কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় নলকূপের পানি চলাচল নিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে দুই শিশুসহ এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শিশুসন্তানসহ মায়ের কারাগারে যাওয়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মানবাধিকার কর্মী, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ঘটনাটিকে ‘অমানবিক’ উল্লেখ করে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব ফরাজিপাড়ায়। তবে পুলিশ বলছে, ঘটনাটি খারাপ দেখালেও পুলিশ আইন মেনেই সবকিছু করেছে। অবৈধ সুবিধা আদায় করতে না পেরে ক্ষুব্ধ একটি মহল ওসির প্রত্যাহার চেয়ে কিছু লোকজনকে মাঠে নামিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, নলকূপের পানির চলাচল নিয়ে ২০ মার্চ সকালে পূর্ব ফরাজিপাড়ায় স্থানীয় শাহজাহানের সঙ্গে প্রতিবেশী হারুন অর রশীদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে শাহজাহান নখ কাটার যন্ত্র (নেইলকাটার) দিয়ে হারুনকে আঘাত করেন। তাতে হারুন পেট ও শরীরে আঘাতপ্রাপ্ত হন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে ঈদগাঁও হাসপাতাল, পরে কক্সবাজার হাসপাতালে ভর্তি করেন।
দুগ্ধপোষ্য শিশুসহ নারীকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে ঈদগাঁও বাসস্ট্যান্ডে স্থানীয় মানুষদের মানববন্ধন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায়ছবি: প্রথম আলো
জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ঈদগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদ ইমরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সাত-আট ঘণ্টা পর সোমবার বিকেলে ঈদগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গিয়াস উদ্দিন ফোর্স নিয়ে শাহজাহানের বাড়িতে অভিযান চালান। এ সময় শাহজাহানকে না পেয়ে দুগ্ধপোষ্য একটি শিশু এবং দুই বছরের আরও একটি শিশুসহ তাঁর স্ত্রী ফরিদা ইয়াছমিনকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। রাতে হারুন অর রশীদের স্বজনদের থানায় ডেকে নিয়ে নাটকীয় কায়দায় মামলা রেকর্ড করে পুলিশ। পরদিন ২১ মার্চ ওই মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ফরিদা ইয়াছমিনকে হত্যাচেষ্টা মামলায় কক্সবাজার আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। আদালত ফরিদাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বিকেলে আদালত থেকে দুই শিশুসহ ফরিদাকে পাঠানো হয় জেলা কারাগারে। পুলিশের এমন অমানবিক কাজের জন্য এলাকার মানুষ ফুঁসে উঠেছেন।
এর প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম কবিরের প্রত্যাহার চেয়ে ঈদগাঁও বাসস্ট্যান্ডে মানববন্ধন করেন এলাকার মানুষ। এতে কয়েক শ মানুষ অংশ নেন। গতকাল বুধবার দুপুরেও স্থানীয়রা ঈদগাঁও বাসস্ট্যান্ডে মানববন্ধন করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান বলেন, ঘটনাটি মীমাংসাযোগ্য। কিন্তু পুলিশ রহস্যজনক কারণে ঘটনা অতিরঞ্জিত করে স্বামী শাহজাহানকে না পেয়ে তাঁর স্ত্রী এবং নিষ্পাপ দুই শিশুকে ধরে এনে কারাগারে পাঠিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।
এ প্রসঙ্গে এসআই গিয়াস উদ্দিন জানান, মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি অভিযুক্ত শাহজাহানের স্ত্রী ফরিদাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। পরে হারুনের পরিবার মামলা করলে সেই মামলায় ফরিদাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
২১ মার্চ ঈদগাঁও থানায় আহত হারুন অর রশীদের মা মোহছেনা বেগম (৫০) বাদী হয়ে শাহজাহান (৩৫) ও তাঁর স্ত্রী ফরিদা ইয়াছমিনকে (৩০) আসামি করে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট, রক্তাক্ত জখম, চুরি, হুমকির অপরাধে মামলা করেন।
ঘটনার সময় ছুটিতে ছিলেন উল্লেখ করে ঈদগাঁও থানার ওসি মো. গোলাম কবির প্রথম আলোকে বলেন, দুগ্ধপোষ্য শিশুসহ মাকে কারাগারের পাঠানোর ঘটনা খারাপ দেখালেও পুলিশ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। মামলার এজাহারে নাম থাকায় পুলিশ ফরিদা ইয়াছমিনকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়। কারাগারে দুই শিশুকে মায়ের সঙ্গে নিরাপদ জায়গায় রাখা হয়েছে জানিয়ে ওসি গোলাম কবির বলেন, মামলার প্রধান আসামি শাহজাহানকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।
ওসিকে প্রত্যাহারের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মানববন্ধনের বিষয়ে গোলাম কবির বলেন, এসব ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত। ঘটনার সময় তিনি এলাকায় ছিলেন না, অথচ তাঁকে টার্গেট করা হচ্ছে। অবৈধ সুবিধা আদায় করতে না পেরে এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ক্ষুব্ধ লোকজনকে মাঠে নামিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।