সম্প্রতি গণমাধ্যমে কক্সবাজারে এইচআইভি আক্রান্তদের নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর এ নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। স্পা সেন্টারগুলোকে কেন্দ্র করে এইচআইভি আক্রান্ত বেশি হচ্ছে এমন খবরও নজরে এসেছে পুলিশের। তাই স্পার নামে অনৈতিক কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে টুরিস্ট পুলিশ।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান বলেছেন, সম্প্রতি বেশ কিছু পত্রিকায় এসেছে কক্সবাজারে ৭১০ জন এইচআইভি রোগী শনাক্ত হয়েছে যার মধ্যে রোহিঙ্গা রয়েছে ৬১২ জন। এটা পর্যটনের জন্য হুমকি। স্পা সেন্টারগুলো এইডস ছড়ানোর অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে।
তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, স্পা সেন্টারের নামে পতিতাবৃত্তি করা বা অবৈধ কার্যক্রম কোনোভাবেই আমরা বরদাশত করব না। এখন থেকে প্রতিটি স্পা সেন্টারে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে এইচআইভি পরীক্ষা করিয়ে তাদের নিয়োগ দিতে হবে।
আরও পড়ুন>>> কক্সবাজার “এঞ্জেল টাচ থাই স্পা”তে অভিযান চালিয়ে ১৫ নারী-পুরুষ গ্রেফতার
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের উদ্যোগে তাদের কনফারেন্স রুমে বুধবার ‘পর্যটন নগরী কক্সবাজারের স্পা সেন্টারে কর্মরত সদস্যদের সঙ্গে এইডস সচেতনতা’ শীর্ষক একটি কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে কক্সবাজারে অবস্থিত ১৬টি স্পা সেন্টারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান ও নারী কল্যান কক্সবাজার জেলার প্রধান শাহেদা পারভীন উপস্থিত ছিলেন।
নারী কল্যাণ সংস্থার প্রধান শাহেদা পারভীন বলেন, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য একটা কমিটি করা যেতে পারে। যারা তাদের কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা প্রদান করবে।
সি পার্ল রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের কর্মকর্তা জিম বলেন, কোনো থেরাপি নিলে কী হয় তা কাস্টমারকে আগেই বুঝিয়ে দেওয়া এবং কাস্টমারদের মাইন্ড সেট আপে চেঞ্জ আনা দরকার।
সায়মন বিচ রিসোর্টের কর্মকর্তা এসকে মৌদুদুর রহমান বলেন, গেস্টের বা ক্লায়েন্টের আইডি নিতে হবে।
হংকং স্পা এর স্বত্বাধিকারী রূপা পাশা বলেন, স্পা করানোর সময় রুমের ভেতর থেকে দরজা লক করা যাবে না। যেন কর্তৃপক্ষ যেকোনো সময় প্রবেশ করে মনিটর করতে পারে।
ওশেন প্যারাডাইসের প্রতিনিধি শারমিন আক্তার বলেন, ক্লায়েন্টকে আগে থেকেই সচেতন করতে হবে যে এখানে থেরাপি ছাড়া অন্য কিছু হবে না।
সুইডিশ থাই স্পা সেন্টারের প্রতিনিধি রিয়া বলেন, স্পা সেন্টারের সেবা প্রদানের সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে।
গোল্ড থাই স্পা সেন্টারের প্রতিনিধি জানান, কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা কিনা সেটা যাচাই করা দরকার।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম জানান, এটি একটি শিল্প, এটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে আপনাদের সবাইকে সততার সাথে প্রকৃত স্পা যাকে বলে সেটা দিতে হবে। আইনী কাঠামোর মধ্যে কিভাবে আনা যায় সে ব্যাপারে আমরা সহায়তা করব।
স্পা সেন্টার সঠিকভাবে চললে এইডস হবার কোনো চান্স থাকার কথা নয় বলেও মনে করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এসময় জানানো হয়, কক্সবাজার সদর হাসপাতালে বিনামূল্যে এইচআইভি পরীক্ষা করা যায়। প্রত্যেক কর্মীর বায়োডাটা ও মেডিকেল রিপোর্ট ট্যুরিস্ট পুলিশের কাছে জমা দিতে হবে। প্রত্যেক কর্মীর নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ দিতে হবে।
এছাড়া সভায় সিদ্ধান্ত হয় প্রতি ৩ মাস পরপর কর্মীদের এইচআইভি টেস্ট করাতে হবে। প্রত্যেক স্পা সেন্টারের ফ্রন্ট ডেস্কে এইচআইভি রোগ সম্পর্কে লিফলেট/ফেস্টুন রাখতে হবে। স্পা সম্পর্কিত সেবা ও তার মূল্যতালিকা দৃশ্যমান স্থানে টাঙ্গিয়ে রাখতে হবে। ট্যুরিজম বিকাশের জন্য সবাইকে সচেতন হয়ে নিজ নিজ ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।
এছাড়াও আগামী ১০ তারিখের মধ্যে সকল স্পা সেন্টারের কর্মীদের বিস্তারিত তথ্য ট্যুরিস্ট পুলিশ অফিসে জমা দিতে হবে। ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন নিয়মিত তদারকি করবে৷ যেকোনো অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাঠকের মতামত