প্রকাশিত: ০৬/০৭/২০১৬ ৮:৫৮ এএম

sheikh-hasinaউখিয়া নিউজ ডটকম’

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি ভিডিও কনফারেন মাধ্যমে তার দপ্তরে বসে এই কাজের উদ্বোধন করেন।
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেমন কক্সবাজার বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ হয়ে উদ্বোধনী ফলক উম্মোচন করেন।

৫৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বিমানবন্দরের এই সম্প্রসারণ কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন দুটি কোরিয়ান ও একটি বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৩০ মাসের মধ্যে এই সম্প্রসারণ কাজ সম্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই কাজ শেষ হলে কক্সবাজার বিমানবন্দর হবে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এই কাজের ফলে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে ও অবকাঠামো ৭৭৭ বোয়িং ফ্লাইট অবতরণের সক্ষমতা অর্জন করবে।
এই সম্প্রসারণ কাজ করতে গিয়ে কক্সবাজার পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের ৪৫০০ পরিবারকে অন্যত্র পুনর্বাসন করতে হচ্ছে। তাদের কক্সবাজার শহরতলির বাঁকখালী নদী সংলগ্ন খুরুস্কুল ইউনিয়নে পুনর্বাসন করা হবে।
তাদের পুনর্বাসনের জন্য ২৫৩ একর জমিতে ২৪৫টি চারতলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ওই জমির ৪১ একর এলাকায় মাটি ভরাটের জন্য গম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০০ কোটি টাকায় কক্সবাজার-খুরুস্কুল সংযোগ ব্রিজ ও ২১০ কোটি টাকায় ভূমি উন্নয়ন কাজেরও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
বিমানবন্দর সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে তখন মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে। আওয়ামী লীগ সরকার আগামী ২০২১ সালে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী পালন করবে।’
তিনি মনে করেন, মধ্যম আয়ের দেশ হতে ২০২১ সাল লাগবে না, তার আগেই দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে আর মাত্র দুই-তিন বছর সময় লাগবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরো বলেন, ‘আমার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বেশিরভাগ সময় দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে জেলে থাকতে হয়েছে। যখনই তিনি মুক্ত থাকতেন তখন তিনি আমাকে নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে আসতেন।’
প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, এজন্য কক্সবাজারের জন্য তার দরদটা আলাদা।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের দিকে আঙুল তুলে বলেন, কাজ করতে গেলেই বাধা আসে। তারা জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যা করে দেশের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। কিন্তু তারা সেই অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইনের স্বপ্ন অনেকদিনের। সেটি কেন এতদিন বাস্তবায়ন হলো আমার মাথায় আসে না!
তিনি বলেন, এবার আমি সেই প্রতিশ্রুতিও পূরণ করব। তার মতে, নেপাল-ভুটান-ভারত-বাংলাদেশ ট্রানজিট করার চেষ্টা করছিলেন অনেকদিন ধরে। এখন সেটি চুক্তি হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে।
এছাড়া ভারত থেকে বাংলাদেশ হয়ে মিয়ানমার থেকে চীন পর্যন্ত সড়ক ব্যবস্থা ও রেললাইন সম্প্রসারণের চেষ্টাও করে যাচ্ছেন বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কখনো নিম্নতে থাকতে পারে না। আমি এই দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব।’
প্রধানমন্ত্রী ‘কক্সবাজারবাসী দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিলেন’ এমন মন্তব্য করে বলেন, মাতারবাড়িতে কয়লা বিদ্যুৎ ও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। টেকনাফের সাবরাংয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও পর্যটন অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। কক্সবাজারবাসী অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে।
‘কক্সবাজারের মতো বালুকাময় এত দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত আর কোথাও নেই’ জানিয়ে তিনি বলেন, এই সমুদ্র সম্পদকে অর্থনৈতিক কাজে ব্যবহার করা করতে পারব। আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। তার নিরাপত্তার জন্যও এই বিমানবন্দর দরকার।
শেখ হাসিনা বক্তব্যের শুরুতে কক্সবাজারে টানা বর্ষণে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি নিয়েও দুঃখ প্রকাশ করেন।
বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন উপলক্ষে কক্সবাজার বিমানবন্দরের কার পার্কিংয়ে বিশাল আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।
এতে মন্ত্রী, এমপি ছাড়াও কয়েকশ’ রাজনৈতিক কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা, সাধারণ মানুষ ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স শুরুর আগে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
ইতোপূর্বে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীতকরণে কী ধরনের অবকাঠামোগত কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে, তা তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়, বিমানবন্দরের এই সম্প্রসারণ কাজে ৫৭৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এই কাজে বিমানবন্দরের বর্তমান ৬,৭৭৫ ফুট দীর্ঘ রানওয়েকে ৯০০০,রানওয়ের প্রস্থ ১৫০ ফুট থেকে ২০০ ফুট এবং রানওয়েল ধারণ সক্ষমতা ১৭ থেকে ৮৫ করা হবে, যাতে ৭৭৭ বোয়িং বিমান এই রানওয়েতে অনায়াসে নামতে পারে।
এছাড়া এয়ার ফিল্ড লাইটিং ও নেভিগেশন সিস্টেমও উন্নত করা হবে। ৩০ মাসের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শুরু হওয়া এই সম্প্রসারণ কার্যক্রমকালে কক্সবাজার পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের সমিতি পাতা, কুতুবদিয়া পাড়া, ফদনারডেইলসহ পুরো ওয়ার্ডের ৪৫০০ পরিবারকে সরিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসন করা হবে।
ইতোমধ্যেই ৪৪০০ পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য কক্সবাজার শহরতলির খুরুস্কুল ইউনিয়নে বাঁকখালী নদীর তীরে ২৫৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ওই জমিতে ২৪৫টি চারতলা ভবন নির্মাণ করে ওই সকল পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে।
এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুই মন্ত্রী ছাড়াও কক্সবাজারের তিন এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল, আশেক উল্লাহ রফিক ও আবদুর রহমান বদি, জেলা প্রশাসন মোহাম্মদ আলী হোসেন, পুলিশ সুপার শ্যামল কান্তি ধর, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র সরওয়ার কামাল, মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মকছুদ মিয়া, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান, পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শেফায়েত আজিজ চৌধুরী রাজু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পাঠকের মতামত

চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা

চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মুক্তির দাবিতে ...

কক্সবাজারে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু, দৈনিক উৎপাদন ৩০ মেগাওয়াট

কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছেছবি: প্রথম আলো কক্সবাজার সদর উপজেলার ...