ওয়ানডে ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হ্যাট্টিক সিরিজ জয়ের স্বাদ পেলো বাংলাদেশ। আজ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। যার মাধ্যমে সিরিজ নিশ্চিতের পাশাপাশি ২-০ ব্যবধানে এগিয়েও গেল তামিম ইকবালের দল। এর আগে ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে এবং নিজ মাঠে সিরিজ জিতেছিলো বাংলাদেশ।
টানা তৃতীয় পঞ্চমবারের মত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। পাশাপাশি এটি টাইগার দলের ২৬তম ওযীনডে সিরিজ জয়। এ পর্যন্ত মোট ৭৩টি ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে জিতছে ২৬টি, হেরেছে ৪৪টি এবং ড্র করেছে ৪টি।
আজ অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের ঘুর্ণিতে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪৮ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ। ৪ উইকেট নেন মিরাজ। জবাবে ৩৩ দশমিক ২ ওভারে ৩ উইকেটে ১৪৯ রান করে জয়ের স্বাদ নেয় বাংলাদেশ।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট সিরিজ’-এর ওয়ানডে ফরম্যাটের দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে আজ প্রথমে ব্যাট করতে নামে ক্যারিবীয়রা।
প্রথম ম্যাচে ১২২ রানে অলআউট হবার স্মৃতি মনেই ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তাই সর্তকতার সাথে খেলতে থাকেন দলের দুই ওপেনার সুনীল অ্যামব্রিস ও অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা কেজর্ন ওটলি। তবে উইকেটে সেট হবার আগেই এই জুটিকে বিচ্ছিন্ন করেন বাংলাদেশের বাঁ-হাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। গালিতে অ্যামব্রিসের দারুন এক ক্যাচ নেন মিরাজ। পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ১০ রানে থামেন অ্যামব্রিস(৬)।
সতীর্থকে হারানোর পর স্বাচ্ছেন্দ্যেই খেলছিলেন ওটলি। তবে তার পথে বাঁধা হয়ে দাড়ান স্পিনার মিরাজ। ১৪তম ওভারে ওটলিসহ জসুয়া ডা সিলভাকে শিকার করেন স্পিনার মিরাজ। ৪৪ বলে ২৪ রান করেন ওটলি। ৫ রান করে ফিরেন তিন নম্বরে নামা সিলভা।
দলীয় ৩৬ ও ৩৭ রানে আউট হন যথাক্রমে ওটলি ও সিলভা। এরপর নিয়মিত বিরতি দিয়ে উইকেট হারাতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলীয় ৮৮ রানে অস্টম উইকেট হারালে প্রথম ম্যাচের চেয়েও কম রানে গুটিয়ে যাবার শংকায় পড়ে ক্যারিবীয়রা।
ক্যারিবিয় মিডল-অর্ডারের পাঁচ উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান-মিরাজ-হাসান মাহমুদ। আন্দ্রে ম্যাকার্থিকে ৩ ও অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদকে ১১ রানে আউট করেন সাকিব।
এনক্রুমার বোনারকে ২০ রানে বিদায় দেন আগের ম্যাচে অভিষেক হওয়া হাসান। নয় নম্বরে নামা রেমন রেইফারকে ২ রানে আউট করেন মিরাজ। আর রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নে ফিরেন কাইল মায়ার্স।
শতরানের নিচে গুটিয়ে যাবার শংকায় থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্রুত গুটিয়ে যাবার লজ্জায় পড়তে দেননি আট নম্বরে নামা রোভম্যান পাওয়েল। শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে নবম ও দশ উইকেটে ৬০ রান যোগ করেন পাওয়েল।
নবম উইকেটে আলজারি জোসেফকে নিয়ে ৪৭ বলে ৩২ ও শেষ উইকেটে আকিল হোসেনকে নিয়ে ৪০ বলে ২৮ রান দলকে উপহার দেন পাওয়েল। এতে ৪৩ দশমিক ৪ ওভারে ১৪৮ রানের পুঁজি পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জোসেফ ১৭ ও পাওয়েল ৬৬ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন। ১৭ বলে ১২ রান করে অপরাজিত থাকেন আকিল।
৯ দশমিক ৪ ওভার বল করে ২৫ রানে ৪ উইকেট নেন মিরাজ। প্রথম ওয়ানডেতে ৮ রানে ৪ উইকেট নেয়া সাকিব এবার শিকার করেন ২টি। ১০ ওভারে ৩০ রান দিয়েছেন তিনি। ৮ ওভারে ১৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন মুস্তাফিজুর। ১টি নিয়েছেন পেসার হাসান মাহমুদ।
