শীতের প্রকোপের সঙ্গে কক্সবাজারে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টের মতো নানা সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও চিকিৎসকদের চেম্বারে ভিড় করছে রোগীরা। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রভাব বেশি দেখা দিয়েছে। মৌসুমি এসব রোগে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে জ্বর, হাঁপানি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার চিকিৎসা নিচ্ছে শতাধিক রোগী। কর্তব্যরত নার্সরা জানান, শীতের শুরু থেকে প্রতিদিনই ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত ৩০-৪০ শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।
সদর হাসপাতাল ছাড়াও জেলার অন্য হাসপাতালগুলোয়ও রোগীর চাপ বেড়েছে। তবে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালই ভরসা, যদিও সেখানে নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় এক শয্যায় দুজন করে থাকতে হচ্ছে। ৪০ জনের ধারণক্ষমতার শিশু ওয়ার্ডে মোট রোগীর সংখ্যা ৭৬। স্থানীয়দের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসছে।
নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের হাসপাতালগুলোয় ভর্তির হার বেশি। ফারহানা নামে এক শিশুর মা হাবিবা জানান, তার সন্তানের বয়স ১১ মাস। ঠাণ্ডার সমস্যা নিয়ে বুধবার মেয়েকে ভর্তি করান তিনি। মেয়ের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও ঝুঁকির বিষয়টি উল্লেখ করে তার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়েছে। এর মধ্যেই পরীক্ষায় নিউমোনিয়া ধরা পড়ে।
রামুর গর্জনিয়া থেকে আসা আব্বাস উদ্দিন জানান, তার এক বছরের ভাগনা শাহরিয়ারের শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিন স্থানীয় মেডিকেল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ওষুধ খেলেও ভালো হয়নি। তাই জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।
ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতাল, ইউনিয়ন হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতালের মতো বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোয় রোগীর চাপ বাড়ছে। জেলা শহরের আল ফুয়াদ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় দেখা গেছে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুল করিম খাঁন ও এমএস জামানের চেম্বারে ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে অভিভাবকের ব্যাপক ভিড়। একসঙ্গে এত মানুষকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও সিরিয়াল না পেয়ে ফেরত যাচ্ছে অনেকে। তার পরও মধ্যরাত পর্যন্ত রোগীর চাপ।
ডা. এমএস জামান জানান, ঠাণ্ডার কারণে অ্যালার্জির প্রকোপ বাড়ে। শীতের কারণেও নানা রোগ দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস ও চামড়ার রোগও বেড়ে যায়। বিশেষ করে শিশুদের ডায়রিয়া দেখা দেয়। ডায়রিয়া হয় রোটাভাইরাসের কারণে। মায়ের দুধ শিশুর পুষ্টি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পানের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আশিকুর রহমান জানান, শীতের শুরুতে আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিশু ও নবজাতকরা ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। শিশুদের বেলায় তিনটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। যদি কোনো শিশুর সর্দি-জ্বরের সঙ্গে কাশি ও বুকে শব্দ হয়, শিশুর যদি শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
পাঠকের মতামত