কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, পেকুয়া ও চকরিয়া উপজেলার ৩৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ৪২ পয়েন্টে ভেঙ্গে যাওয়ায় বর্তমানে জোয়ার-ভাটা চলছে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে এই বেড়িবাঁধ ঘুর্ণিঝড় রোয়ানু’র তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। দিনদিন নতুন নতুন এলাকা লোনা পানিতে প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়ছে এখানকার হাজার হাজার পরিবার। বেড়েই চলেছে জনদূর্ভোগ।
তবে,পানি উন্নয়ন বোর্ডে কক্সবাজার নির্বাহী প্রকৌশলীর দাবী, ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য ১৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, পাউবোর অধীনে চকরিয়া উপজেলার ৬৫এ-৩ পোল্ডারের অধীন বরইতলী ইউনিয়নের পহরচাঁদা, ৬৫এ-১ পোল্ডারের চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সওদাগরঘোনা, ৬৫ পোল্ডারের অধীন কোণাখালী ইউনিয়নের মরংঘোনা ও বিএমচর ইউনিয়নে ৬টি পয়েন্টে ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। একই ভাবে পেকুয়া উপজেলার মগনামা, উজানটিয়া ইউনিয়নে অন্তত ৬টি ও দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় সাতটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। তারমধ্যে কুতুবদিয়া উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁেধর অংশ দিয়ে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ার কারনে প্রতিদিন এলাকার শত শত বসতবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে লোনা পানিতে।
অপরদিকে, বিধবস্ত বেড়িবাঁধের জোয়ারের পানিতে গোসল কতে গিয়ে ইতোমধ্যে কুতুবদিয়া উপজেলায় তিন শিশুর করুণ মুত্যু ঘটেছে।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুত্র জানিয়েছেন, জেলার অন্যসব উপজেলার সাথে পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ এসব বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য নতুন টেন্ডারে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। সহসাই এসব এলাকায় মেরামত কাজ শুরু করা হবে।
চকরিয়া উপজেলার কোণাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, রোয়ানু তান্ডবে ইউনিয়নের মরংঘোনা এলাকার অন্তত তিন’শ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। ভেঙ্গে যাওয়া অংশটি বর্তমানে শাখা খালে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সকালে ও রাতে দুই দফা জোয়ারের পানি বেড়িবাঁেধর ভাঙ্গা অংশ দিয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এতে এলাকার শত শত পরিবার চরম দুর্ভোগের রয়েছে।
তিনি বলেন, জোয়ারের পানিতে ইউনিয়ন পরিষদের মাঠ প্লাবিত হচ্ছে। তলদেশের মাটি ক্ষয় হয়ে যাওয়ার কারনে ইউপি ভবন বর্তমানে ঝুঁিকর মুখে পড়েছে। ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁেধর অংশ সমুহ দ্রুততম সময়ে মেরামত করা না গেলে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌছবে।
বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার বলেন, ইউনিয়নের একটি বিশাল অংশের জনগনের বসবাস মাতামুহুরী নদীর তীর এলাকায়। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে মাতামুহুরী নদীর ঢলের কারনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ গুলো ভেঙ্গে যায়। গত জুন মাসে কয়েকটি অংশ বেড়িবাঁেধর মেরামত কাজ শেষ করা হলেও ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে ফের কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁেধর ফাটল সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায় ভেঙ্গে যাওয়া অংশের বেড়িবাঁধ মেরামতে গতমাসে টেন্ডার হলেও এখনো কাজই শুরু করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্টান। এতে করে বেড়িবাঁেধর ক্ষতিগ্রস্থ অংশ দিয়ে প্রতিদিন মাতামুহুরী নদীর জোয়ারের পানি ঢুকে গ্রামে গ্রামে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। গত একমাস ধরে এলাকার শত শত পরিবার কার্যত পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সবিবুর রহমান বলেন, রোয়ানুর তান্ডবে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার এলাকার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ক্ষতিগ্রস্থ ৪২টি পয়েন্টের বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।