ডেস্ক রিপোর্ট ।। কক্সবাজারে ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ এবং খুনসহ ভয়ঙ্কর নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে স্কুল-কলেজের কিশোর ও তরুণ শিক্ষার্থীরা। এদের কেউ কেউ আবার অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে অপরাধ জগতে নিজের নাম লিখিয়েছে। আইনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তারা আবার খুঝে নিচ্ছে পলিটিক্যাল গডফাদার।
উদ্বেগজনক এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সরকার বিপথগামী টিনএজার শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশে প্রচলিত শিশু আইনে বিচারের আগে ও পরে শিশুদের কারাদ- দেয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ হওয়ায় তাদের সংশোধনে বাস্তবমুখী নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত এআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা জানান, ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের তরুণ শিক্ষার্থীরা প্রথমে অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়তে শুরু করলেও তা এখন সংক্রামক ব্যাধির মতো সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ইদানীং প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুল-কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের হাতেও নানা ভয়ঙ্কর অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অভিভাবকদের অতিব্যস্ততা ও সন্তানদের প্রতি যথেষ্ট নজরদারি না থাকায় মেধাবী শিক্ষার্থীরাও অনেকে অন্ধকার জগতে পা রাখছে বলে মন্তব্য করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
বলা হয়, কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে চলতি বছর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন সাজিদ মাউন। বাবা মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। মা নয়ন সেলিনা সফল নারী উদ্যেক্তা। বড় ভাই শাওনের নামে রয়েছে একটি পোল্ট্রি ফার্ম। বন্ধুর সাথে শেয়ারে কলাতলিতে থ্রি-স্টার নামে একটি আবাসিক হোটেল রয়েছে সাজিদের। শিক্ষিত সাজিদ সবার দৃষ্টিতে তরুণ ব্যবসায়ী হলেও বাস্তবতা হলো সাজিদ একজন পেশাদার মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের সদস্য। নগরীর দুর্ধর্ষ মোটরসাইকেল চোর নাছির উদ্দিন ওরফে মামুনের নেতৃত্বে সাজিদ ও তার অনুসারীরা চোরাই মোটর সাইকেলের ব্যবসা করে। নগরীতে চুরি হওয়া মোটরসাইকেল পাচার করতো কক্সবাজারে সাজিদের কাছে। টাকাসহ একটি মোটর সাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পেশাদার মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের খোঁজ পায় নগরীর কর্ণফুলী থানা পুলিশ। এদের মধ্যে সিন্ডিকেটের ছয় সদস্য পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পলাতক রয়েছে দলনেতা নাছির উদ্দিন ও তার সহযোগী নাঈম।
সাজিদ ছাড়া গ্রেপ্তার হওয়া মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা হলো : কক্সবাজার সদর থানার ইসলামপুরের জাফর আহমদের ছেলে আরিফ জুয়েল ওরফে সোহেল, ঈদগড় বড়বিলের সিদ্দিক আহমদের ছেলে মোরশেদ কামাল, সদর থানার বারোয়াখালি নতুন পাড়ার মৃত আবদুল গফুরের ছেলে মঞ্জুর আলম মুন্না, ঈদগা জালালাবাদ ইউনিয়নের আবুল কালামের ছেলে মোহাম্মদ শাহেদ ও আনোয়ারা চাতুরী চৌমুহনী এলকার ইউনুছের ছেলে দিল মোহাম্মদ। তাদের কাছ থেকে তিনটি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। তবে মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের মূল হোতা নাছির পলাতক রয়েছে। দিল মোহাম্মদ সিইউএফএলে মাস্টার রোলে চাকুরি করে। বসবাস করে সিইউএফএল আবাসিক এলাকায়। নাছির বারশত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছাবেরের ছোট ভাই।
