কক্সবাজার জেলায় শের্ষ মুহূর্তে জমে উঠছে কোরবানির পশুরহাট। পশু যেমন আসছে তেমনি ক্রেতাদের আনাগোনাও বেড়েছে। পশু বিক্রিতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। ঈদুল আজহার দু’দিন আগে থেকেই পশু বিক্রিতে ধুম পড়ে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এবারে পাহাড়ি গরুর চাহিদা বেশি বলে জানা গেছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানিয়েছেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে কক্সবাজারে এবার বসছে ৪৪টি কোরবানি পশুর হাট। এসব হাটে পশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে ১০টি প্রাণী চিকিৎসক টিম। এছাড়া পশু জবাইয়ের জন্য পৌরসভার ৬২টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। সকল উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্ধারিত স্থানে কোরবানির পশু জবাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পশুর হাটে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আগে থেকেই সজাগ রয়েছে পুলিশ।
এদিকে প্রতিবছরের মতো এবারও দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কক্সবাজার খরুলিয়া বাজারে বসেছে কোরবানি পশুর হাট। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত বেচাবিক্রি হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই হাটে। কক্সবাজার খুরুস্কুল রাস্তা মাথা পশু হাট উদ্বোধন হলেও তেমন কোরবানি পশুর দেখা মেলেনি। ঈদগাঁও বাজারেও আসতে শুরু করেছে কোরবানি পশু। তবে এসব বাজারে পাহাড়ি লাল গরুর দেখাও মেলেছে।
এছাড়া রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির ১২ টি হাটে পশু উঠে ভরে গেছে। একদিকে জমজমাট গরু–ছাগল অপরদিকে অধিক ক্রেতাও। এসব হাটে নিয়ে আসা অধিকাংশ গরুই পাহাড়ি এলাকার। এ কারণে অনেকেই পাহাড়ি গরু কিনতে ছুটছে এসব বাজারে। কেননা এসব পশুতে ভেজাল নেই।
রামু উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলম জানান, রামুর হাটে এখন জমজমাট বেচা–কেনা শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। তবে রামুতে পাহাড়ি গরুর কদর রয়েছে বেশি। পাহাড়ি গরু কিনতে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকেই রামুর হাটে আসতে শুরু করেছে। উপজেলায় এবছর যেসব স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসছে তা হলো, রামু ফকিরা বাজার, কচ্ছপিয়া ইউনিয়নস্থ গর্জনিয়া বাজার, ঈদগড় বাজার, রশিদ নগর বাজার, কাঊয়ারখোপ বাজার, চাকমারকূল বাজার, হাডির মাথা পশুর হাট ও জোয়ারিয়া নালা বাজার পশুর হাট।
এছাড়া বড় পশুর হাট বসেছে চকরিয়া ইলিশিয়া স্কুল মাঠে। চকরিয়া পৌরসভার বাসটার্মিনাল, ঘনশ্যামবাজার, সাহারবিল পরিষদ বাজার, বদরখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, হারবাং, লক্ষ্যারচর জিদ্দাবাজার, মানিকপুর, ফাসিয়াখালী ভে–িবাজার ও বরইতলী বাজারেও পশুরহাট বসেছে। অন্যদিকে মহেশখালীর পৌরসভা, ইউনিয়নের কুতুবজোম, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী, হোয়ানক, কালারমারছড়া, মাতারবাড়ি, ধলঘাট ও শাপলাপুর বাজারে কোরবানি পশুর হাটে এবার পশুর দাম স্বাভাবিক মনে করছেন ক্রেতারা।
সরেজমিন দেখা গেছে– দেশীয়, পাহাড়ি ও মিয়ানমার থেকে আনা কোরবানি পশুগুলো হাটে তোলা হয়েছে। কক্সবাজারের মহাসড়ক দিয়ে মিয়ানমারের গরু ও দেশি–পাহাড়ি গরুগুলো উপজেলার পশু হাটেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পশুর হাটে আসছে নানা রঙের ছোট–বড় গরু–মহিষ ও ছাগল। সারিবদ্ধভাবে খুঁটিতে বেধে রাখা হয়েছে গরু–মহিষ। বিক্রেতারা গরু–মহিষের পরিচর্যা ও বিক্রয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। মহেশখালীর কালারমারছড়া গরু ব্যবসায়ী আজিজ মো. রফিক বলেন, চাহিদার চেয়ে বেশি গরু হাটে এসেছে। কিন্তু বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যে হারে গরু আনা হচ্ছে তাতে চাহিদার চেয়ে বেশি হবে। ক্রেতাদের মতে, মিয়ানমার থেকেও পশু আসা শুরু করায় এবার পশুর দাম সহনীয় থাকবে। অপরদিকে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অস্থায়ী হাটে বেচাকেনার জন্য প্রচুর সংখ্যক পশু আসতে শুরু করায় ইজারাদাররাও বেশ খোশমেজাজে রয়েছেন। তারা আশা করছেন এবার পশু কেনাবেচা বিগত সময়ের রেকর্ড অতিক্রম করবে। মহেশখালী থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানান, কোরবানি পশুর হাটে আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত টহল রাখা হয়েছে। পশুবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজি ও হয়রানি বন্ধের ব্যাপারে পুলিশের উর্ধ্বতন মহলের নির্দেশ রয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, সুষ্ঠুভাবে পবিত্র ঈদুল আজহা পালনের লক্ষ্যে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পদক্ষেপ সমূহ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জনস্বার্থে মনিটরিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় দিক–নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোরবানির হাটবাজারে ও ঈদে পানি, বিদ্যুৎ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে কোনো দায়িত্বহীনতার অভিযোগ আসলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।