কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ডুবন্ত ট্রলার থেকে ১০ জনের মরদেহ উদ্ধারের সাড়ে ৪ মাস পেরোলেও তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ। তবে মামলায় গ্রেফতার ৯ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ৭ জনের জবানবন্দি পর্যালোচনা করে ঘটনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছে, যা এখন যাচাই-বাছাই করছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত বাকিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনার ৪ মাস পর গ্রেফতার সুমন :
মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপের পশ্চিমপাড়ার মৃত মোস্তাক আহমদের ছেলে খাইরুল বশর সুমন। হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন দস্যুতায়। ২০১৮ সালে অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রতিশ্রুতিতে আত্মসমর্পণকারী দস্যুদের মধ্যেও ছিলেন সুমন। ২০১৯ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে ২০২১ সালে দখল ও মারামারির মামলায় ফের গ্রেপ্তার হন। জামিনে বেরিয়ে আবারও জড়ান দস্যুতায়।
ট্রলারে ১০ লাশ উদ্ধারের ঘটনায় শুরু থেকেই আলোচনায় ছিলেন খাইরুল বশর সুমন। ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে থাকা সুমনকে গত ৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতারের পরদিন রিমান্ডে নেয় পুলিশ। পুরো ঘটনার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড বলা হচ্ছে এই সুমনকে।
রিমান্ড শেষে সোমবার রাতে কক্সবাজার সদরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয় সুমনকে। আদালত সূত্র জানিয়েছে, বিচারক আখতার জাবেদের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।
এ কথা স্বীকার করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্জয় বিশ্বাসও। জবানবন্দিতে সুমন কী বলেছেন সে বিষয়ে কিছু জানাতে রাজি হননি তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘সুমন অনেক শক্ত হৃদয়ের মানুষ। বারবার বলেছে আমি ডাকাতি করতে পাঠিয়েছিলাম, তাদের মরতে পাঠাই নাই।’
এব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ট্রলারে ১০ জনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সুমনকে দায়ী করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সুমন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। সুমনের জবানবন্দি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাবে সুমন এ ঘটনার জন্য কতটুকু দায়ী।
মো. রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, এ ঘটনায় হওয়া মামলায় এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাদেরকেও দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
অভিযোগপত্র দাখিলের প্রস্তুতি চলছে :
পুলিশ জানায়, ট্রলারে ১০ জনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া অপর আট আসামির মধ্যে প্রধান আসামি বাইট্টা কামাল, বাঁশখালীর বাসিন্দা ফজল কাদের মাঝি ও আবু তৈয়ুব মাঝি, মহেশখালী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খায়ের হোসেন, চকরিয়ার বদরখালী এলাকার মো. নুর নবীর ছেলে গিয়াস উদ্দিন মুনির, মাতারবাড়ী ইউনিয়নের সাইরার ডেইল এলাকার এস্তেফাজুল হকের ছেলে দেলোয়ার হোসেন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে মামলার ৪ নম্বর আসামি করিম সিকদার ও বাইট্টা কামালের ভাই ইমাম হোসেন এখনও জবানবন্দি দেননি।
এব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্জয় বিশ্বাস বলেন, তদন্ত অনেকটা গুছিয়ে এসেছে। এ মামলায় আসামী ৬০ জনের মতো। এরই মধ্যে তদন্তে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অনেককে শনাক্ত করা হয়েছে। অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিলের প্রস্তুতি চলছে। তবে ঘটনায় নাম আসা জেলে ও আনোয়ার কামালকে গ্রেফতার করা গেলে আরও পরিষ্কার হওয়া যাবে। আশা করি, সবকিছু গুছিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ এপ্রিল সাগরে ভেসে থাকা একটি ট্রলার নাজিরারটেক উপকূলে টেনে আনেন জেলেরা। সেখান থেকে উদ্ধার হয় ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় দেশজুড়ে সৃষ্টি হয় চাঞ্চল্য। ট্রলারের মালিক ছিলেন সামশুল আলম প্রকাশ সামশু মাঝি। নিহতদের মধ্যে তিনিও আছেন। সামশুর স্ত্রী এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৬০ জনকে আসামি করা হয়।