কক্সবাজারে পুলিশ পরিচয়ে দুই পর্যটককে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় দুই হোটেল কর্মচারীকে আটক করেছে টুরিস্ট পুলিশ।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাত ২টায় জিম্মি পর্যটক নুরুল আইয়ুবের স্ত্রী নাসরিন সুলতানা ৯৯৯ নম্বর কল করে অবহিত করলে টুরিস্ট পুলিশের একটি দল হোটেল কক্ষ থেকে তাদের উদ্ধার করে এবং হোটেলের দুই কর্মচারীকে আটক করে। এ সময় দুটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।
পুলিশ জানায়, অপহরণের পর দুই পর্যটককে একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষে জিম্মি করে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। পরে মোবাইল ফোনে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করা হয়।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের ঊর্ধ্বতন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. মিজানুজ্জামান চৌধুরী জানান, রোববার বিকেলে কক্সবাজার শহরের বাস টার্মিনাল এলাকা এবং নবগঠিত ঈদগাও উপজেলা সদরের বাজার এলাকায় পৃথক এ ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী পর্যটকরা হলেন- চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার উত্তর বন্দর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ নাছিরের ছেলে নেওয়াজ নাছির (২৪) এবং আনোয়ারা উপজেলার চুন্না পাড়ার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে নুরুল আইয়ুব (৪০)।
আটকরা হলেন- হোটেল সী-পার্ল-১ এর ম্যানেজার মোহাম্মদ দিদার ও কর্মচারী সালাউদ্দিন।
ভুক্তভোগী পর্যটকদের বরাতে এএসপি মিজানুজ্জামান বলেন, রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে চট্টগ্রাম থেকে দুইটি মোটরসাইকেল যোগে দুই পর্যটক কক্সবাজার বেড়াতে আসেন। ওইদিন সকাল সাড়ে ৮টায় কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনের আলফা ওয়েব গেস্ট হাউজ নামের একটি আবাসিক হোটেলের ষষ্ঠ তলার স্পা সেন্টারে একজন পর্যটক স্পা করতে যান। সেখানে ওই পর্যটক প্রায় দুই ঘণ্টা পর্যন্ত স্পা করেন।
স্পা করার সময় পর্যটক নুরুল আইয়ুবের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ হয় স্পা-কর্মীর। এ সময় পর্যটকের কাছ থেকে আয়সহ বিভিন্ন তথ্যাদি জেনে নেয় স্পা-কর্মী।
সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, ওইদিন (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪ টায় দুই পর্যটক মোটরসাইকেলে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয়। এ সময় দুই পর্যটক পরস্পর কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে গাড়ি চালাচ্ছিল। এক পর্যায়ে নুরুল আইয়ুব কক্সবাজার শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেলে এসে ৪ দুর্বৃত্ত গতিরোধ করে। পরে তাকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে দুর্বৃত্তরা ধরে নিয়ে যায়। এরপর ওই পর্যটককে হোটেল সী-পার্ল-১ এর ৫-সি কক্ষে আটকে রাখে।
এদিকে মোটরসাইকেল নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে আগাতে থাকা পর্যটক নেওয়াজ নাছিরকে পেছন থেকে তাড়া করছিল দুর্বৃত্তদের আরেকটি মোটরসাইকেল। এক পর্যায়ে ওই পর্যটক নবগঠিত ঈদগাও উপজেলা সদর স্টেশনের কিছুটা আগে গতিরোধ করে থামায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে তুলে আনার চেষ্টা চালায়। এতে ওই পর্যটক গড়িমসি করলে মোবাইল ফোনে অন্য দুর্বৃত্তদের বিষয়টি অবহিত করে। পরে অন্য দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ পরিচয় দিয়ে ওই পর্যটককে গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর ওই পর্যটককেও হোটেল সী-পার্লের এনে আটকে রাখে।
টুরিস্ট পুলিশের এ কর্মকর্তা মিজানুজ্জামান বলেন, অপহরণ করে আনা দুই পর্যটককে হোটেল কক্ষে জিম্মি রেখে চালানো হয় শারীরিক নির্যাতন। পরে নির্যাতনের এক পর্যায়ে পর্যটক নুরুল আইয়ুবের স্ত্রী নাসরিন সুলতানের মোবাইল ফোনে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এতে অপহরণকারীদের দেয়া ৪টি বিকাশ নম্বরে আদায় করা হয় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এরপর ওই দুই পর্যটককে হোটেল কক্ষের ভিতরে আটকে রেখে দরজা বন্ধ করে অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনাটি পরে ৫ সেপ্টেম্বর রাত ২টায় জিম্মি পর্যটক নুরুল আইয়ুবের স্ত্রী নাসরিন সুলতানা -৯৯৯ নম্বর কল করে অবহিত করলে টুরিস্ট পুলিশের একটি হোটেল কক্ষ থেকে তাদের উদ্ধার এবং হোটেলের দুই কর্মচারীকে আটক করে বলে জানান সহকারী পুলিশ সুপার।
মিজানুজ্জামান জানান, ঘটনার পর থেকে পর থেকে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ বিভিন্নস্থানে অভিযান চালায়। এক পর্যায়ে মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার আবাসিক হোটেল ওয়ার্ল্ড বে এর পার্কিং থেকে একটি এবং ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের সামনে থেকে পর্যটকদের আরেকটি মোটরসাইকেল পুলিশ উদ্ধার করেছে।
ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী পর্যটকরা কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানান টুরিস্ট পুলিশের এ কর্মকর্তা।
পাঠকের মতামত