বিশেষ প্রতিবেদক : সারাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে প্রশাসন। দেশব্যাপী সাম্প্রতিককালে সংখ্যালঘু, ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান পুরোহিতসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের উপর উগ্রপন্থীদের হামলা ও হত্যার ঘটনায় চিন্তত সাধারণ মানুষ। তাই কক্সবাজারের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান পুরোহিতসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
গত দুই বছরে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী লেখক, ব্লগার হত্যাদিয়ে শুরু হয়ে এভাবে একের পর এক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে প্রকাশক, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ভিন্ন মতাবলম্বীরা।
সব শেষ ১জুলাই রাজধানীর গুলশানে কূটনীতিক এলাকায় এ যাবৎকালের নজিরবিহীন হামলার ঘটনা ঘটে তা ইতোমধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতীক গণমাধ্যমগুলোতে গুরুত্বের সাথে প্রকাশ পেয়েছে। হলি আর্টিজান বেকারি নামের একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকে সাত অস্ত্রধারীরা রেস্টুরেন্টে থাকা লোকজনকে জিম্মি করে ফেলে। হামলার প্রথম পর্যায়েই নিহত হন দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। প্রায় ১২ ঘণ্টার পর হামলাকারীসহ ২৬জন নিহতের মধ্য দিয়ে জিম্মি সংকটের অবসান ঘটে। নিহতদের মধ্যে রয়েছে ৩জন বাংলাদেশি, ৯জন ইতালির, ৭জন জাপানি ও ১জন ভারতীয়। এই ঘটনায় আইএস দায় স্বীকার করেছে বলে খবর দেয় সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ।
এর আগে একই দিন ভোরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর-কাষ্টসাগরা গ্রামের শ্রী শ্রী রাধামদন গোপাল বিগ্রহের মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসকে (৪৮) কুপিয়ে হত্যা করে মোটরসাইকেলে আসা তিন যুবক। আগের দিন বৃহ¯পতিবার রাতে বান্দরবানের বাইশারীতে হত্যা করা হয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী আওয়ামী লীগ নেতা মং শৈলং মারমাকে (৫৬)। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট এই দুটি হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করেছে বলে খবর দেয় সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি ইন্টারনেটে জঙ্গি হুমকি ও হামলার ঘটনার ওপর নজর রাখে। এই দুটি ঘটনার পরই গুলশান হামলার ঘটনাটি ঘটে।
এছাড়াও এর আগে গত ৭ জুন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহিষাডাঙ্গা গ্রামে মহিষের ভাগাড় মাঠে আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী (৬৯) নামের এক হিন্দু পুরোহিতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এদেশর এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জেলার মন্দির, গির্জাগুলো কড়া নজরদারিতে রেখেছে। জেলা পুলিশ, র্যাব, টুরিস্ট পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা নিয়মিত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
জানা গেছে, শহরের বাহারছড়াতে অবস্থিত খ্রিস্টান গির্জা বৈথনীয়া ব্যাপটিস্ট চার্চে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন রাতে গির্জার পাশে আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায়। এলাকাবাসী বলেন, এই ধরনের নিরাত্তা ব্যবস্থা থাকাটা বর্তমান সময়ে খুব জরুরী হয়ে পড়েছে। সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি আমাদের নিরাপত্তাটাও নিশ্চত হচ্ছে।
বৈথনীয়া ব্যাপটিস্ট চার্চ এর পাস্টোর সুশান্ত নাথ জানান, ‘‘পুলিশ সুপার, ওসিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সার্বক্ষনিক আমার সাথে যোগাযোগ করছেন। তারা আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। যে কোন সমস্যা হলে তাদের সাথে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করতে বলেছেন।’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তিনি সন্তুষ্ট বলেও জানান পাস্টোর।
এদিকে গুলশান হামলার প্রভাব পড়বে না কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে এমনটাই দাবি করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যা যা করা প্রয়োজন সবটুকুর জন্যই প্রস্তুত ট্যুরিষ্ট পুলিশ। গুলশানের হামলারদিন থেকেই আমরা হোটেলগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করেছি। সারারাত হোটেল মোটেল এলাকায় ট্যুরিস্ট পুলিশের বিশেষ টীম কাজ করছে। এছাড়াও ঈদে কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে ট্যুরিষ্ট পুলিশের ১২৬ জন সদস্য। একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, একজন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ও ৩ জন ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করবে জেলার সকল পর্যটন স্পটে।
র্যাব-৭ এর কক্সবাজারস্থ ক্যাম্পের সহকারী পরিচালক মো: শরাফত ইসলাম বলেন, “কক্সবাজারের বিভিন্ন মন্দির, বৌদ্ধ মন্দির, গির্জাগুলো চিহ্নিত করেছি। বিশেষ করে যে সব উপাসনালয়গুলোতে ধার্মীকদের উপস্থিতি থাকে সে সব স্থানে আমরা বিশেষ নজরদারীতে রেখেছি। সারা রাত ধর্মীয় উপাসনালায়গুলোতে আমাদের পেট্রল টীম পাহাড়া দিচ্ছে।