শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার;;
কক্সবাজার বিমান বন্দর হতে আর্ন্তজাতিক বিমানের যাত্রার শুভ সুচনা হয়েছে। শনিবার (২৯ এপ্রিল) সকাল ৯ টায় কক্সবাজার আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে বোয়িং ৭৩৭ বিমান পরীক্ষামুলক অবতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৬ মে কক্সবাজার আগমের আগেই এটি পরীক্ষামুলক অবতরণ করা হয়েছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন।
বোয়িং ৭৩৭ জাতীয় বড় ধরনের বিমান চলাচলের উপযোগী করে কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণের প্রথম পর্যায়ের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলমান এই সম্প্রসারণের কাজ শেষ হলে আগামী ২০১৮ সালের মধ্যেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরিত হবে কক্সবাজার বিমানবন্দর। তখন এ বিমান বন্দরে বোয়িং ৭৩৭, ৭৭৭ -এর মতো সুপরিসর বিমান নামার কথা থাকলেও ২৯ এপ্রিল সকালে পরীক্ষামুলক ভাবে বোয়িং ৭৩৭ অবতরণ করায় আর্ন্তজাতিক বিমান অবতরণের প্রথম পদক্ষেপ এটাতে সুচনা হলো এমটাই মনে করছেন কক্সবাজারবাসি ।
ইতোমধ্যে রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬৭৭৫ ফুট থেকে ৯০০০ ফুট, রানওয়ের চওড়া ১৫০ ফুট থেকে ২০০ ফুট, এয়ারফিল্ড লাইটিং সিস্টেম, ফায়ার ফাইটিংয়ের যন্ত্রপাতি ক্রয়, আইএলএস এবং ডিভিওআরসহ প্রায় ৮০ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এর আগে রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য মাটি ভরাট ও ড্রেজিংয়ের কাজ সম্পন্ন করে কর্তৃৃপক্ষ।
শনিবার সকালে বোয়িং ৭৩৭ ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামরিক সচিব জয়নাল আবেদীন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা, বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তা, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা, প্রকল্প পরিচালক আমিনুল হাসিব সহ ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজারে আসেন এবং বিমান বন্দরের বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজ পরির্দশন করেন। বেলা সাড়ে ১২টায় প্রতিনিধিদল শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার ত্যাগ করেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আকতার হোসাইন লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মানিক কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আর্ন্তজাতিক মান বজায় রেখে প্রায় ৮০ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরিত হবে কক্সবাজার বিমানবন্দর।
কক্সবাজার বিমান বন্দর ব্যবস্থাপক সাধন কুমার মোহন্ত শনিবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের সময় বোয়িং ৭৩৭ বিমান প্রথম অবতরণের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিমান বন্দরে বোয়িং ৭৩৭ বিমান অবতরণের মধ্য দিয়ে আরো বড় পরিসরে বিমান অবতরণের পরীক্ষামুলক সুচনা হলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুভ উদ্বোধন করলে আগামীতে ৭৭৭ -এর মতো সুপরিসর বিমান নামার কোন বাঁধা থাকবেনা।
কক্সবাজারের প্রতিষ্টিত ব্যবসায়ি ও সমাজকর্মী জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দর যখন আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে, তখন এখানে পর্যটন শিল্পের আরো প্রসার ঘটবে। আর্ন্তজাতিক রুটে চলাচলকারী বোয়িং ৭৩৭ বিমান কক্সবাজার বিমান বন্দরে অবতরণ করায় আমরা জেলাবাসি অত্যন্ত খুশি। এটাতে প্রমাণ করে যে, আর্ন্তজতিক বিমান অবতরণের শুভ সুচনা হলো। ’
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে যে পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে, তার সব কিছুই কাজে আসবে বিমানবন্দরকে কেন্দ্র করে। কারণ ব্যাংককসহ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে অনেক পর্যটক সরাসরি কক্সবাজারে আসবেন। এতে করে দেশের পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে।’
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের চলমান যেসব উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে, বিশেষ করে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর এবং টেকনাফের অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের কাজ শেষ হলে প্রচুর বিদেশি পর্যটক কক্সবাজারে আসবে। এ কারণে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করেন তিনি। ’
প্রসংগত, পর্যটন শিল্প বিকাশে কক্সবাজারে ২৫টি মেগা উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় বর্তমান সরকার। এর মধ্যে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প অন্যতম। গত ২০১৫ সালের ২ জুলাই গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।