১৪৯ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ভালো শুরুর পথেই ছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন দাস ও অধিনায়ক তামিম। দ্বিতীয় ওভারে দু’টি চার মারেন লিটন। লিটনের ব্যাট থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ ওভারে একটি করে বাউন্ডারি আসে। ৪ ওভার শেষে ২৬ রান তুলে ভালো শুরুর ভিত গড়ছিলেন লিটন। তবে ষষ্ঠ ওভারের পঞ্চম বলে লিটনকে থামিয়ে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁ-হাতি স্পিনার আকিল হোসেন।
লেগ বিফোর ফাঁদে পড়েন লিটন। রিভিউ নিয়েও নিজেকে বাঁচাতে পারেননি দারুন ছন্দে শুরু করা এই ডান-হাতি ব্যাটসম্যান। ২৪ বলে ২২ রান করেন লিটন।
দলীয় ৩০ রানে লিটনের বিদায়ে ক্রিজে তামিমের সাথে দলের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ধীরলয়ে খেলতে থাকেন তামিম-শান্ত। উইকেটে সেট হবার দিকেই মনোযোগি ছিলেন তারা। এরমধ্যে ১৩ওভার পর্যন্ত তামিম ৩টি ও শান্ত ২টি চার মারেন।
১৫তম ওভারের চতুর্থ বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদের বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন শান্ত। লং-অফে সেটি তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হন বোনার। ফলে জীবন পান শান্ত।
অবশ্য জীবন পেয়ে বড় ইনিংস খেলতে এবারও ব্যর্থ হন শান্ত। ১৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সেই মোহাম্মেদের কাছেই শেষ হয় ২৬ বলে ১৭ রানের ইনিংসটি। প্রথম ওয়ানডেতে ১ রান করেছিলেন তিনি। তামিমের সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ৬৫ বলে ৪৭ রান করেন শান্ত।
শান্তর আউটে ক্রিজে সাকিবকে পান তামিম। সাকিবকে নিয়ে ধীরে এগোতে থাকেন তিনি। ২৩তম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর শতরানে পৌঁছে যান তামিম-সাকিব। এই জুটি দিয়েই ম্যাচ শেষ করার আশায় ছিলো বাংলাদেশ। এই জুটিতেই ২০৯ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪৮তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম। ৭৫ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি।
তামিমের হাফ-সেঞ্চুরির মাঝে হতাশায় পড়তে হয়েছিলো বাংলাদেশকে। কারন ২৬তম ওভারের প্রথম বলে প্যাভিলিয়নে ফিরেন তামিম। রেইফারের বলে সিলভাকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তামিম। ৭৬ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫০ রান করেন তামিম। তার স্ট্রাইক রেট ছিলো ৬৫ দশমিক ৭৯। সাকিবকে নিয়ে ৫৩ বলে ৩২ রান যোগ করেন টাইগারা দলপতি।
তামিম যখন ফিরেন তখন সাকিব ২৬ বলে ১৭ রানে দাড়িয়েছিলেন। দলীয় ১০৯ রানে মুশফিকুর রহিমের সাথে জুটি বাঁধেন সাকিব। শেষ পর্যন্ত পাঁচ নম্বরে নামা মুশফিককে নিয়েই বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন সাকিব। তখনও ম্যাচের ১০০ বল বাকী ছিলো।
চতুর্থ উইকেটে ৫০ বলে ৪০ রানের জুটি গড়েন সাকিব-মুশফিক। ৫০ বলে ৪টি চারে অপরাজিত ৪৩ রান করেন সাকিব। ২৫ বলে কোন বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি ছাড়াই অপরাজিত ৯ রান করেন মুশফিক।
আগামী ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (টস-ওয়েস্ট ইন্ডিজ) :
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৪৮/১০, ৪৩.৪ ওভার (পাওয়েল ৪১, ওটলি ২৪, মিরাজ ৪/২৫, মুস্তাফিজ ২/১৫, সাকিব ২/৩০)।
বাংলাদেশ : ১৪৯/৩, ৩৩.২ ওভার (তামিম ৫০, সাকিব ৪৩*, রেইফার ১/১৮)।
ফল : বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মেহেদি হাসান মিরাজ (বাংলাদেশ)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
টাইপালং ক্রীড়া পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত শহিদ ওয়াসিম আকরাম গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৪-২৫ ইং এর শুভ ...
পাঠকের মতামত