ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৩/০৭/২০২৪ ১২:২৪ পিএম

নিম্নমানের রং এবং পিভিসি দরজা ব্যবহারের কারণে কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে উঠছে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কক্সবাজারের চকরিয়ায় নির্মিত ‘হাউজহোল্ড টয়লেট’। একইসঙ্গে বিনামূল্যের এসব টয়লেট স্থাপনে উপকারভোগীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে কোটি টাকা।

অভিযোগ উঠেছে, তদারকি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজসে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ও এসব টাকা আদায় করেছে ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠান ও জনপ্রতিনিধিরা। তবে ক্ষতির ভয়ে মুখ খুলে কেউ কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। এ অবস্থায় দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

এরইমধ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নিম্নমানের রং ও দরজা ব্যবহারের বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তবে টাকা আদায়ের বিষয়টিও মৌখিকভাবে অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশর পর বিশ্বব্যাংক ইমার্জেন্সি মাল্টিসেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসফন্সের (ইএমসিআরপি) ‘হাউজহোল্ড টয়লেট’ প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। ১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে ২২০০টি পরিবারে এসব টয়লেট নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

চার বছর পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফের বসছে সীমান্ত হাট
‘আঁখি এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ‘হাউজহোল্ড টয়লেট’ প্রকল্পের কার্যাদেশ পায়। এর আগে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে উপকারভোগীর তালিকা তৈরি করে দাতা প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক। এ তালিকার উপযুক্ততা যাচাই করতে ‘সুশীলন’ নামে একটি এনজিওকে দায়িত্ব দেয় প্রতিষ্ঠানটি। একইসঙ্গে নির্মাণ কাজের তদারকি করার জন্য ‘আইডাব্লিউএম’ নামে আরও একটি প্রতিষ্টানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

অভিযোগ উঠেছে, তালিকা তৈরির সময় উপকারভোগীদের কাছ থেকে ২-৫ হাজার টাকা আদায় করেছে জনপ্রতিনিধিরা। টয়লেট নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের যোগসাজসে নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের রং এবং পিভিসি দরজা ব্যবহার করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘আঁখি এন্টারপ্রাইজ। এ ছাড়া উপকারভোগী প্রতিটি পরিবারের কাছ থেকে অফিস খরচ নামে আদায় করা হয়েছে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। সে হিসেবে ‘হাউজহোল্ড টয়লেট’ প্রকল্পে উপকারভোগীদের কাছ থেকে কোটি টাকারও বেশি আদায় করা হয়েছে। অথচ বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এসব টয়লেট সম্পূর্ণ ফ্রি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, টয়লেট নির্মাণে মাটির নিচে দেড় ফুট বেইজ করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। টয়লেটের ভেতরে হোয়াইট ওয়াস ও বাইরে ওয়েদার কোড রং এবং দরজায় ভালমানের পিভিসি দরজা ব্যবহার বাধ্যতামূলক ধরা হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের রং এবং দরজা ব্যবহার করেছে। ফলে বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই নষ্ট হয়েছে রং এবং দরজা। সুত্র: কালবেলা

অভিযোগ সামনে আসার পর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু করা হলে সেখানে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কিছু উপকারভোগী জানিয়েছেন, তালিকায় স্থান পেতে জনপ্রতিনিধিদের টাকা দিতে হয়েছে। এরপরে কাজ করতে আসা লোকজনকে দুইবেলা খাবার, নগদ টাকা এবং কাজ শেষে বকশিসও দিতে হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আল আমিন বিশ্বাস বলেন, এ প্রকল্পের কাজ তদারকির জন্য বিশ্বব্যাংকের নিয়োগ করা আইডাব্লিউএম (ইনস্টিটিউশন অব ওয়াটার মডেলিং) নামে একটি কন্সালটেন্ট ফার্ম রয়েছে। তারাই কাজের নিয়ম-অনিয়ম সবই তদারকি করে। এ ছাড়া জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তালিকা সুশীলন নামে আর একটি এনজিও সংস্থা যাচাই-বাছাই করে আমাদের দিয়েছে। এখানে আমাদের কোন কিছুই করার নেই। এসব টয়লেট সম্পূর্ণ ফ্রি, তাই এখানে উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে কিছু মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

টয়লেটে রং এবং দরজা নিম্নমানের ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করে এ প্রকৌশলী আরও বলেন, নির্মাণ শেষ হওয়া টয়লেটের প্রায় ৪৫ শতাংশ টয়লেটের রং এবং দরজা এরইমধ্যে নষ্ট হয়েছে। এসবের তালিকাও করা হচ্ছে। এসব ঠিক করে দেওয়ার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের তদারকি প্রতিষ্টান আইডাব্লিউএম এর ইঞ্জিনিয়ার তোজাম্মেল হককে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও উত্তর দেননি।

এ বিষয়ে অনিয়ম ও টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে আঁখি এন্টারপ্রাইজের পরিচালক শফিউল আজজের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় কোনো বক্তব্য নেওয়া যায়নি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

তবে সাজ্জাদ হোসেন নামে এক যুবক আঁখি এন্টারপ্রাইজের কাজগুলো নিজে বাস্তবায়ন করছেন দাবি করে প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে বলেন, কার্যাদেশের সময় ডিস্টেম্বার রং ধরা হয়েছিল। আমরাও সে মতে রং করেছি। এখন ওয়েদার কোড ধরা হয়েছে তাই নতুন করে ওয়েদার কোড রং দেওয়া হচ্ছে।

বিভিন্ন স্থানে দরজা নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সেগুলোর জন্য টাকা বরাদ্দা দিলে আমরা ঠিক করে দেব। বন্যায় তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করেছেন সাজ্জাদ।

তার দাবি, কোন উপকারভোগী যদি মিস্ত্রিদের খাবার ও বকশিস দেন তাতে আমাদের কী করার আছে ?

জানতে চাইলে কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মো: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নিম্নমানের রং এবং পিভিসি দরজা ব্যবহারের যে অভিযোগ উঠেছে তার কিছুটা সত্যতাও পাওয়া গেছে। তাই রং এবং দরজা ঠিক করে দেওয়ার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় বিল আটকে যাবে।

পাঠকের মতামত

কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে নেটওয়ার্ক কোয়ালিটি টেস্ট কার্যক্রম পরিদর্শন করছেন তথ্যপ্রযুক্তি

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, দেশে ১৩ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার ...

কক্সবাজারে পুলিশের অভিযানকালে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে জুয়েলার্স মালিকের মৃত্যু!

কক্সবাজারের টেকনাফে বৃদ্ধা নারীকে হত্যার পর বস্তাবন্ধি করে খালে ফেলে দেয়ার ঘটনার প্রধান আসামি ছৈয়দ ...

উখিয়া রাজাপালং ইউনিয়নের উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫ জনের মনোনয়নপত্র জমা

আগামী ২৭ জুলাই উখিয়া রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে ...