কক্সবাজার শহরের একটি আবাসিক হোটেল থেকে পৌর আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (২১ আগস্ট) সকালে শহরের হলিডে মোড়সংলগ্ন আবাসিক হোটেল সানমুনের দ্বিতীয় তলার ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে দুই হাত বাঁধা অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
রবিবার (২০ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সাদা পাঞ্জাবি ও মাস্ক পরিহিত এক যুবককে সঙ্গে নিয়ে হোটেলটিতে গিয়েছিলেন সাইফুদ্দিন। রাত ৮টা ১০ মিনিটের পর ওই যুবক চলে যায়। যা দেখা গেছে হোটেলটির সিসিটিভি ফুটেজে। এরপরই সংশ্লিষ্টরা যুবকের পরিচয় জানতে উদগ্রীব হয়ে পড়েছেন। তাকে শনাক্ত করতে জোর তৎপরতা শুরু করেছে পুলিশও।
কক্সবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, সোমবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৫ জনকে পুলিশ হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মূলত সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাওয়া সাদা পাঞ্জাবি ও মাস্ক পরিহিত যুবককে শনাক্ত করতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তিনি বলেন, ওই যুবককে শনাক্ত করা সম্ভব হলে খুনের রহস্য পরিষ্কার হয়ে যাবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।
নিহতের সাইফুদ্দিন কক্সবাজার শহরের ঘোনার পাড়ার অবসরপ্রাপ্ত আনসার কমান্ডার আবুল বশরের ছেলে। তিনি কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এবং কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক। তিনি কাদেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতিও।
ঘটনাস্থলে গিয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, হোটেল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে। নিহতের শরীরে ৩টি ছুরিকাঘাত ও অন্যান্য জখম পাওয়া গেছে। আর হাত নিহতের প্যান্টের বেল্ট দিয়ে বাঁধা ছিল। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজসহ নানা উৎস থেকে হত্যায় জড়িতদের শনাক্তের কাজ চলছে।
প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার রেজাউল করিম জানান, রবিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নিহতসহ ২ জন এসে ২০৮ নম্বর কক্ষে ওঠেন। সোমবার সকালে তার সন্ধানে আসেন তার বন্ধুরা। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে কক্ষটিতে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দিলে খুলে যায়। খাটে রক্তাক্ত মরদেহ দেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। নিহত সাইফুদ্দিন প্রায়ই হোটেলে এসে রুম নিয়ে থাকতেন।
হোটেলের সিসিটিভির ফুটেজ এবং পাশের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভির ফুটেজ প্রতিদিনের বাংলাদেশের কাছে এসেছে। এতে দেখা যায়, নিহত সাইফুদ্দিন সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত এক যুবককে সঙ্গে নিয়ে নিজে মোটরসাইকেল চালিয়ে হোটেল সানমুনে আসেন। এরপর ওই যুবককে সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করেন ২০৮ নম্বর কক্ষটিতে। সঙ্গে থাকা যুবকের মুখে কালো রঙের একটি মাস্ক ছিল এবং হাতে ঘড়ি ও মোবাইল দেখা যায়। সাড়ে ৫টার দিকে কক্ষটিতে প্রবেশ করলেও রাত ৮টা ১০মিনিটের পর কক্ষটি থেকে বের হন সাদা পাঞ্জাবি পরা ওই যুবক। হোটেলটির দ্বিতীয় তলা থেকে হেঁটে সিঁড়ি বেয়ে নিচের দিকে নামেন। এরপর হাত মুছতে মুছতে আবারও দ্বিতীয় তলায় উঠে ২০৮ নম্বর কক্ষটির আগের কক্ষের দরজায় ধাক্কা দেন। এরপর ২০৮ নম্বর কক্ষটিতে প্রবেশ করেন। কয়েক মিনিট পর ওই যুবক বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে হোটেলের সামনে থাকা মোটরসাইকেলটি নিয়ে চলে যান।
ওই যুবকের নাম নয়ন বলে দাবি করছেন নিহতের পরিবার ও বন্ধুরা। রামু উপজেলার গর্জনিয়া এলাকার ওই যুবক থাকেন কক্সবাজার শহরের কোবা টাওয়ার নামের ফ্ল্যাটটিতে। বিভিন্ন সময় নয়নকে নিহত সাইফুদ্দিনের সঙ্গে দেখা গেছে বলে নিশ্চিত করেছে সাইফুদ্দিনের বন্ধু ইলিয়াছ মোহাম্মদ বৈরাম।
তিনি জানান, সাইফুল ওই যুবককে তার শ্যালক বলে পরিচয় দিতেন এবং ওই যুবকটি সাইফুদ্দিনকে দুলাভাই ডাকতেন।
নিহতের ভাই মহিউদ্দিন বলেন, ‘রাতে বড় ভাই বাড়িতে যাননি। ফোনও বন্ধ ছিল। ভাবি (নিহতের বউ) ভাইয়ের বন্ধুদের ফোন করে খবর নিতে থাকেন। ভাইয়ের বন্ধু ইলিয়াস ভাইয়ের খোঁজে বিভিন্ন স্থানে খবর নিতে নিতে সানমুনে এসে মরদেহটি পান।’
মহিউদ্দিন বলেন, নয়ন নামের যে যুবককে সন্দেহ করা হচ্ছে সে কোনোভাবেই বড় ভাইয়ের শ্যালক নয়।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী জানান, খবর পেয়ে তিনি হোটেলটিতে যান। সিসিটিভির ফুটেজ তিনিও দেখেছেন। তিনি দাবি করেন এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সন্দেহজনক কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলেও তিনি শুনেছেন।
এদিকে সাইফুদ্দিন হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তার রাজনৈতিক সহকর্মীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা খুনিকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করছে।
ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের নামাজে জানাজা রাত ৯টায় কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।