কক্সবাজারের রামুর চাকমারকুল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পূর্ব আহমেদ পাড়া নামে একটি গ্রামে রেহনা আক্তার স্বামী-সন্তানসহ ৭ সদস্য নিয়ে বসবাস করেন। সারাদিন সংসারের ঘানি টেনে ক্লান্ত শরীর নিয়ে আবার আধা কিলোমিটার দূরে ছুটতে হয় খাবার পানির জন্য। শুধু রেহনা নয়, এ গ্রামের পাঁচশতাধিক পরিবার খাবার পানির তীব্র সংকটে ভুগছেন।
সুপেয় পানির এ সংকট দূর করতে তাদের ত্রাতা হয়ে এসেছে ডেনমার্ক। ‘হাইসাওয়া’ নামে একটি সংস্থার মাধ্যমে প্রায় ৫৫ পরিবারের সুপেয় পানির সংকট দূর করা হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে আরও সাড়ে চারশ পরিবারের মাঝে সুপেয় পানির সংকট দূর করতে পরিকল্পনার কথাও জানায় সংস্থাটি।
রেহনা আক্তার বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পানি পাওয়া যায় না। আর বর্ষা মৌসমে পানি পাওয়া গেলেও ময়লার কারণে খাওয়া যায় না। আধা কিলোমিটার দূরের এক বাড়ির গভীর নলকূপ থেকে লাইন ধরে পানি আনতে হয়। আবার পর্যাপ্ত পানিও আনা সম্ভব হতো না। আলহামদুলিল্লাহ এখন আমরা সুপেয় পানির সংকট থেকে মুক্ত হয়েছি।
হাইসাওয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সুপেয় পানি সংকটের কথা জানানোর পর আমরা তাদের (স্থানীয়দের) কাছ থেকে জমি পাই। জমি পেয়ে ডেনমার্ক সরকার ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ৩৩৯ টাকা অনুদান দেয়। উপকারভোগীদের কাছ থেকে আরও ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩৭১ টাকাসহ মোট ১৫ লাখ ৪৩ হাজার ৭১০ টাকা ব্যয়ে সৌরবিদ্যুৎ চালিত ‘পাইপ ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ৮১০ ফুট গভীরতায় নির্মিত এ প্রকল্পে ৫০০০ লিটার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। মোট ১০০টি পরিবার প্রকল্প থেকে সুবিধা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে বর্তমানে ৫৫ পরিবারকে পাইপ কানেকশন দিয়ে পানি সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। চলতি বছরে ১৬ জুলাই ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টেইন ব্রিকস মলার প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
‘অর্থনীতি সচল করতে কাজ করছেন ড.ইউনূস’
চাকমার কুল ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য মরিয়ম বেগম বলেন, আহমদের পাড়া সুপেয় পানির তীব্র সংকটে রয়েছে। স্থানীয়দের বেশিরভাগ বাসিন্দা গরিব হওয়ায় গভীর নলকূপ বসাতে পারে না তারা। এ অবস্থায় হাইসাওয়ার মাধ্যমে ৫০০ পরিবারের মধ্যে ৫৫ পরিবারকে পানি সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে।
জমির মালিক ছৈয়দ আহমদ বলেন, নিরাপদ পানির কারণে প্রায় সময় পরিবারের অবালবৃদ্ধবণিতা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত থাকত। ডেনমার্ক সরকারের আর্থিক সহযোগিতার কথা জানার পর পানি সংকট দূর করতে আমি জমি দিয়েছি। এখন এলাকার লোকজন পানি সংকট থেকে মুক্ত হয়েছে।
হাইসাওয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল ওসমান বলেন, সংস্থাটি বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠিত একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। নিরাপদ পানি সরবরাহ, স্বাস্থ্যবিধি, দুর্বল স্যানিটেশন এবং প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করে এ সংস্থা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ২৭টি জেলায় এক হাজার ১০০টিরও বেশি ইউনিয়ন পরিষদে ৮৪ হাজারেরও বেশি পানির উৎস স্থাপন করা হয়েছে। ১৭ লাখেরও বেশি স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নির্মাণ ও সংস্কার করে দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া গ্রামীণ এলাকায় হাত ধোয়া, ঋতুকালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, ল্যাট্রিন হাইজিন, ফুড হাইজিন, নিরাপদ পানির পরিকল্পনা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কক্সবাজার সুপেয় পানির সংকট প্রবণ জেলা। এছাড়াও এখানে ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানির সংকট এবং পানিতে লবণাক্ততার অতিমাত্রাও দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ডেনমার্ক সরকারের আর্থিক সহায়তায় এ এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেয় হাইসাওয়া। বর্তমানে ডেনমার্কের অর্থায়নে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর এবং রামুতে একটি ওয়াশ পরিসেবা প্রদান এবং জলবায়ু অভিযোজন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কক্সবাজারে নিরাপদ পানির সংকট তীব্র হচ্ছে। এ সংকট দূর করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা অনেকে কাজ করছে। রামুতেও এ সংস্থাটি কাজ করছে।