেশখালীতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র-সংলগ্ন টাউনশিপ মাঠে এই জনসভার আয়োজন করা হয়।
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগই পারবে, অন্য কেউ পারবে না। কারণ তাদের দায়িত্ববোধ নেই। মনুষত্ববোধ থাকলে কেউ জীবন্ত মানুষকে পুড়ে হত্যা করতে পারে না। তারা মানুষকে পুড়ে মারছে। গাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে। ওরা শুধু ধ্বংস করতে জানে, কল্যাণ জানে না। ওদের থেকে সাবধান থাকবেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, আপনারা কি নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। হাত তুলে দেখান। তখন উপস্থিত জনতা হাত তুলে আবারও নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকার করেন। সরকারপ্রধান তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মানুষের উন্নতি হয়। কারণ আমরা মানুষের জন্য কাজ করি। ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশ এক নয়। বাংলাদেশ এখন বদলে গেছে। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পেরেছে। আগামীতে আবার নির্বাচন আসছে। আপনারা আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে বাকি কাজ করার সুযোগ দেবেন।
শিগগির মূল্যস্ফীতি কমে আসবে এমন আশ্বাস দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, দুঃখের বিষয় হলো, যখন যুদ্ধ বাঁধল রাশা-ইউক্রেন; স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন, যার ফলে মুদ্রাস্ফীতি একটু বেড়েছে, কিন্তু সেটাও নিয়ন্ত্রণের আমরা চেষ্টা চালিয়েছি, ইনশাল্লাহ খুব শিগগির এই মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে। মানুষ আরও ভালোভাবে চলতে পারবে, থাকতে পারবে।
দ্রব্যমূল্য বাড়লেও মানুষের কল্যাণে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে যখন পণ্যমূল্য বেড়ে গেছে, আমরা উপকরণভোগী কার্ড দিচ্ছি। ভিজিএফ, ভিজিডির মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি। যখন সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে, আমাদের জেলেদের কার্ড দিয়েছি এবং আমরা তাদের খাদ্য সহযোগিতা দিয়ে থাকি এবং বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করে দিয়ে থাকি। যাতে মানুষ কষ্ট না পায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কক্সবাজারকে ভালোবাসতেন জানিয়ে এই জেলার জন্য নেওয়া নানা উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
এর আগে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে মাতারবাড়ী পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এরপর কক্সবাজার জেলায় শেষ হওয়া ১৪টি উন্নয়ন প্রকল্প এবং চারটি নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে মহেশখালীসহ পুরো জেলাজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে মাতারবাড়ীসহ পুরো মহেশখালী। নির্ধারিত সময়ের আগেই জনসভাস্থলে মানুষের ঢল নেমেছে।
’
দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য বেলা ১১টার দিকে বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে কক্সবাজারে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এরপর কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
দুপুরে কক্সবাজার-দোহাজারী রেললাইন ও কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশন প্রকল্পের উদ্বোধনের পর স্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কাটেন প্রধানমন্ত্রী। পরে নিয়ম অনুযায়ী পতাকা উড়িয়ে ও হুইসেল বাজানোর মাধ্যমে এ রুটে ট্রেনের যাত্রা শুরু করেন তিনি। মাত্র ২৬ মিনিটে ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার থেকে রামুতে পৌঁছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।