উত্তাল সমুদ্রের গর্জন। ঢেউ আছড়ে পড়ার ঝুপঝাপ শব্দ। পাথরের সঙ্গে নোনা পানির ঘর্ষণে সৃষ্ট ফেনা। ভেজা বালুতে সূর্যের আলোর প্রতিবিম্ব ঝলসে দিচ্ছে চোখ। কক্সবাজারের পর্যটকহীন ইনানি সৈকতের পাশেই দেখা দিচ্ছে নতুন সৈকতের সম্ভাবনা।
ইনানি থেকে কিছুটা দক্ষিণে বালু ও পাথরের সামঞ্জস্যে সৃষ্টি হয়েছে অপরূপ এ সৈকতের। কোলাহলমুক্ত এ সৈকতকে স্থানীয়রা ডাকে ‘সি পার্ল’ নামে। একান্তে কিছুটা সময় কাটাতে যখন তখন এখানে আসতে পারেন সৌন্দর্যপিপাসুরা।
সৈকতে নামার আগে টং দোকানের এক কাপ চা মুহূর্তেই ক্লান্তি দূর করে দেয়। ভেজা বালুতে অভ্যর্থনা জানায় শীতল বাতাস। ভাটির সময়ে পানি নেমে যাওয়ায় উঁকি দেয় শত-সহস্র কালো পাথর। এই পাথরে বসে ছবি তোলেন পর্যটকরা। যা স্মৃতি হয়ে থেকে যায় আজীবন। বিকেলে সূর্যের তীর্যক আলো সৈকতের রূপকে করে তোলে আরো মোহনীয়।
প্রতিদিন নতুন নতুন পর্যটক ভিড় জমান কোলাহলমুক্ত এ সৈকতে। আসেন স্থানীয়রাও। কেউ ফুটবল খেলেন, কেউ দলবেঁধে ছবি তোলেন, আবার কেউ মোটরসাইকেল চালান। আবার দিন শেষে পর্যটকরা ফিরে যান হোটেলে। শুধু মনটা রেখে যান সমুদ্র সৈকতের পাথরের ভাঁজে। মনের ভেতর থাকে বারবার ফিরে আসার এক টুকরো আকাঙ্ক্ষা।
ঢাকা থেকে আসা মিরাজুল ইসলাম জানান, ঘোরাঘুরি আমার নেশা। আমি বছরে ৬-৭টি বড় ট্যুর করি। কক্সবাজার-ইনানিতে আগেও এসেছি। তবে ইনানির পাশেই এমন নজরকাড়া সৈকত আছে জানতাম না। হয়তো আমার মতো অনেকেই জানে না। এখানে আসার পর আর যেতে ইচ্ছা করে না। সন্ধ্যায় এই সৈকতের মতো আর কোথাও এত আকর্ষণ নেই।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ঘরবন্দী থাকতে থাকতে মনটা বিষিয়ে উঠেছিল। তাই বন্ধুদের না জানিয়ে একাই চলে এসেছি মুক্ত বাতাসের খোঁজে। এখানে এসে মনে হলো প্রকৃতি আমার জন্যই অপরূপ সাজে সেজে বসে আছে। পাথরে বসে পা ভিজিয়ে উদাস মনে আকাশ দেখায় অন্যরকম একটা তৃপ্তি আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল রহমান বলেন, আমার বাড়ি এখান থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। বিকেলে মনোরম একটু সময় কাটাতে এখানে আসি। টেকনাফ থেকেও আমার বন্ধুরা এখানে আসে। শেষ বিকেলে এখানে না এলে মনে হয় দিনটা যেন পূর্ণ হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া আমাদের এখানে আসা কখনো বন্ধ থাকেনি।
যেভাবে আসবেন
কক্সবাজারের ডলফিন মোড় থেকে দক্ষিণে মেরিন ড্রাইভ রোড হয়ে ২১ কিলোমিটার দূরে ইনানি সৈকত। সেখান থেকে একই সড়ক দিয়ে আরো দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে গেলেই হোটেল রয়েল টিউলিপ। এ হোটেলের সামনেই পাবেন ‘সি পার্ল’ নামে পরিচিত নতুন এ সমুদ্র সৈকত। এখানে আসার জন্য সবসময়ই পাবেন টমটম, সিএনজি, ছাদ খোলা চাঁদের গাড়ি। চলার পথে হাতের বামে পাবেন সুউচ্চ পাহাড় আর ডানে সমুদ্র। এমন পরিবেশে আপনার গলা দিয়ে আনমনে বেরিয়ে আসবে ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা...।’ ডেইলি-বাংলাদেশ