কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জরুরি প্রয়োজনে প্রস্তুত করা হয়েছে ৬৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক ও মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
শনিবারের (২৫ মে) বিকেল ৫টায় জেলা প্রশাসনের এটিএম জাফর আলম সম্মেলনে কক্ষে আয়োজিত দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি সভায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
সভায় জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, রিমাল মোকাবিলায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে ৬৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র। সরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শনিবার বিকেল হতে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবক ও মেডিকেল টিম। পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার-পানি মজুত রাখা হয়েছে। বরাদ্দ রাখা হয়েছে নগদ টাকা। এছাড়া সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষার্থে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হান্নান জানান, ৭ নম্বর বুলেটিন অনুযায়ী গভীর নিম্নচাপটি শনিবার (২৫ মে) বিকেল পর্যন্ত চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিলো। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রাবন্দর সমূহে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, শনিবার মধ্যরাতে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তর হতে পারে। এরপর প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে রোববার বিকেল হতে শুরু হতে মধ্যরাতে সেটি উপকূল অতিক্রম করতে পারে। জোয়ারের সময় ৭ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। আর ভাটার সময় হতে পারে ৫-৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস। তবে এটি কক্সবাজার তেমন আঘাত হানার সম্ভবনা না থাকলেও এসময় প্রচন্ড বৃষ্টিপাত ও সাগরে পানির উচ্চতাও বাড়াতে পারে। পাহাড় ধ্বসের সম্ভাবনাও রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলায় ঘূর্ণিঝড়ে জরুরি মোকাবিলায় জিআর নগদ দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা, দূর্যোগ মোকাবিলায় ব্যবস্থাপনা তহবিলের ১৮ লাখ ২৩ হাজার ৪৪৮ টাকা, ৪৮৬ মেট্রিক টন চাল মজুত রাখা হয়েছে। খোলা হয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এছাড়া দূর্যোগকালীন সময় কাজ করবেন আট হাজার ৬০০জন সিপিপি এবং দুই হাজার ২০০ রেডক্রিসেন্ট সদস্য।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, দুর্যোগ শুরু হলে উপকূলীয় এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে নেওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে রেডক্রিসেন্ট, স্কাউট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে। সন্ধ্যা থেকে সচেতনতা বাড়াতে উপকূলে মাইকিং করা হচ্ছে।
জেলা বোট মালিক সমিতির মোস্তাক আহমদ বলেন, ২০ মে হতে সরকারিভাবে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেকারণে আগে থেকেই মাছ ধরার ট্রলারগুলো তীরে নোঙ্গর করা রয়েছে। ছোটখাট যেসব ট্রলার তীরের আশপাশে মাছ ধরে তাদেরকেও সাগরে না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া হলেও জেলাজুড়ে এখনো এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। তবে, সাগরে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুপুরে পানি কিছুটা বেড়েছে। সম্ভাব্য দুর্যোগ বিবেচনায় সৈকতে আসা পর্যটকদের গোসলে নিরুৎসাহিত করছে টুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তেমন কোন প্রভাব না থাকলেও দুর্ঘটনা এড়াতে পর্যটকদের সাগরে গোসল করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জাগো নিউজকে বলেন, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপকূলে থাকা সাইক্লোন শেল্টারে পাঁচ লাখ মানুষের ধারণক্ষমতা রয়েছে। যেকোনো দুর্যোগে নিজ নিজ অবস্থান হতে সবাই এগিয়ে এলে তা মোকাবিলা করা সহজ হয়।