প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে যুবদের দক্ষতা উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার তাগিদ বিশিষ্টজনদের
প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বেকার বা চাকরি প্রত্যাশীদের দক্ষতা উন্নয়ন খুবই জরুরি। বিশেষত বেকার তরুণ-তরুণী বা যুবরা পরিবর্তিত চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তুলতে না পারলে আগামী দিনগুলিতে চাকরি পাওয়া আরও কঠিন হবে।
কক্সবাজারের স্থানীয় একটি হোটেলে গত বৃহস্পতিবার (১২ই ডিসেম্বর ২০২৪) ‘ক্যারিয়ার হাব’/এমপ্লয়মেন্ট সাপোর্ট সার্ভিসেস (ইএসএস)-এর সেবা পরিচিতি অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনদের আলোচনা থেকে এই অভিমত উঠে আসে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক-এর স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এসডিপি) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এর মূল উদ্দেশ্য ছিল যুবদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধিতে করণীয় ঠিক করা এবং কর্মদক্ষতা উন্নয়নে ’ক্যারিয়ার হাব’-এর বিস্তারিত কার্যক্রম তুলে ধরা। ব্র্যাক এসডিপি প্রোগ্রামের আওতায় ইতিমধ্যে চালু হয়েছে ক্যারিয়ার হাব বা ইএসএস সেবা। এই সেবার আর একটি লক্ষ্য হচ্ছে চাকরি প্রত্যাশীদের দক্ষতা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারের সাথে সংযোগস্থাপন করা। এর মধ্যে রয়েছে ক্যারিয়ার পরামর্শ, চাকরির প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণ, জীবন বৃত্তান্ত (Curriculum Vitae বা সিভি) পর্যালোচনা এবং চাকরির জন্য সঠিক রেফারেন্স প্রদান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সোলায়মান। সভাপতিত্ব করেন ইমপ্রুভিং স্কিল্স অ্যান্ড ইকোনমিক অপরচুনিটিজ ফর কক্সবাজার (আইএসইসি) প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজারের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নওশের ইবনে হালিম, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কক্সবাজার-এর হেড অব সাব-অফিস রুচিকা বেহেল, কক্সবাজারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুব্রত বিশ্বাস, ব্র্যাকের স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের সহযোগী পরিচালক তাসমিয়া তাবাসসুম রহমান, কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা, ব্র্যাকের আইএসইসি প্রজেক্ট লিড খন্দকার ফখরুল আলম, একই সংস্থার এসডিপি-র হেড অব অপারেশন্স মোঃ আল ইমরান।
জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, সুশীল সমাজ, নিয়োগকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকবৃন্দ এবং ছাত্র-ছাত্রীগণও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ।
স্বাগত বক্তব্যে ব্র্যাকের আইএসইসি প্রকল্পের প্রজেক্ট লিড খন্দকার ফখরুল আলম প্রকল্পের বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি দক্ষতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি তরুণদেরকে উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়টিকেও বিবেচনায় নিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, যুবদের উন্নয়ন এক অর্থে দেশের উন্নয়ন। তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ ও বাজারমুখী দক্ষতার মাধ্যমে গড়ে তুলতে পারলে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
রুচিকা বেহেল বলেন, শ্রমবাজারের বাস্তবতা, প্রশিক্ষণ ও অংশীদারিত্বের সমন্বয়ে টেকসই কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা জরুরি। কর্মক্ষেত্রে সাফল্য আনতে হলে যুবদের বা চাকরি প্রত্যাশীদের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি উভয় দক্ষতাকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
তাসমিয়া তাবাসসুম রহমান ক্যারিয়ার হাবের জাতীয় কার্যক্রম এবং যারা এই সংক্রান্ত সহযোগিতা নিয়ে নিজেদের পরিবর্তন এনেছেন তাদের সাফল্যের গল্প তুলে ধরেন।
সুব্রত বিশ্বাস নারীদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের উপর জোর দেন ও উদ্যোক্তা হওয়ার আহবান জানান।
আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা ক্যারিয়ার হাবকে আরো কার্যকর করতে সরকারি, বেসরকারী সংস্থা ও দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনকে একত্রে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
আলোচনায় বেশ কয়েকটি সুপারিশ উঠে আসে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: তৃণমূল পর্যায়ে ‘ক্যারিয়ার হাব’/ইএসএস সেবাসমূহ সম্পর্কে অবহিত করা, স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে এই সেবাসমূহকে সংযুক্ত করা, এই কাজকে এগিয়ে নিতে গ্রামীণ এলাকায় মোবাইল ক্যাম্পেইন চালু, এবং দক্ষতা উন্নয়নে প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অধিক হারে অন্তর্ভুক্ত করা।
প্রসঙ্গত: ব্র্যাক-এসডিপির তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রতি বছর ২.২ মিলিয়ন তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশ করে। অথচ প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে আনুমানিক দশ মিলিয়ন তরুণ-তরুণী বর্তমানে বেকার বা কর্মহীন।