সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামীর অবরোধ কর্মসূচিতে কক্সবাজারের কোন স্থানে বিএনপি কিংবা এর অঙ্গসংগঠনের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করলেও তাদেরও কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। এমনকি কোথাও বিক্ষোভ মিছিল, পিকেটিংও হয়নি।
জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও উপজেলার নেতৃবৃন্দের এমন ভূমিকায় হতাশ ত্যাগী-তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা অবিলম্বে মেয়াদ উত্তীর্ণ কক্সবাজার জেলার বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দলসহ সকল অঙ্গসংগঠনের কমিটি ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
জেলার বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, কক্সবাজারে বিএনপির রাজনীতি দুইজন ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। শীর্ষ নেতার আশীর্বাদ কিংবা টাকা না দিলে পদ-পদবি পাওয়া যায় না। দলটির মূল সংগঠন ছাড়াও যুবদল, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দলসহ সকল অঙ্গগুলোতেও অযোগ্য ব্যক্তিকে অর্থের বিনিময়ে পদ-পদবি দেওয়া হয়েছে।
যার ফল ভোগ করছেন এখন ত্যাগী ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। যারা শীর্ষ পদ পেয়েছেন তারা মাঠে নেই। পুলিশ কিংবা সরকার দলীয় লোকজনের সাথে আঁতাত করে ব্যবসা-বাণিজ্য-চাকরি করছেন। অথচ নির্যাতন-হয়রানির শিকার হয়েও মাঠে ত্যাগী ও পদবঞ্চিতরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের দলীয় কার্যালয় বন্ধ আছে। তবে দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা ও স্কুল-কলেজ খোলা রয়েছে। দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে। যাত্রী সংকটে দূরপাল্লার বাস কিছুটা কম চলছে বলে জানিয়েছে পরিবহন মালিক সমিতি। তবে অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলছে।
এ অবস্থায় বিএনপির এই অবরোধ কর্মসূচিকে ব্যর্থ বলছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
তাদের অভিযোগ, আন্দোলনকে পুঁজি করে চোরা গুপ্ত হামলা-নাশকতা চালাতে এই কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। মাঠে তাদের কোন অবস্থান নেই।
বুধবার (৮ নভেম্বর) কক্সবাজার বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, অভ্যন্তরীণ রুটের বাস চলাচল করছে। দূরপাল্লার বাস ছাড়ছে। তবে আগের তুলনায় কম। যাত্রীও কম দেখা গেছে।
কক্সবাজার জেলার বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক কর্মী জানিয়েছেন, গত ২৯ অক্টোবর হরতালের পর সহস্রাধিক নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। এরপর থেকে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। সিনিয়র কোন নেতাও দলীয় কার্যালয়ে আসেন না। তাদের অনুসারীদেরও কোনও তৎপরতা নেই। জেলা বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতারা মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন। ফলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
তাদের অভিযোগ, রবিবার বিকাল পর্যন্ত গত দুই-তিন দিনে ছাত্রদলনেতাসহ অন্তত ২০ থেকে ৩০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জেলার নয় উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কয়েকটি সাজানো ঘটনায় মামলা দায়ের করে দলের নেতাকর্মীদের ওসব মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠাচ্ছে পুলিশ। এ অবস্থায় অবরোধে মাঠে নেই নেতাকর্মীরা। তবে শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে সাধারণ মানুষ।
পরিবহণ শ্রমিক নেতা শফিউল্লাহ আনসারি জানিয়েছেন, যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। প্রতিদিন সকালের দিকে দূরপাল্লার যাত্রী কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী বাড়ছে।
সদর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সৈয়দ রেজাউর রহমান রেজা বলেন, সদর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রতিদিন পাড়ামহল্লা এবং সড়কে পাহারা বসিয়েছেন। বিএনপিকে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করতে দেওয়া হবে না। আমরা তাদের মাঠে প্রতিরোধ করবো।
তবে বিএনপির এই অবরোধ কর্মসূচি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলে জানালেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের নামে বিএনপির তাণ্ডব, পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুর এবং যানবাহনে আগুনসহ ধ্বংসলীলার ঘটনায় তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সাধারণ মানুষ। ফলে তাদের ডাকা অবরোধ কেউ মানছে না। এজন্য অবরোধ কর্মসূচি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অবরোধের নামে বিশৃঙ্খলা করতে চায় বিএনপি। আগামী নির্বাচনকে বানচাল করতে চায় তারা। ২০১৪ সালে যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, নতুন করে আবার তারা অগ্নিসন্ত্রাস করতে নেমেছে। মানুষ পুড়িয়ে মারার জন্য আবার নেমেছে।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে মুজিব বলেন, অগ্নিসন্ত্রাসী, লুটেরা, দুর্নীতিবাজরা আর যাই হোক- বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আগামী দ্বাদশ নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাদের (বিএনপি) প্রতিহত করে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। ওই নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে আবার নির্বাচিত করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখব।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষের জালমাল রক্ষায় পুলিশ তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সুত্র : বিডিটোয়েন্টিফোরলাইভ ডটকম