ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৮/০১/২০২৫ ১১:২০ এএম

আনছার হোসেন, কক্সবাজার::
ঘাতকের বুলেট আমার ছেলেকে কেড়ে নিয়েছে। সব স্বপ্ন তছনছ হয়ে গেছে। এখন স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছি। এভাবেই বলছিলেন জুলাই বিপ্লবে কক্সবাজারে শহীদ আহসান হাবিবের বাবা হেলাল উদ্দিন। সংসারের উপার্জনক্ষম বড় ছেলেকে হারিয়ে পরিবারটি এখন দিশাহারা। আন্দোলনের ভিডিও করায় টার্গেট করে গুলি করা হয় আহসান হাবিবকে। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় তিনি।

গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যাবেলা। কক্সবাজার শহরের রাস্তায় তখনও বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের তুমুল আন্দোলন চলছে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি। ভিডিও করছিলেন আহসান হাবিব।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, তাকে দেখেশুনেই গুলি করা হয়েছে। কক্সবাজার শহরের লালদীঘির পাড়ের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের মধ্যে কেউ একজন তাকে টার্গেট পয়েন্টে গুলি করে।

চকরিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন আহসাব হাবিব। সংসার চালাতে কক্সবাজার শহরের ক্রাউন পাওয়ার টেকনোলজি নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছিলেন। কক্সবাজারের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের হেলাল উদ্দিনের বড় ছেলে আহসান।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল রোগে ভুগছেন। তিন ছেলেমেয়ের পড়াশোনা ও সংসারের খরচ চালানো কঠিন হয়ে উঠেছিল তার। বাবার কষ্ট দূর করতে চাকরি নিয়েছিলেন আহসান।

বাবা হেলাল উদ্দিন বলেন, পরিবারকে আগলে রেখেছিল আমার ছেলে। কখনও বাড়িতে এসে আমাকে দেখতে না পেলে এদিক-সেদিক খুঁজত। ছেলেটা নেই। সংসার চালানো ও ছোট ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়া নিয়েই এখন শংকায় পড়েছি।

ad
আহসানের চাকরির টাকায় আমাদের সংসার চলত

আহসান হাবিবের মা হাছিনা বেগম বলেন, তিন বছর ধরে ৯ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করত আমার ছেলে। তার স্বপ্ন ছিল সরকারি চাকরি করবে, প্রতিষ্ঠিত হবে। সংসাবের অভাব দূর করে সবার মুখে হাসি ফোটাবে। কিন্তু এখন সবাইকে কাঁদিয়ে ওপারে চলে গেল।

তার ছোট ভাই রায়হান বলেন, বাবা অসুস্থ হলেও ভাইয়া কখনও আমাদের কষ্ট বুঝতে দেননি। কয়েক ঘণ্টা পরপর ফোন করে খবর নিতেন আমি কলেজে গেছি কি-না। ছোট বোন মাছুমা জান্নাতের ভাষায়, ভাইয়ার চাকরির টাকায় আমাদের সংসার চলত। পাশাপাশি আমাদের লেখাপড়ার খরচও চলত। এখন সংসারের এই অবস্থায় লেখাপড়া আর করতে পারব কি না জানি না।

এদিকে স্বজনদের মতে, ১৮ জুলাই রাত ৮টার দিকে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন আহসান হাবিব। সেদিন কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল-বিক্ষোভ চলছিল। লালদীঘির পাড় এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ একটি গুলি এসে আহসানের মাথায় লাগে। সহকর্মীরা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।

চিকিৎসকরা ভর্তি না করে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। তবে ঠিক কীভাবে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, সে ব্যাপারে পরিবারের সদস্যদের স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। তারা শুধু জানেন, আন্দোলন চলাকালে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তিনি আন্দোলনের ভিডিও করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তাকে আন্দোলন বিরোধীরাই দেখেশুনে গুলি করেছে।

এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের দুই লাখ টাকা এবং জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা সহায়তা তারা পেয়েছেন। ধর্ম উপদেষ্টা বলেছেন, সরকার সব সময় পরিবারের পাশে থাকবে।৷ সুত্র: দৈনিক আমারদেশ

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত জুলি বিশপ। দীর্ঘ ...

পশ্চিম ডিগলিয়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা ও বনভোজন সম্পন্ন

উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের অন্তর্গত পশ্চিম ডিগলিয়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা ও বনভোজন ...