কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
আজ থেকে প্রায় ৭৩ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিতে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) এসেছিলেন নাইজেরিয়ান তুখোড় যুবক ইউসূফ। বৃটিশ সেনা বাহিনীর ৮১ ওয়েস্ট আফ্রিকান ডিভিশনের সদস্য হিসেবে ইউসূফ ১৯৪২ থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার চিরিংগা ও ডুলাহাজারা এলাকায় অবস্থান :করে বার্মা ফ্রন্টে যুদ্ধ করেন। এ স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেননি তিনি। একারণে সুযোগ পেয়েই হুইল চেয়ারে চড়ে স্মৃতিবিজড়িত কর্মএলাকা পরিদর্শন করেছেন তৎকালীন ওয়েস্ট আফ্রিকান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এ সদস্য ও বর্তমানে অশীতিপর বৃদ্ধ ইউসূফ। তাঁর পুরো নাম ইউসুফ মুরদিমি বুরাতাই। তিনি নাইজেরিয়ান সেনাবাহিনীর বর্তমান প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল টুকুর ইউছুফ বুরাতাই-এর পিতা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নাইজেরিয়ান সেনাবাহিনীর প্রধান টুকুর, তাঁর বাবা ইউসূফ, স্ত্রী, ভাই ও অপর পদস্থ কর্মকর্তাসহ ৯ জনের একটি টিম নিয়ে কক্সবাজার পরিদর্শনে আসেন।
সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিদেশী এ পরিদর্শক টিম ইউসুফ মুরদিমি বুরাতাই-এর বিশ্ব যুদ্ধকালীন কর্ম এলাকা চকরিয়া উপজেলার চিরিংগা, ডুলহাজারা এবং রামু ও মরিচ্যার বিভিন্ন এলাকাসহ সেনানিবাসের উলেখযোগ্য স্থাপনাসমূহ ঘুরে দেখেন।
৭৩ বছর আগের স্মৃতিবিজড়িত কর্ম এলাকায় পৌঁছানোর পর তা দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন ইউসুফ মুরদিমি। এ সময় তিনি সেসময়কার নানা ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন। বিশেষ করে যুদ্ধকালীন কী কী পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে, দায়িত্ব পালনে কারা কেমনভাবে সহযোগিতা দিয়েছেন এবং সেসময়কার সহযোদ্ধাদের অনেকে বিস্মৃতির গহব্বরে তলিয়ে যাওয়ার বেদনাময় স্মৃতির কথা তুলে ধরতে গিয়ে তাঁর কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে। এসময় তিনি চোখের জলও ধরে রাখতে পারেননি।
ইউসুফ মুরদিমি বুরাতাই বলেন- যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নিজ দেশে ফিরে কর্মব্যস্ততার কারণে সব কিছু ভুলে যান তিনি। কিন্তু অবসরে যাবার পর একাকি সময়গুলোতে সেনা জীবনের নানা কর্মব্যস্ততার চিত্র তার চোখে ভাসতো। এরমাঝে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বাংলাদেশে কাটানো সময়টাও নানান ভাবে নাড়া দিত। তখন খাঁ খাঁ করে উঠতো তার বুকটা। ইচ্ছে করতো সবুজে ঘেরা সে এলাকা একবার দেখে আসি।
তিনি বলেন, কিন্তু তা আমার জন্য ছিল অসম্ভব। কখনো কল্পনাও করিনি ৭৩ বছর আগের কর্ম এলাকায় ফেরা হবে। সে সময়ে যোদ্ধা হিসেবে বীরদর্পে পাহাড়-সমতল দাপিয়ে বেড়ানো হয়েছে। কিন্তু বয়সের ভারে আজ হুইল চেয়ার ছাড়া হাঁটাও সম্ভব হচ্ছে না। এরপরও সন্তানের কর্মপরিধির কারণে স্মৃতিময় এলাকায় আসতে পেরে আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জ্ঞাপন করেন ইউসুফ মুরদিমি বুরাতাই। নাইজেরিয়ান এ টিমটি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে বিকেলে কক্সবাজার ত্যাগ করেন।
তাঁরা চলে যাবার পর রামু সেনাবাহিনী থেকে দেয়া এক তথ্য বিবরণীতেও ইউসুফ মুরদিমি বুরাতাই এর বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সেখানে আরো বলা হয়েছে, নাইজেরিয়ান সেনাবাহিনীর এ সফর ছিল দু’দেশের মাঝে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সেতুবন্ধন তৈরি করা।
-