নিউজ ডেস্ক :: মন্ত্রিসভায় শিগগিরই রদবদল আসছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি অথবা সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বেশ কিছু পরিবর্তন আসবে। বিতর্কিত কর্মকান্ড এবং বয়সের কারণে অপারঙ্গম কিছু মন্ত্রী বাদ পড়ছেন মন্ত্রিসভা থেকে। পদোন্নতি পেয়ে প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন দুজন এবং যোগ হবে কিছু নতুন মুখ। সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্রে তথ্যটি জানা গেছে। এবারের মন্ত্রীসভায় কক্সবাজার থেকে এক জন স্থান পেতে পারেন। কক্সবাজার থেকে মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাব্য তালিকায় যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মুজিবুর রহমান, সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও আশেক উল্লাহ রফিক এমপি।
আওয়ামীলীগের সূত্রে জানাগেছে , বেশ কয়েক মাস ধরেই মন্ত্রিসভায় পরিবর্তনের যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল তা বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে শিগগিরই। চালের মূল্যবৃদ্ধি, পচা গম আমদানিসহ বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত টানা দুই মেয়াদের মন্ত্রিসভার সদস্য খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বাদ পড়তে পারেন। পাবনার সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ ডিলু বাদ পড়তে পারেন নির্বাচনী এলাকায় আত্মীয়করণের রাজনীতির কারণে। সম্প্রতি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিবাদের কারণে জেলে গিয়েছেন ভূমিমন্ত্রীর ছেলে।
খাদ্যমন্ত্রী ও ভূমিমন্ত্রীর ওপর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন অসন্তোষ্ট। বয়সের কারণে বাদ পড়তে পারেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এমাজউদ্দীন প্রামাণিক এবং ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। বার্ধক্যজনিত কারণে শারীরিক সমস্যায় নিয়মিত চলাফেরায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না এই দুই মন্ত্রী। যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় বহু বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য পরিচিত। মন্ত্রণালয় এবং নিজ নির্বাচনী এলাকায় বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগে মন্ত্রিসভা থেকে ছিটকে পড়তে পারেন সাবেক এই ফুটবলার। এমনকি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নও হারাতে পারেন উপমন্ত্রী জয়।
জানা গেছে, পদোন্নতির তালিকায় রয়েছে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের নাম। বিরোধী দলের আমলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা মির্জা আজমের পদোন্নতির সম্ভাবনা জোরালো। সেই সঙ্গে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার। পদোন্নতির কারণ হিসেবে জানা গেছে, বর্তমান মন্ত্রিসভায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোনো পূর্ণমন্ত্রী নেই। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সামলাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি এবং প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ আবার ফিরে পেতে পারেন মন্ত্রিত্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুগত নারীনেত্রী হিসেবে দীপু মনি এবং প্রতিদিন সভা-সেমিনারে গণমাধ্যম সরব রাখার জন্য হাছান মাহমুদ পুরস্কৃত হতে পারেন। নতুনদের মধ্যে মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসতে পারেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। দলটির আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক জয়পুরহাটের এমপি আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনেরও নাম রয়েছে আলোচনায়। জেলা পর্যায়ে রাজনীতি করেন এমন কয়েক নেতা আবার আসতে পারেন মন্ত্রিসভায়। খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের নাম আলোচনায় রয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এবার এই সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন পাবেন না খালেক, সে কারণে তাকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন রদবদলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী, তথ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয় ভেঙে যে নতুন ৭টি বিভাগ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই বিভাগগুলোয়ও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আসতে পারেন বেশ কিছু নতুন মুখ। এই নতুন পদ গুলোতে কক্সবাজারে একজন মন্ত্রী দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
মন্ত্রিসভায় রদবদলের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের পর দলের সভাপতিমন্ডলীর প্রথম সভার পরই ঈঙ্গিত দিয়েছিলেন। গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠকের পর তিনি বলেন, শিগগিরই মন্ত্রিসভায় রদবদল আনা হবে। তবে কবে আনা হবে সেটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার বলেও জানান তিনি। গত বছরের অক্টোবরে ওবায়দুল কাদেরের ওই কথার পর এখনো পর্যন্ত কোনো রদবদল আসেনি মন্ত্রিসভায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আবার জোরালো আওয়াজ উঠেছে মন্ত্রিসভায় পরিবর্তনের। বর্তমান মন্ত্রিসভায় ৩১ জন মন্ত্রী, ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দুজন উপমন্ত্রী রয়েছেন।