কর্ণফুলী থানার পরিদর্শক (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, তারা পেশাদার চোরাই মোটরসাইকেল ব্যবসায়ী। নগরীতে চুরি হওয়া মোটরসাইকেলের অধিকাংশ এ চক্রের হাতে যায়।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাজিদ জানায়, কক্সবাজার পলিটেকনিক থেকে চলতি বছর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছে সে। কক্সবাজার শহরের কলাতলিতে বন্ধুর সাথে শেয়ারে ‘থ্রি স্টার’ নামে একটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। মা নয়ন সেলিনা দেশে সাত সফল নারী উদ্যোক্তার মধ্যে একজন। বড় ভাই শাওনের নামে একটি পোল্টি ফার্ম রয়েছে তাদের। মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের নেতা আনোয়ারার নাছির ও দিল মোহাম্মদের সাথে তার সম্পর্ক রয়েছে। তারা কক্সবাজারে সাজিদের কাছে চোরাই মোটরসাইকেল পাঠাতো। আর্থিক সংকট না থাকা সত্ত্বেও চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির ব্যবসা প্রসঙ্গে সাজিদ জানায়, মডেল পরিবর্তন করে মোটরসাইকেল চালানো আমার শখ। নতুন নতুন মডেলের মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে গিয়ে সিন্ডিকেটের নেতা নাছিরের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে।
সাজিদের নেতৃত্বে ঈদগাহ এলাকায় সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে মোর্শেদ কামাল। চোরাই মোটরসাইকেলের ব্যবসায় জড়িত হওয়া প্রসঙ্গে মোর্শেদ বলেছে, ‘পাঁচ ভাই পাঁচ বোনের মধ্যে আমি সকলের ছোট। চোরাই মোটরসাইকেলের ব্যবসায় অল্প পুঁজিতে লাভ ভালো। একটি গাড়ি বিক্রি করলে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ থাকে। নাছির ও দিল মোহাম্মদ গত এক বছরে প্রায় ৫০টি মোটরসাইকেল দিয়েছে। দেড় বছর আগে প্রেম করে বিয়ে করেছি। বউ জানে আমি গাড়ির ব্যবসা করি।’
কর্ণফুলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, গত ৬ আগস্ট আনোয়ারার ইউনুছ নামের এক ব্যক্তি টাকা ও মোটরসাইকেল ছিনতাই সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করেন কর্ণফুলী থানায়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন বিকেল তিনটায় (৮ আগস্ট) নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে বহদ্দারহাট থেকে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তিনি। পকেটে ছিল ৯৭ হাজার টাকা। সাড়ে তিনটার সময় কর্ণফুলী সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় পৌঁছুলে নাছিরসহ আরো দুইজন একটি মোটরসাইকেল নিয়ে এসে ইউনুছের গতিরোধ করে। নাছির তার হাতে থাকা রিভলবার ধরে ইউনুছের প্যান্টের ডান পকেটে থাকা ৯৭ হাজার টাকা কেড়ে নিতে চেষ্টা করে। বাধা দিলে ইউনুছের বাম পায়ে তিনটি এবং কোমড়ে একটি গুলি করে টাকা ও মোটরসাইকেল ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এ মামলা তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমে দিল মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে কক্সবাজার ও ঈদগাহ এলাকায় টানা দুইদিন অভিযান চালিয়ে চোরাই মোটরসাইকেল সিন্ডিকেটের কক্সবাজার জেলার মূল হোতা সাজিদ ও তার চার অনুসারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদরে কাছে তিনটি চোরাই মোটরসাইকেল পাওয়া যায়।
ওয়ালি উদ্দিন জানান, চট্টগ্রাম থেকে চুরি হওয়া অধিকাংশ মোটরসাইকেল কক্সবাজারে সাজিদের গ্রুপের কাছে যায়। চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রি করতে সাজিদের নিয়ন্ত্রণে এলাকাভিত্তিক একাধিক উপগ্রুপ রয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়ার পর দিল মোহাম্মদকে থানায় এসে শনাক্ত করেছেন মামলার বাদী ইউনুছ। সুত্র::দিসিএম
পাঠকের মতামত