কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মোবাইল চুরির অভিযোগে দুই-তিনজন মিলে জুয়েল (৭) নামের এক শিশুকে অমানবিকভাবে আম গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতন করে। ৯ আগস্ট বুধবার বিকেলে উপজেলার ছেঁউড়িয়ার চরমণ্ডলপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান কুমারখালী থানার ওসি আব্দুল খালেক।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৪/৫দিন আগে চরমণ্ডলপাড়া এলাকার রূপালী নামে এক নারীর মোবাইল ফোন চুরি হয়। ওই ঘটনায় তারা সাত বছরের জুয়েলকে সন্দেহ করে। এর জেরে এলাকার প্রভাবশালী তানজিল ও মীর আক্কাস ওরফে মিরু বুধবার বেলা ৩টার দিকে ছেলেটিকে বাড়ি থেকে তুলে নেয়। পরে তানজিলের শ্বশুরবাড়ির সামনে আমগাছে ঝুলিয়ে মারধর করে।
শিশুটিকে মারধর করতে করতে তানজিল বলতে থাকেন, ‘সত্যি করি ক, মোবাইল কনে?’ শিশুটি যতবার ‘জানি না’ বলে, ততবার তার শরীরে জোরে জোরে ডালের বাড়ি পড়ে। এ সময় শিশুটি কেঁদেই যাচ্ছে। আর বলছিল, ‘ও কাকা, আমি জানি না। কিচ্ছু জানি না। ও আল্লাহ, আমারে বাঁচাও।’
স্থানীয় লোকজন জানায়, তিন বছর আগে জুয়েলের বাবা মারা যান। মা অন্যত্র চলে যান। জুয়েলরা তিন ভাই মিলে ছেঁউড়িয়া এলাকায় থাকে। বড় ভাই রব্বেল (২১) স্থানীয় একটি দোকানে কাজ করেন। জুয়েল আরেকটি দোকানে কাজ করে। গত বৃহস্পতিবার ছেঁউড়িয়া এলাকার বাসিন্দা তানজিলের এক নিকটাত্মীয়ের মোবাইল ফোন সেট চুরি যায়। জুয়েলসহ আরেক শিশুর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আনেন তিনি।
জুয়েল বলে, ‘আমাকে অনেকক্ষণ ধরি মারিছে। আমি কিছু জানি না বললেও তারা থামেনি।’
প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল মান্নান বলেন, তিনি ঠেকাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে বাধা দেন তানজিল। চোরের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ তুলে ধাক্কা মারেন।
খবর পেয়ে বিকেলে ঘটনাস্থলে যান জুয়েলের ভাই রব্বেল। তিনি জুয়েলকে উদ্ধার করে সন্ধ্যার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেন। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাপস কুমার সরকার জানান, নির্যাতিত শিশুটিকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যায় ৭/৮ বছরের ওই বাচ্চাকে নিয়ে এসেছিল। জরুরি বিভাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
কুষ্টিয়ার সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদি হাসান জানান, ছেলেটির ভাই বাদী হয়ে বুধবার রাতে তিনজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছে। মামলার পর পুলিশ দুই আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে। অপরজনকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।