সপ্তাহব্যাপি পর্যটন মেলা ও বীচ কার্নিভাল উপলক্ষে কক্সবাজারে ৬০ থেকে ১৫ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন হোটেল, রেস্তোঁরা, পরিবহনখাতসহ সৈকতপাড়ের বিচবাইক, কিটকট ও জেডস্কি চালকরা। কিন্তু ঘোষণা দিয়েও অনেকে সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই হোটেল ও রেস্তোঁরায় ছাড়ের ঘোষণা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে প্রশাসন।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ এর নেতৃত্বে একটি টিম মাঠে নামে। এসময় সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শুভাশীষ চাকমা, সদর ও ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: জাকারিয়া, জেলা পুলিশ ও ৩৯ আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা অভিযানে সঙ্গে ছিলেন।
অভিযান নির্দেশনা অমান্যকারিরা হোটেল-রেস্তোঁরাকে সতর্ক করার পাশাপাশি নোংরা পরিবেশে খাবার তৈরি করায় একটি রেস্তোঁরাকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত।
একদিকে টানা ছুটি, অন্যদিকে সৈকত শহর কক্সবাজারে চলছে সপ্তাহব্যাপি পর্যটন মেলা ও বীচ কার্নিভাল। এই উৎসব উপলক্ষে আগেই হোটেল, রেস্তোঁরা থেকে শুরু করে পরিবহন খাতেও ঘোষণা দেয় ৬০ থেকে ১৫ শতাংশ ছাড়ের।
এরই মধ্যে সৈকত শহর কক্সবাজারে অবস্থান করছে লাখো পর্যটক। যারা সমুদ্রসৈকতসহ মেতে রয়েছে পর্যটন মেলা ও বীচ কার্নিভালে। পর্যটকদের অভিযোগ, অনেক হোটেল-রেস্তোঁরায় ছাড় দেয়া হচ্ছে না।
সোয়েব কবির নামের এক পর্যটক বলেন, কলাতলী জোনের বাবুর্চি রেস্তোঁরায় খাবার খেয়েছি। কিন্তু কোন ধরনের ছাড় দেয়নি।
সুমাইয়া আকতার নামের এক নারী পর্যটক বলেন, গত দুদিন ধরে কক্সবাজারে অবস্থান করছি। হোটেল কিংবা রেস্তোঁরায় কোন ধরণের ছাড় দিতে দেখিনি।
তবে এব্যাপারে হোটেল-রেস্তোঁরার কর্তৃপক্ষ দিচ্ছেন নানা অজুহাত। জুঁই রেস্তোরা কর্তৃপক্ষ বলছে, আমরা ছাড়ের বিষয়ে জানিও না। তাই আগের নিয়মে খাবারের মূল্য নিচ্ছি।
কক্স ভেকেশন হোটেলের ম্যানেজার হারুনুর রশিদ বলেন, আমরা ৬২ শতাংশ ছাড় দিচ্ছি। তবে রুমের ক্যাটাগরি ভাগ রয়েছে। তাই একেক ক্যাটাগরির রুম একেক মূল্যে ভাড়া দেয়া হচ্ছে।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে হোটেল-রেস্তোঁরা ছাড়ের ঘোষণা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা তদারকিতে মাঠে নামে প্রশাসন। প্রশাসনের টিমটি শহরের ঝাউতলাস্থ পউষী, ঝাউবন, রান্নাঘর এবং কলাতলী হোটেল মোটেল জোনে নিরিবিলি অর্কিড, জুঁই রেস্তোঁরা, কক্স-ভেকেশন অ্যাপার্টমেন্টসহ কয়েকটি রেস্তোঁরায় যায়। এসময় প্রশাসনের টিমটি পর্যটকদের কথা শুনেন এবং হোটেল ও রেস্তোঁরা কর্তৃপক্ষকে সর্তক করে দেন।
এই সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতি ও রেস্তোঁরা মালিক সমিতির নেতারা। তাদের দাবি, যারা ছাড় দিচ্ছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক।
রেস্তোঁরা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, আমাদের সমিতির আওতাভুক্ত ১১০টি রেস্তোঁরা রয়েছে। তারা সবাই ১৫ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। তবে সমিতির আওতার বাইরে যারা রয়েছে তারা কিন্তু ছাড় দিচ্ছে না। তাই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনকে দাবি জানাচ্ছি।
আর প্রশাসন জানিয়েছে, হোটেল-রেস্তোঁরাগুলোকে তদারকির পাশাপাশি পর্যটকরা অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শুভাশীষ চাকমা বলেন, নোংরা পরিবেশে খাবার তৈরি করায় একটি রেস্তোঁরাকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। হোটেল রেস্তোরায় নিয়মিত অভিযান চলবে।
আর কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাবির্ক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, সপ্তাহব্যাপি পর্যটন মেলা ও বীচ কার্নিভালে প্রত্যেকটি হোটেল ও রেস্তোঁরা বিশেষ ছাড় ঘোষণা করেছে। এখন মূলত দেখতে এসেছি, ছাড়ের ঘোষণাটি বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা বা আগত পর্যটকরা প্রতারিত হচ্ছে কিনা। কোন পর্যটক যদি প্রতারিত হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে এসব হোটেল ও রেস্তোঁরার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।