
কক্সবাজার শহরের আবাসিক হোটেল সিলভার সাইনের সুইমিংপুলে স্কুল ছাত্র ফয়েজুল হক সাগরের (১৩) মৃত্যু নিয়ে নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এটি সুইমিংপুলে গোসল করতে নেমে মৃত্যু নাকি পরিকল্পিত হত্যা- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ইতিমধ্যে এটিকে পরিকল্পিত হত্যা দাবি করে বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে তার স্কুলের সহপাঠী এবং এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, স্কুল ছাত্র সাগরের মৃত্যু সুইমিংপুলে ডুবে হয়নি। তার মৃত্যুর পর মাথায় আঘাতের চিহ্ন ও রক্ত দেখা গেছে। এমনকি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে পুরো বিবস্ত্র অবস্থায়। একজন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র কখনো বিবস্ত্র হয়ে সুইমিংপুলে গোসল করতে নামে না। ফলে এটি পরিকল্পিত হত্যা বলে প্রমাণ মিলে।
বক্তারা অভিযোগ করেন, বিলাসবহুল এ হোটেলটিতে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। অথচ ঘটনার আগে ও পরে তিন ঘন্টা সিসি ক্যামেরা বন্ধ ছিল বলে হোটেল কৃর্তপক্ষ দাবি করছেন। একই সঙ্গে ঘটনার পর হোটেল কর্তৃপক্ষের পালিয়ে যাওয়া, টাকা দিয়ে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করার চেষ্টার খবরও পাওয়া গেছে। যা হোটেল কর্তৃপক্ষের কারও প্রতি পরিকল্পিতভাবে হত্যার ইঙ্গিত করে।
সমাবেশে এ ঘটনার তদন্তপূর্বক হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে উপস্থিত হয়ে কক্সবাজার সদর থানার ওসি আসলাম হোসেন বলেন, ঘটনার পর এটি ধামাচাপা দিতে একটি মহল নানাভাবে চেষ্টা করে। কিন্তু বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় মৃতদেহ ময়নাতদন্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এতে কক্সবাজার কেজি এন্ড মডেল হাই স্কুলের শিক্ষার্থী ছাড়াও স্থানীয় লোকজন অংশ নেন। বক্তব্য রাখেন নিহতের মা খালেদা বেগম, কক্সবাজার কেজি এন্ড মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রমজান আলী, হোটেল শ্রমিক লীগের সভাপতি রুহুল কাদের মানিক, পৌর টমটম মালিক সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন, হাজি ছিদ্দিকীয় স্কুলের সহকারী শিক্ষক নুরুল আলম সরকার, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সৌরভ দে, জেলা ছাত্রলীগ নেতা বিপ্লব মুন্না, শহর ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি উত্তম মারমা। স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদুল আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশ পরিচালনা করেন যুব নেতা এইচ এম নজরুল ইসলাম।
মানববন্ধন শেষে এলাকাবাসীর পক্ষে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়।
সোমবার বেলা ১২টার দিকে কক্সবাজার শহরের ঝাউতলা এলাকার বিজয় সরণীর হোটেল সিলভার সাইনের সুইমিংপুল থেকে নিহত ফয়েজুল হক সাগরের (১৩) মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
সাগর কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদণ্ডী ইউনিয়নের দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ার মো. বেদার মিয়ার ছেলে এবং কক্সবাজার কেজি এন্ড মডেল হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা এ বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী।
ঘটনার পর কক্সবাজার সদর থানার এসআই মো. আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, একা টিকেট কেটে হোটেলের সুইমিংপুলে গোসলে নামে এক স্কুল শিক্ষার্থী। এক পর্যায়ে সে পানিতে ডুবে যায়। তাকে সুইমিংপুলের পানিতে উপুড় হয়ে থাকতে দেখে হোটেলের লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এসআই রহিম জানান, প্রাথমিক অবস্থায় সুরতহাল রিপোর্টের পর নিহতের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ পরিষ্কার হবে। বিষয়টি পুলিশ গুরুত্বের সাথে নিয়ে নিজস্ব তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। এর মধ্যে নিহতের পরিবারের লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হোটেল সিলভার সাইনের ব্যবস্থাপক আলী আকবর ডিজেন বাংলানিউজকে জানান, সাগর একা টিকেট কেটে সুইমিংপুলে গোসলে নামে। পরে তাকে পানিতে উপুড় হয়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তবে সিসি ক্যামেরা বন্ধ থাকা, মাথায় রক্ত থাকার ব্যাপারে কোন উত্তর দিতে পারেননি তিনি। তিনি বলেন, সাগরের মৃগী রোগ ছিল। তাই মৃত্যু হয়েছে।
নিহতের পিতা মো. বেদার মিয়া বাংলানিউজকে জানান, সাগরের মৃগী রোগ ছিল না। এটি হোটেল কৃর্তপক্ষের বাড়াবাড়ি। ঘটনার পর থেকে তিনি অজ্ঞান হয়ে অসুস্থ রয়েছেন। চিকিৎসা শেষেই তিনি মামলা করবেন।সুত্র: বাংলানিউজ
পাঠকের মতামত