কক্সবাজারের কলাতলী এলাকার শালিক রেস্টুরেন্টের মালিক নাছির উদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে নারী কর্মচারীদের যৌন নিপীড়ন ও স্টাফ কোয়ার্টারে অস্ত্রধারীদের পাহারায় রেখে কর্মচারীদের নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) রেস্টুরেন্টের দুজন কর্মচারী কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করেন।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) রাতে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, শালিক রেস্টুরেন্টের মালিক নাছির উদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে কর্মচারীকে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মূলত দুটি অভিযোগ দেয়া হয়েছিল, তার মধ্যে নারী কর্মচারীকে নির্যাতন করার অভিযোগটি পরে প্রত্যাহার করে নেন তরুণী। এখন শালিক রেস্টুরেন্টের মালিককে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নির্যাতনের শিকার দুই কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শালিক রেস্টুরেন্টে ২১ জন উপজাতি নারীকে নিয়োগ দিয়েছেন মালিক নাছির উদ্দিন বাচ্চু। সব নারীই বয়সে তরুণী। চাকরির শর্তে তাদের স্টাফ কোয়ার্টারে রাত্রী যাপন বাধ্যতামূলক করা হয়। আর কোয়ার্টারেই প্রতিনিয়ত যৌন নিপীড়নের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতন চালান বাচ্চু।
এদিকে নির্যাতিত তরুণী জানান, গত ১১ অক্টোবর অসুস্থতার কারণে তিনি ছুটি নিয়ে স্টাফ কোয়ার্টারে চলে যান। পরে ওষুধ কেনার জন্য বের হলে রেস্টুরেন্টের কর্মচারী খালেক ও আবদুল্লাহর সঙ্গে দেখা হয়। অসুস্থতার কথা জেনে তারা দুজন ফার্মেসিতে গিয়ে ওষুধ কেনেন। এর মধ্যে মালিক বাচ্চু তাদের ফোন করে রেস্টুরেন্টে নিয়ে মারধর করেন। মারধর করতে করতে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় স্টাফ কোয়ার্টারে। সেখানেও চালানো হয় নির্যাতন। একই সঙ্গে যৌন নিপীড়ন শুরু করেন বাচ্চু। একপর্যায়ে কৌশলে পালিয়ে যান আবদুল্লাহ। সশস্ত্র পাহারার কারণে তিনি ও খালেক পালাতে ব্যর্থ হন। পরে পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার হন।
শুক্রবার রাত থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন খালেক ও আবদুল্লাহ।
আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, শালিকের মালিক কৌশলগত কারণে উপজাতি তরুণীদের কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেন। এসব নারীকে স্টাফ কোয়ার্টার নামের বন্দিশালায় নিয়ে গিয়ে প্রায়ই চালানো হয় যৌন নিপীড়ন। একই সঙ্গে বিভিন্ন হোটেলে পাঠিয়ে যৌনবৃত্তি করতে চাপ প্রয়োগও করা হয়। মূলত তার এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করার জের ধরে তাকে ও আবদুল্লাহকে মারধর করা হয়েছে।
তিনি জানান, উপজাতী তরুণীকে প্রথমে নির্যাতন করা হয়েছে যৌনবৃত্তিতে বাধ্য করার জন্য। এতে অসুস্থ হয়ে সে ওষুধ কিনতে গেলে তাদের সঙ্গে দেখা হয়। এটা জেনে মালিক মনে করেছেন, সে কৌশলে পালিয়ে যাচ্ছে। আর তাকে সহযোগিতা করছে তারা দুজন। মূলত এর জের ধরেই তাদের নির্যাতন করা হয়েছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন কক্সবাজার হোটেল রেস্তোরাঁ শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা। এতে শালিকের কর্মচারীরাও অংশ নেন।
মানববন্ধনে দ্রুত বাচ্চুকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানে জিম্মি থাকা শ্রমিকদের নিরাপত্তা প্রদানের দাবি জানানো হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত শালিক রেস্টুরেন্টের মালিক নাছির উদ্দিন বাচ্চুর ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি তিনি।
বিষয়টি খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি নাইমুল হক চৌধুরী টুটুল।
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় আহতদের হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। শরীরে আঘাতের যে চিহ্ন দেখেছি তা অমানবিক। আহত ও অন্য কর্মচারীদের সঙ্গে সমিতির পক্ষে আলাপও করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।