সুজাউদ্দিন রুবেল
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, প্রবাল দ্বীপ, মেরিন ড্রাইভ ও অপরূপ প্রকৃতি কি নেই। দেশের পর্যটনের সবচে সম্ভাবনার জেলা কক্সবাজার। প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক এখানে ছুটে আসেন। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বিনোদনের কোন ধরণের অবকাঠামো গড়ে উঠেনি। শুধু তৈরি হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে হোটেল, মোটেল আর রিসোর্ট।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, স্বচ্ছ নীল জলরাশি। বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে বালুকাময় সৈকতে। সৈকত দেখতে ছুটে আসেন হাজার হাজার পর্যটক। মেতে উঠেন সৈকতের নীল জলরাশিতে।
সবুজ পাহাড়, সৈকতে বালিয়াড়িতে লাল কাঁকড়ার বিচরণ, দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ ও প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য সবই আছে কক্সবাজারে। কিন্তু এখনো পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা তৈরি হয়নি এখানে। উল্টো দিন দিন অপরিকল্পিত দালান কোঠার শহরে পরিণত হচ্ছে।
মোহাম্মদ আমিন নামে এক পর্যটক বলেন, যে উদ্দেশ্যে নিয়ে আমরা কক্সবাজার আসি; সেটা হচ্ছে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ানো ও পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দ উপভোগ করা। কিন্তু ঘুরে বেড়ানো হলেও আনন্দ উপভোগ করার মতো পরিবেশ কক্সবাজারে এখনো তৈরি হয়নি।
আরেক পর্যটক রোকেয়া বেগম বলেন, “কক্সবাজারে সৈকত, হোটেল ও প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকলেও রাত্রিকালীন যে বিনোদন প্রয়োজন সেটা কিন্তু আমরা পাচ্ছি না। ভাল একটা শপিং মল, বাচ্ছাদের জন্য শিশু পার্ক, আন্তর্জাতিক মানের সিনেমা হল, সৈকতে কেন্দ্রিক খেলাধুলাসহ নানা আয়োজনের কিছুই নেই। এগুলো হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা কক্সবাজার আসতে আগ্রহী হবে এবং ভালভাবে উপভোগ করা যাবে।”
ফাতেমা জাহান নামে আরেক পর্যটক বলেন, “কক্সবাজারে হোটেল ভাড়া, যাতায়াত ভাড়া ও রেস্তোরার খাবারের মূল্য অনেক বেশি। কক্সবাজার আসলে যে খরচ হয়; তার চেয়ে কম খরচ দিয়ে বাইরের বিভিন্ন দেশে ঘুরে আসা যাবে।”
আরেক পর্যটক শফিকুল ইসলাম বলেন, “রাত ৯টায় ঢাকা থেকে রওনা হয়েছি; এর পরদিন সকাল ১০টায় কক্সবাজার এসে পৌছেছি। এটা আসলে খুবই কষ্টদায়ক। যদি কক্সবাজারে আসার জন্য দ্রæতগতির রেললাইন ও কম খরচে বিমানে আসার ব্যবস্থা থাকতো তাহলে সবার জন্য ভাল হত।”
রুমিনা জাহান নামের আরেক পর্যটক বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের ছোট ছোট সৈকতগুলোকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে। পরিকল্পিতভাবে নানা সুযোগ-সুবিধা পর্যটকদের মাঝে তুলে ধরছে। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত থাকা স্বত্তে¡ও আমরা কক্সবাজারকে তুলে ধরতে পারছি না সেটা একটা বড় ব্যর্থতা। সুতরাং পরিকল্পিতভাবে কক্সবাজার সৈকতকে সাজিয়ে, পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার দাবি জানাচ্ছি।”
দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে কক্সবাজারকে আকৃষ্ট করতে নানা কার্যক্রম শুধুমাত্র পরিকল্পনাতেই সীমাবদ্ধ। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা তৈরি না হওয়ার পেছনে পর্যটন করপোরেশনকে দুষছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পর্যটন ব্যবসায়ী বলেন, “বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য যে পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন সেটা কিন্তু এখনো কক্সবাজারে তৈরি হয়নি। বেসরকারি উদ্যোগক্তারা আর কত করবে সরকার যদি এগিয়ে না আসে।”
সী গাল হোটেলের ফ্রন্ট ডেস্ক ম্যানেজার তারেক আজিজ বলেন, “কক্সবাজার সৈকত, পর্যটন স্পট ও হোটেল মোটেল জোনের যে ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন দরকার সেগুলো এখনো হয়নি। যেমন রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন, বিশ্বমানের শিশু পার্ক, বিদেশি পর্যটকদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা এগুলো কিছুই হচ্ছে না। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন থেকেও কোন ধরণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। যার কারণে পর্যটকরা কক্সবাজারের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।”
এব্যাপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, কক্সবাজারকে বিশেষ পর্যটন এলাকা ঘোষণার জন্য পর্যটন মন্ত্রণালয় শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করবে। পর্যটন কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, রেল লাইন, বিশেষ ট্যুরিস্ট জোন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। সুতরাং কক্সবাজারের পর্যটনকে বিকশিত করতে সরকারের নানা কর্মযজ্ঞ চলছে, শেষ হলেই সুফল পাওয়া যাবে।
প্রতি বছর অবকাশ যাপনে কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন ১৫ লাখের বেশি ভ্রমণ পিপাসু। কিন্তু বিনোদনের কোন সুযোগ-সুবিধা না থাকায় দিন দিন কমছে বিদেশি পর্যটক আগমন।
পাঠকের মতামত