কক্সবাজারের চকরিয়ায় এনজিওর কাছ থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপের পাশাপাশি এ নিয়ে পারিবারিক কলহের জেরে হারুনুর রশিদ (৩০) নামে এক যুবক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
শুক্রবার (২৮ জুন) সকাল ১১টার দিকে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভিলেজার পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত হারুনুর রশিদ চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ভিলেজার পাড়ার আজিজুর রহমানের ছেলে।
স্বজনদের বরাতে চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর বলেন, ‘গত ৬-৭ মাস মাস আগে হারুনুর রশিদ তার বড় ভাই শাহেদুল ইসলামের জন্য তিনটি এনজিওর কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমাণে মোট আড়াই লাখ টাকা ঋণ নেন। পরবর্তীতে সপ্তাহান্তর ২-৩ মাস কিস্তির টাকা পরিশোধের পর থেকে শাহেদুল ইসলাম কাজের কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম শহরে অবস্থান করেন। এদিকে বড় ভাই চট্টগ্রাম শহরে অবস্থান করার পর থেকে হারুনুর রশিদ প্রতি সপ্তাহে ঋণের কিস্তি পরিশোধে বিপাকে পড়েন। এ নিয়ে এনজিও সংস্থাগুলোর মাঠ পর্যায়ে ঋণের কিস্তি আদায়কারী কর্মকর্তারা তাকে চাপ দিতে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে কিস্তির টাকা পরিশোধ না করায় এনজিগুলোর কর্মকর্তারা হারুনুরের বাড়িতে গিয়ে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। একপর্যায়ে কিস্তি পরিশোধের নির্ধারিত দিন এলে হারুনুর রশিদ ও তার স্ত্রী প্রতিবেশীদের বাড়িতে লুকিয়ে থাকতো।’
স্থানীয় এ ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘এভাবে মাস-খানেক পর একদিন এনজিও কর্মকর্তারা হারুনুর রশিদকে নিজ বাড়িতে পেয়ে অপমানজনক আচরণ করেন। এ নিয়ে তার সঙ্গে স্ত্রীর কলহের সৃষ্টি হয়। এর জেরে হারুনুরের স্ত্রী ঘটনার সপ্তাহ-খানেক আগে বাপের বাড়ি চলে যান। একদিকে ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ, অন্যদিকে তা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কলহের জেরে হারুনুর রশিদ শুক্রবার সকালে বাড়িতে ছালের খুঁটির সঙ্গে গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে।’
নিহতের স্ত্রীর বড় বোন হাসিনা আক্তার জানান, ছোট বোনের স্বামী হারুনুর রশিদ তার বড় ভাই শাহেদুল ইসলামের জন্য কয়েকটি এনজিওর কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ওই ঋণের কিস্তি ২-৩ মাস নিয়মিত পরিশোধের পর শাহেদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী এলাকা থেকে সটকে পড়েন। এরপর কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ না করায় হারুনুর রশিদকে চাপ প্রয়োগের পাশাপাশি এনজিওর লোকজন অপমানজনক আচরণ করেন। এ নিয়ে তার বোনের সঙ্গে স্বামীর কলহের সৃষ্টি হয়। সপ্তাহ খানেক আগে তার বাপের বাড়ি চলে আসেন বোন।’
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সকালে আমার বোনকে বাড়ি ফিরে যেতে হারুনুর রশিদ মোবাইলে কল দিয়ে জানায়। এতে আমার বোন অস্বীকৃতি জানালে বাবার বাড়ির স্বজনরা বকাঝকা করেন। পরে সকাল ১১টার দিকে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার পর বাড়ির ভিতরে হারুনুর রশিদকে ঝুলন্ত অবস্থায় মৃত দেখতে পান।’
চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ ইমরুল বলেন, ‘সকালে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ভিলেজার পাড়ায় নিজের বাড়িতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে এক যুবকের আত্মহত্যার খবর দেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। পরে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাড়ির ভিতরে খুঁটির সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বজনসহ স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কয়েকটি এনজিও সংস্থার কাছ থেকে কিস্তিরে নেয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অপমানের পাশাপাশি এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কলহের জেরে ওই যুবক গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে।’
মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে বলে জানান পুলিশের এ উপপরিদর্শক।